×

মুক্তচিন্তা

ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:১২ এএম

ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হোক

আধুনিক বা উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের কৃষি। বর্তমান সময়েও কৃষির সঙ্গে অনেক তরুণ-যুবক জড়িত হচ্ছে ভাগ্যের চাকা বদলানোর আশায় এবং অনেকে শখ করে শুরু করলেও পরে এই পেশাকে জীবিকার্জনের একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমানে অল্প সময়ে লাভবান হওয়ার জন্য কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হরেক রকমের রাসায়নিক সার। কৃষি ফসল যাতে বিনষ্ট না হয় বা পোকামাকড়ে যাতে আক্রমণ না করে তার জন্য ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। ফলে কৃষক ফসল বাঁচানোর জন্য বা পোকামাকড় দমন করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত হারে কীটনাশক ব্যবহার করছে, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে ফসলের উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে। কীটনাশকের কারণে বহু বিল, হাওর মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বহু প্রজাতির পাখি অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফসল রক্ষাকারী পোকামাকড় ধ্বংসের কারণে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষিজমি বিশেষ করে ধানের জমিতে একসময় শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছ দেখা যেত। এখন এগুলো একেবারেই অনুপস্থিত। প্রকৃতির লাঙল বলা হয় যে কেঁচোকে তাও এখন আর কৃষি জমিতে পাওয়া যায় না। ফসলের জমিতে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য পাখ-পাখালির বিচরণ এখন কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ফসলের মাঠে ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত ভ্রমর আর মৌমাছির গুঞ্জনও কমে গেছে নানারকম বিষাক্ততায়। এছাড়াও কৃষি পরিবেশে বিদ্যমান নানারকম সরীসৃপ আজ বিলুপ্তপ্রায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিমাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কৃষিজ ও প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কীটনাশক মানবদেহে প্রবেশের কারণে মানুষের হার্ট, কিডনি, লিভার, স্নায়ু, ত্বক আক্রান্ত হচ্ছে। নানাবিধ ফলমূলে রাসায়নিক পাউডার দিয়ে কাঁচা ফল পাকানো হচ্ছে, এমনকি টমেটো পর্যন্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় টসটসে করে পাকানো হচ্ছে। শুঁটকি মাছে ডিডিটি পাউডার ব্যবহারের কথা শোনা যায়। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে জমির উর্বরতা, পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক। মাত্রাতিরিক্ত এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির গুণাগুণ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা। আবার জমিতে ব্যবহৃত এসব কীটনাশক বন্যার পানিতে মিশে চলে যায় খাল-বিল-জলাশয় বা বিভিন্ন নদ-নদীর পানিতে। ফলে এসব পানি ক্রমেই বিষাক্ত বা দূষিত হচ্ছে। তাই সব ধরনের কীটনাশকের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রিতে তদারকি বাড়াতে হবে এবং যত্রতত্র এসব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। কৃষককে বোঝাতে হবে মানব শরীরের জন্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য এসব কীটনাশকের ক্ষতিকর দিকগুলো। এসব কীটনাশক ছাড়াও যে সুন্দর ও পুষ্টিকর ফসল উৎপাদন সম্ভব তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে এবং কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষকে বোঝাতে হবে।

গাজী আরিফ মান্নান : আনন্দপুর, ফুলগাজী, ফেনী [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App