পুলিশের ১৭ কর্মকর্তাকে বদলি

আগের সংবাদ

খন্দকার মাহবুব লাইফ সাপোর্টে

পরের সংবাদ

১০ মিনিটে ভ্রমণ শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্বপ্নের মেট্রোরেল যুগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২২ , ৩:৫০ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০২২ , ৪:১২ অপরাহ্ণ

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেল ভ্রমণ শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে দিয়াবাড়ি থেকে ছাড়ার পর মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে সময় নিয়ে ২টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী মেট্রোরেলটি আগারগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এর মাধ্যমে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থার নতুন অধ্যায় প্রবেশ করে বাংলাদেশ।

ছবি: সংগৃহীত

এর আগে দুপুর পৌনে দুইটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মেট্রোরেলের ছবি সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিট ও ৫০ টাকার স্মারক নোট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ফিতা কেটে মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের বাহনে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১১.৭৩ কিলোমিটার পথের প্রথম ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রীরা হলেন- স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী, ৩ জন উপমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ৬ জন উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৯ জন সদস্য, ঢাকা মহানগরের ১২টি আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকার দুই সিটি মেয়র। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ১৪ সদস্যকে প্রথম যাত্রায় মেট্রোরেলে চড়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ছবি: ভোরের কাগজ

তবে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ, মান্নান খান, রমেশ চন্দ্র সেনসহ মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় ছিলেন ২২০ জন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাককর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

এর আগে দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী স্টেশন থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সংরক্ষিত আসনে চড়েন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। মেট্রোরেলের প্রথম চালক মরিয়ম আফিজা। এ সময় সফরসঙ্গী হন তার পরিবারের ১০ সদস্য।

ছবি: ভোরের কাগজ

এদিকে, দুপুরে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়িতে আয়োজিত সুধী সমাবেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় আমরা আরেকটি পালক দিতে পারলাম, এটাই বড় কথা। অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। এই মেট্রোরেল সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব। যাতে মেট্রোরেলের কোনো কিছু নষ্ট না হয়, সে জন্য তিনি সবাইকে তা ব্যবহারে যত্নশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলকের প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) জনসম্মুখে উন্মোচন করেন। প্রতিরূপ উন্মোচনের পর মোনাজাত করা হয়। পরে সুধী সমাবেশের সূচি অনুযায়ী, প্রথমে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। পরে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তমোহিদে, বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।

ছবি: ভোরের কাগজ

জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য স্বপ্নের এই বাহনের দ্বার খুলল। আপাতত সীমিত যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল, যাতে যাত্রীরা ১০ মিনিটেই এই পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবেন। উদ্বোধনের পর রুটের মধ্যবর্তী স্টেশনে কোনো স্টপেজ ছাড়াই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে ছুটবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেন। পৌনে ১২ কিলোমিটার উড়াল-রেলপথে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও চলে আসবে মানুষ। তবে প্রথমদিকে মেট্রোরেল চলবে সীমিত পরিসরে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। মাঝপথে কোথাও থামবে না। প্রথমদিকে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন চলবে।

ছবি: ভোরের কাগজ

আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে এই রুটে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল পু‌রোদ‌মে চল‌বে। সে‌দিন থে‌কে সব স্টেশনে থে‌মে যাত্রী তুল‌বে। পুরোদমে চলাচল শুরু হলে চলবে ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। যাত্রীর অভ্যস্ততার জন্য ধাপে ধাপে পথের সাতটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে যাত্রী ওঠানামার জন্য। তখন ১৭ মিনিট সময় লাগবে। এর মধ্যে যাত্রা বিরতির ১০ মিনিট। ট্রেনের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন হলেও আপাতত ২০০ যাত্রী নিয়ে চলবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে মতিঝিল এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন।

ছবি: ভোরের কাগজ

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জাইকা) এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর আজ প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এতে স্বপ্নের মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।

ছবি: ভোরের কাগজ

কেএইচ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়