×

সারাদেশ

রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৪৯ পিএম

রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট
রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট
রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট
রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট
রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট
রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট
রাজশাহীতে শীত বাড়লেও জমেনি লেপ-তোশকের মার্কেট

ছবি: ভোরের কাগজ

শীতের প্রকোপেও রাজশাহীতে জমে ওঠেনি লেপ-তোশক ক্রয়বিক্রয়। দিনভর দোকান খোলা থাকলেও দুপুর পর্যন্ত প্রায় ক্রেতাশূণ্য নগরীর তুলাপট্টি। প্রভাব পড়েছে শপিংমলেও। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির ফলে শীতের পোশাক কিনতে ফুটপাতে সমাগম করছেন মধ্যবিত্তরা। এরইমধ্যে নগরীতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির প্রভাবে তাপমাত্রা কমায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ ছিল ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। জেলায় গত ১৭ ডিসেম্বর এ মৌসূমের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত সপ্তাহে প্রায় ৫-৬ দিন বয়ে যায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আর দুমাস পর গত মঙ্গলবার ভোররাতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। এদিন দুদফায় দশমিক আট মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টির প্রভাবে শীতের তীব্রতা বাড়লেও জমজমাট হয়ে ওঠেনি শীতের পোশাকের বাজার।

বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, সোনাদিঘির মোড়, গণকপাড়া, রানিবাজার, নিউ মার্কেট, কোর্ট বাজার ও ভদ্রা মোড়ে ফুটপাতে কম্বল, চাদর, জ্যাকেট ও টুপি-মাফলার নিয়ে বসে রয়েছেন বিক্রেতারা। দুপুর পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে বিকেলে ক্রেতাসমাগম বৃদ্ধি পায়। তাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত।

ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে তারা উন্নতমানের শীতের পোশাক কিনতে পারছেন না। সন্তানের জন্য বাধ্য হয়ে কিনতে এসেছেন ফুটপাতে। সোনাদিঘির মোড়ে সন্তানের জন্য জামা ও টুপি কিনতে আসেন মোছা. অনু বেগম। তার নিজেরই একটি বুটিক শপ রয়েছে। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে। সন্তানকে বাসায় রেখে বাজারে এসে বাধ্য হয়ে ফুটপাতের দোকান থেকে পোশাক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অনু বেগম বলেন, আমার শপেও ক্রেতাদের উপস্থিতি নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কষাঘাতে পেটের খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে শপিংমল থেকে পোশাক ক্রয়ের বিলাসিতার প্রশ্নই আসে না। আব্দুল হাকিম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এ দোকান থেকে ওই দোকান ঘুরে ঘুরে পছন্দমতো পোশাক কিনতে পারছি না। পছন্দ হলেও দামে মিলছে না।

বিক্রেতারাও বলছেন, গত মৌসূমের চেয়ে এ বছর বেচাকেনা অনেক কম। মানুষ আর্থিক সংকটে থাকায় এমন প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন তারা। জেলার সর্ববৃহৎ বিক্রয়কেন্দ্র আরডিএ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে শাল-চাদর সাজিয়ে রেখে বিষন্ন মনে বসেছিলেন শামসুল হক নামে ষাটোর্ধ্ব এক বিক্রেতা। জেলার চারঘাট থেকে প্রতিদিন নগরীতে এসে শীতের পোশাক বিক্রি করেন তিনি।

শামসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, ২৫০ টাকার চাদর ১৭০ টাকায় বিক্রি করতে চাচ্ছি, তবু কেউ নিচ্ছে না। গত বছর এ রকম সময়ে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হত। অথচ এ বছর দৈনিক বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩-৫ হাজার টাকার। এরশাদ আলী নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বাজারে কাস্টমার কম। যারা আসছে, তারাও দেখে দেখে চলে যাচ্ছে। কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

রাজশাহীতে লেপ-তোষকের প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র গণকপাড়া মোড়। এখানে কর্মচারিরা ব্যস্ত সময় কাটালেও মালিকরা চিন্তিত। তুলার দোকানগুলোতে ছিল না ক্রেতাদের দৃশ্যমান সমাগম। বুধবার সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় শিমুল গাছের তুলা। প্রতিকেজি ফাইবার তুলার দাম ২০০ টাকা। কার্পাস ১২০ টাকা, ৪০ টাকা ও জিন্স তুলা সর্বনিম্ন ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। রকমভেদে লেপ-তোশকের দামেও ছিল ভিন্নতা। তোশক ৪০০-৬০০ টাকা ও লেপের দাম ১৪০০-১৬০০ টাকা বিক্রি করেন দোকানিরা।

নগরীর গণকপাড়া তুলাপট্টি এলাকার লেপ-তোশকের কারিগর মো. হাবিব ভোরের কাগজকে বলেন, অন্যান্য বছর শীত মৌসূমে দিনে কমপক্ষে ৪ হাজার টাকার লেপ-তোশক অর্ডার হত। সবকিছু বাদ দিয়ে প্রতিমাসে লাভ হত ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এ বছর অনেক কম। গত এক মাসে মাত্র ২০ হাজার টাকা ইনকাম হয়েছে। দুজন কারিগরের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে লাভ হয়েছে একেবারেই সীমিত। মো. মাহবুব নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কাজকামে বেশ মন্দা যাচ্ছে। এ রকম সময়ে ব্যবসা জমজমাট থাকে। কিন্তু জিনিসপাতির দাম বেশি হওয়ার ফলে এখনো পর্যন্ত লেপের অর্ডার খুবই কম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App