×

সম্পাদকীয়

মেট্রোরেলের যুগে বাংলাদেশ : নাগরিক জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:০৯ এএম

মেট্রোরেলের যুগে বাংলাদেশ : নাগরিক জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে

বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে আধুনিক গণপরিবহন মেট্রো যুগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেছেন। আধুনিক নগরজীবনে মেট্রোরেল সৃষ্টি করেছে গতির নতুন যুগ। খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। এটা আমাদের জন্য গৌরবের আনন্দের। রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে জনগণের অভিযোগের শেষ নেই। দুর্ভোগ ঢাকা মহানগরীর মানুষের নিত্যসঙ্গী। আশা করা হচ্ছে, ঢাকা মহানগরীর জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আজ থেকে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে যাত্রী নিয়ে চলবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেন। পরবর্তী ধাপে এটি আগারগাঁও থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলাচল করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাড়ে ৩ মিনিট অন্তর ট্রেন চলবে। তবে শুরুর দিকে ১০ মিনিট অন্তর চলবে। দিয়াবাড়ী এবং আগারগাঁও স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ১০ মিনিট করে অপেক্ষা করবে যাত্রী ওঠানামার সুবিধার্থে। আগামী মার্চ বা এপ্রিলে মেট্রোরেল পুরোপুরি বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যাওয়ার পর স্টেশনে মাত্র ৩০ সেকেন্ড যাত্রাবিরতি করবে। ইতোমধ্যে বহুল কাক্সিক্ষত মেট্রোরেলে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। মেট্রোরেলের ভাড়ার বিষয়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব স্বল্প দূরত্বের জন্য সুবিধাজনক না হলেও বেশি দূরত্বের যাত্রীদের জন্য বেশ সাশ্রয়ী। ২ কোটির বেশি মানুষের শহর ঢাকা। কিন্তু সেই তুলনায় নাগরিক সুবিধা বিশেষত স্বাচ্ছন্দ্যে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্যত্র ভ্রমণের সুবিধা এখনো খুবই সীমিত। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ নেই এই মেগা সিটির নাগরিকদের। নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনা এবং সময় বাঁচাতে সরকার রাজধানী ঢাকাকে মেট্রোরেলের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি স্কয়ার মিটারে ৮ জনের হিসাবে ব্যস্ততম সময়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে- উত্তরা, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়। বলা হচ্ছে, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকার বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহনই হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ফলে মেট্রোরেল স্থাপিত হলে রাস্তায় যাত্রী এবং পরিবহন উভয়ের ওপরই চাপ কমবে। এর ফলে সড়কপথে যানবাহন চলাচল কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। মেট্রোরেলে বিভিন্ন রুটে সাশ্রয়ী খরচে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হলে প্রাইভেটকার এবং অন্যান্য যানবাহনে করে চলাচল করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। বর্তমানে মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশ জোগান দিচ্ছে ঢাকা। যানজট না থাকলে এটা আরো বাড়তে পারত। যানজটের কারণে শ্রমঘণ্টা ও উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ঢাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। যানজটের কারণে দেশের প্রধান প্রধান শহরে নগরায়ণের অনেক অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। মেট্রোরেলে রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আনবে আমূল পরিবর্তন। মানুষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App