×

মুক্তচিন্তা

মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:১৪ এএম

মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়নের আরো একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ১৫৮ বছর আগে চালু হওয়া লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম এই রেল ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়। এর আরেক নাম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড/পাতাল রেল ব্যবস্থা পদ্ধতির নাম মেট্রোরেল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রযুক্তি ইউরোপের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পাতাল রেল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু হয় উড়াল রেল ব্যবস্থা। বাংলাদেশ আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে প্রযুক্তিগতভাবে এবং আধুনিক যানবহন চলাচল ব্যবস্থার দিক থেকে একটা সময় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও পদ্মা সেতু ও ঢাকা মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্ব থেকে পিছিয়ে রয়েছে তা বলার সুযোগ রইল না। জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় যার অধীনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তথা মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে। ২০১৬ সালে প্রণীত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা অনুসারে ঢাকায় নির্মিতব্য মেট্রোরেলের লাইনের সংখ্যা ৩টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ৬-কে নির্বাচন করা হয়। ঢাকাবাসীকে যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গতকাল চালু হলো মেট্রোরেল। এটি বর্তমান সরকারের আরেকটি মেগা প্রকল্প। ২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালুর লক্ষ্যে এরই মধ্যে মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত সব স্টেশনের মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ করেছে। বহুল কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ থেকে উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুুক্ত করা হয়েছে। মেট্রোরেল সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেক কমাবে বিশেষ করে যারা টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, উত্তরা থেকে মিরপুর, আগারগাঁও এসে অফিস করেন এবং মিরপুর, আগারগাঁও থেকে ওইসব এলাকায় গিয়ে অফিস করেন একই সঙ্গে যে কোনো জরুরি কাজে সময় বাঁচবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। ঢাকা শহরে যানজটের মূল কারণ দুটি- অতিরিক্ত জনসংখ্যা আর সড়কপথ নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত ঢাকার লোকসংখ্যা বাড়ছেই। সব সুযোগ সুবিধা ঢাকাতেই থাকছে, অন্তত বিভাগীয় শহরগুলো পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে না। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি সড়কপথ নির্ভর এবং বিকল্প রাস্তার সংখ্যা বলতে গেলে একেবারেই নেই। অন্যদিকে মেট্রোরেলের ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মেট্রোরেলের জন্য প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৪ টাকা ভাড়ার নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ী) থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার/উত্তরা সাউথ স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। প্রথম স্টেশন উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা। শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা। এই ভাড়ায় শ্রমজীবী মানুষ, পোশাকশিল্প শ্রমিক, ভাসমান শ্রমিক, নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তের দৈনিক উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। মেট্রোরেল শুধু মধ্যবিত্ত এবং অভিজাত লোকদের পরিবহন হিসেবে গড়ে উঠলে ঢাকার যানজট উল্লেখযোগ্য হারে কমবে না। একজন যাত্রী মেট্রোরেলে ওঠার পর সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে দুই স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবেন। পরবর্তী প্রতি স্টেশনে যেতে বাড়তি ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে। উত্তরার তিনটি স্টেশন বাদ দিলে অন্য সব স্টেশনের প্রতিটির মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটার বা তার কম। ফলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে প্রায় ১০ টাকা। এক সূত্র জানা যায়, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মোটাদাগে তিনটি বড় ব্যয়ের খাত বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ খরচ, জনবলের বেতন-ভাতা এবং কোচ ও অন্যান্য স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন শহরে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন আছে। এসব মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ৫ রুপি থেকে সর্বোচ্চ ৬০ রুপি পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে মেট্রোরেলের ভাড়া কিছুটা বেশি যা নিয়েও রয়েছে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন। বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে ডিএমটিসিএল নিজেই পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে টিকেট ও স্টেশনে ওঠানামার ব্যবস্থার খুবই মিল রয়েছে। মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা যাবে। মেট্রোরেলে দুধরনের টিকেটের ব্যবস্থা থাকবে অনেকটা স্মার্টকার্ডের মতো। একটা হচ্ছে স্থায়ী কার্ড। অর্থাৎ এ কার্ড রিচার্জ করে পুরো বছর বা মাসে যাতায়াত করা যাবে। এ কার্ডে ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে। অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে কার্ড রিচার্জ করা যাবে। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। মেট্রোরেলে ১৮০০ জন করে প্রায় ৫৬টা ট্রেন সেবা দেয়ার কথা রয়েছে, সব মিলিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জিত হলে তা অবশ্যই যানজট কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে জরুরি কাজে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখবে মেট্রোরেল।

মো. রাসেল হোসাইন : মিরপুর-১০, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App