×

সারাদেশ

লুটপাটে মুখ থুবড়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:১৩ পিএম

লুটপাটে মুখ থুবড়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প

ছবি : ভোরের কাগজ

লুটপাটে মুখ থুবড়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প
লুটপাটে মুখ থুবড়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প

শ্রমিকদের উপস্থিতি কম শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে শ্রমিকের বদলে কাজ চলছে এক্সেভেটর দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি লুটপাটের পায়তারা শ্রমিক তালিকায় রয়েছে জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়-স্বজনের নাম

সরকার হতদরিদ্রের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের (ইজিপিপি) মাধ্যমে ৪০ দিনের কাজ চালু করেছে। এ প্রকল্পে কাজ করে প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক হাজিরা পাবে ৪০০ টাকা। প্রতি সপ্তাহে মজুরির টাকা পরিশোধের নিয়ম থাকলেও নেত্রকোণার মদন উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ২৪ কর্মদিবসে কোনো মজুরি পায়নি শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ও তদারকির অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে নামে মাত্র কাজ করানো হচ্ছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের পায়তারার জন্য শ্রমিকদের মজুরি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে যে সকল শ্রমিক কাজ করছেন তারা পড়েছেন বিপদে। কাজ করেও সময় মতো মজুরি না পেয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে হতদরিদ্র শ্রমিকদের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ২৬ নভেম্বর কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এ বছর উপজেলায় ২০টি প্রকল্পে ৮২৭ জন শ্রমিক রয়েছে। ৮২৭ জন শ্রমিকদের ৪০ দিনের মজুরি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় এককোটি ৩২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে, একজন শ্রমিক দৈনিক কাজের হাজিরা বাবদ ৪০০ টাকা করে মজুরি পাবে। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরির টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কর্মদিবসের ২৪ দিন হয়ে গেলেও একজন শ্রমিকও মজুরি পায়নি।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পে শ্রমিকদের উপস্থিতি খুবই কম। মদন ইউনিয়নের বারবুড়ি প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি। তবে সেই প্রকল্পে মাত্র একদিন এক্সেভেটর দিয়ে কিছু মাটি কাটা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ইউনিয়েনর কুলিয়টি গ্রামের প্রকল্পে ৫৫ জন শ্রমিকের যায়গায় ১৬ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া কাইটাইল ইউনিয়নের জাওলা গ্রামের হাওর প্রকল্পে ৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩৩ জন, শিবাশ্রম প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩১ জন শ্রমিক পাওয়া যায়। তিয়শ্রী ইউনিয়নের কুটেরীকোনা প্রকল্পে ৩৬ জন শ্রমিকের মধ্যে ২১ জন, বাঘমারা প্রকল্পে ৩৬ জনের মধ্যে ২৬ জন ও বাড়ৈউড়া প্রকল্পে ৩৭ জনের মধ্যে ২৫ জন শ্রমিক পাওয়া যায়। নায়েকপুর ইউনিয়নের মাখনা গ্রামের প্রকল্পে ৫৬ জন শ্রমিকের মধ্যে ১৮ জন ও বরাটি মোয়াটি প্রকল্পে ৫৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩১ জন শ্রমিক পাওয়া যায়। অন্য প্রকল্পগুলো ঠিক একই অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও প্রত্যেকটি প্রকল্পেই শিশু শ্রমিক রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, বেশিরভাগ শ্রমিক কাজে আসে না। আমরা কাজ করছি তবুও মজুরি পাচ্ছি না। সময় মতো টাকা না পাওয়ায় আমাদের কষ্টে দিন যাচ্ছে। অনেকেই আবার কাজ না করেই টাকা নিবে। যারা কাজে আসে না তারা বেশির ভাগই চেয়ারম্যান মেম্বারদের আত্মীয়-স্বজন।

স্থানীয়রা জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও কাজের ধরণ ঠিক আগের মতোই রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে সরকারে একটি বড় প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। তাই এই প্রকল্পটি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন।

মদন ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম জানান, বোরো ধান রোপণের সময় থাকায় কিছু শ্রমিক কম রয়েছে। শ্রমিকের বদলে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে এই বিষয়ে তিনি জানান, কিছু অংশ এক্সেভেটর দিয়ে করানো হলেও বাকি অংশের কাজ শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল জানান, মদন ইউনিয়নে কর্মসৃজন কর্মসূচির একটি প্রকল্পে শ্রমিকদের বদলে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটার খবর পেয়ে আমি প্রকল্প পরিদর্শন করেছি। সেখানে কোনো শ্রমিক পাইনি। তাছাড়া উপজেলার প্রত্যেকটি প্রকল্পে কিছু সংখ্যক শ্রমিক অনুপস্থিত রয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা শ্রমিক মাস্টার রোল অফিসে জমা না দেয়ায় ঠিক সময়ে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, শিশুদের দিয়ে কাজ যাতে না করায় সে জন্য চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিনা শাহরীন জানান, যে প্রকল্পে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটানো হয়েছে সেই প্রকল্পের বিল দেয়া হবে না। যে কয়জন শ্রমিক প্রকল্পে কাজ করেছে শুধু তারাই মজুরি পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App