×

জাতীয়

স্বপ্নের মেট্রোরেল যুগে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১৮ এএম

স্বপ্নের মেট্রোরেল যুগে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

উন্নয়নের আরো একটি মাইলফলকে বাংলাদেশ ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে শতভাগ যাত্রী পরিবহন
স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন আজ। পদ্মা সেতুর পর অগ্রগতি ও উন্নয়নের আরো একটি মাইলফলকে পৌঁছল বাংলাদেশ। দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই হবেন মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী। উদ্বোধন ঘোষণার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ৫০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক নোট মুদ্রণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই স্মারক নোটটি আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করবেন। এরই মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের রেলট্র্যাকে ট্রেনের সব ধরনের টেস্টিং ও কমিশনিং শেষে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, মেট্রোরেলের উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের জন্য ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবসের দিনটি সামনে রেখেই সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় প্রস্তুতিতে এখন আর কোথাও কোনো সমস্যা নেই। উদ্বোধনের পরদিন থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির সঙ্গে যাত্রীদের আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করে তোলা ও সচেতন করার জন্য সময় নেয়া হবে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে মেট্রোরেলে শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা হবে। তিনি আরো বলেন, আগামী বছরের এই সময়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের মেট্রোরেলের কাজ শেষে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই অংশের কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। এখন সিডিউল অনুযায়ী আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল সরকারের একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগা প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। উদ্বোধন ঘিরে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সাজানো হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২ হাজার দেশি ও বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উদ্বোধন ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকেট কেটে মেট্রোরেলে চড়বেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা মেট্রোরেলে ওঠার কারণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ কারণে প্রথমদিন সাধারণ যাত্রীরা মেট্রোরেলে উঠতে পারবেন না। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জাইকা) এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর আজ প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন। আজ মেট্রোরেলের উদ্বোধন হলেও এখনই পুরোদমে যাত্রী পরিবহন করা হবে না। মেট্রোরেলের টিকেট কাটা, দরজা খোলা ও বন্ধ হওয়া, স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হওয়াসহ ব্যবহারের জন্য প্রায় সব প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলবে। তাই মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষের সচেতনতার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। যাত্রীদের সব কিছুতে অভ্যস্ত করার জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। কিছুদিন আগে মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ২০০ মানুষকে টিকেট কিনতে ও র‌্যাপিড পাস দিয়ে স্টেশনে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন দেখা গেছে মাত্র দুই থেকে তিনজন মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য টিকেট কেনাসহ পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছে। অন্যরা কেউ মেট্রোরেল ব্যবহারে অভ্যস্ত না। এ কারণে যাত্রীদের সচেতনতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। মেট্রোরেলের ১২টি কোচ চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে শুরুতে ১০টি ট্রেন চলাচল করবে। এখন দুটি ট্রেন ব্যাকআপ হিসেবে ডিপোতে রাখা হবে। রেলের আরো কোচ জাপান থেকে দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল করবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ট্রেন চলবে, কোনো স্টেশনে থামবে না। ১০ মিনিট পর পর একটি ট্রেন ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন দিনে একবার ব্যবহারের টিকেট ও র‌্যাপিড পাস দুটিই ২৯ ডিসেম্বর (আগামীকাল) থেকে পাওয়া যাবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে স্টেশন থেকে র‌্যাপিড পাস নেয়া যাবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, যানজট নিরসনে মেট্রোরেল বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। তবে পুরো শহরের যানজট কমানো সম্ভব হবে না। মেট্রোরেলের পরিপূর্ণ একটি নেটওয়ার্ক যখন হবে তখন মূল্যায়ন করা যাবে। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাছাকাছি বসবাসরত বাসিন্দারা অবশ্যই যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ও নির্ভরতা পাবেন। কম সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন। মেট্রোরেল পিক আওয়ারে চাহিদা অনুযায়ী বগি ও গতি বাড়িয়ে যাত্রীদের এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। মেট্রোরেল থেকে নামার পর যাত্রীদের কয়েকটি বিআরটিসি বাসের উপর নির্ভর করলে হবে না। মেট্রোরেলে আসা-যাওয়ার জন্য বাস রুটের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এদিকে, এমআরটি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হবে। তবে এখনো এই টিম চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এমআরটি পুলিশ ইউনিট নামে ৩৫৭ জন সদস্য নিয়ে পুলিশের বিশেষ ইউনিট গঠিত হবে। ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এই ইউনিটের দায়িত্বে থাকবেন। এখনই চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলেও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ সদস্য নিয়ে নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেবে। তবে সরকার দ্রুত এই বিশেষ ইউনিট অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের প্রথম অংশ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে এমআরটি-৬ নামের মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই অংশের এখন শতভাগ নির্মাণকাজ শেষ। আগারগাঁও থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের দ্বিতীয় অংশ ২০২৪ সালে চালু হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জাপানের সহযোগিতায় কাজ এগিয়ে চলছে। ৫০ টাকার স্মারক নোট : বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট মুদ্রণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এ স্মারক নোটের বাঁ দিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি এবং পটভূমিতে মেট্রোরেলের ছবি সংযোজন করা হয়েছে। নোটের ডান দিকে জলছাপ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’, ‘৫০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ মুদ্রিত রয়েছে। শিরোনামে লেখা রয়েছে ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ, যানজট কমাবে মেট্রোরেল’। নোটের অপর পাশে মেট্রোরেলের আরেকটি ছবি সংযোজন করা হয়েছে। ইংরেজিতে ‘মুভিং পিপল, সেভিং টাইম এন্ড এনভায়র্নমেন্ট’ মুদ্রিত রয়েছে। নোটের উভয় পৃষ্ঠে ভার্নিশের প্রলেপ সংযোজন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App