×

জাতীয়

যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির লুকোচুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৮ এএম

যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির লুকোচুরি

ছবি: সংগৃহীত

যুগপৎ আন্দোলনে সরকারবিরোধী যে কেউই মিত্র হতে পারে

বিএনপি-জামায়াতের গাঁটছড়া দীর্ঘ ২৩ বছরের। মাঝেমধ্যে এ গাঁটছড়ায় টান পড়লেও ছিঁড়ে না। রাজনৈতিক নানা সমালোচনার মুখে বিগত ৬ বছর কৌশলগত দূরত্বে চলছে মিত্র দল দুটি। তবে সমীকরণ যাই হোক, শেষমেশ সম্পর্কের ধোঁয়াশা কাটিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে একসঙ্গে পথচলার আভাস দিচ্ছে দুপক্ষই। বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছে জামায়াত। এরপরেও ‘জামায়াতযোগ’ স্বীকারে নারাজ বিএনপি।

জামায়াত ইস্যুটি বিএনপির কাছে বরাবরই স্পর্শকাতর। এ কারণে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে বিএনপির নেতারা বেশির ভাগ সময়েই চুপ থাকেন বা এড়িয়ে যান। যুগপৎ আন্দোলনেও জামায়াতের অংশ নেয়া প্রশ্নে লুকোচুরি করছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সরকারবিরোধী সব দলের জন্য তাদের দরজা খোলা। তবে সেখানে জামায়াত কোন ফরমেটে থাকছে তা স্পষ্ট করছেন না তারা।

গত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে বিএনপি ঘোষিত যুগপতের ১০ দফা দাবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা দেয় জামায়াত। ১০ দফা দাবিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করবে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ওইদিন জামায়াতে ইসলামও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এরপরেও যুগপৎ আন্দালনে জামায়াত প্রশ্নে বিএনপি চুপ।

যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত থাকছে কিনা? এমন প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সম্প্রতি ভেঙে যাওয়া ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, যুগপৎ তো যে যার মতো করে করবে, এখানে কে থাকবে কে থাকবে না সেটা দলগুলো নিজেরা ঠিক করবে।

যুগপৎ আন্দোনের মুরব্বি তো বিএনপি। সেক্ষেত্রে জামায়াত থাকছে কিনা সেটা বিএনপির কাছে এখনো পরিষ্কার নয় কেন? এ প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজই (গতকাল) আমরা লিয়াজোঁ কমিটি করেছি। কমিটিতে যারা আছেন তারা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।

১৯৯৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয় পেলেও পরে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপিকে বড় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এরপর থেকে ভোটের হিসাব চালিয়ে গেলেও প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে সভা-সমাবেশের মিলিত হওয়া বন্ধ করে দেয় বিএনপি। তবে জামায়াতের সঙ্গে সখ্যতা ধরে রাখতেই ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয় দীর্ঘদিন। এমনকি, এবার বৃহত্তর বা যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে জামায়াত ইস্যু কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিনা, এই ভাবনা থেকে দলটির সঙ্গে কোনো প্রকাশ্য আলোচনায় যায়নি দলটি। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৭ আগস্ট বোমা ফাটান জামায়াত আমির। জানান, বিএনপির সঙ্গে জোট আর নেই। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আপত্তি নেই।

এর সাড়ে তিন মাস পর ৮ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা। ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাওয়ায় শরিকদের নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জোট গঠন করছে দলগুলো। এরই মধ্যে ১২ দলের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ছয় দল নিয়ে আরো একটি মোর্চা হচ্ছে খুব শিগগিরই। নির্বাচন ও আন্দোলন সামনে রেখে ছোট ছোট দলের এমন জোট গঠনের নেপথ্যে বিএনপির প্রেসক্রিপশন দেখছেন অনেকে। দীর্ঘদিনের জোটের শরিকরা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়, সে কারণে বিএনপির এমন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সমমনা দলের নেতাদের দাবি- জামায়াত নিয়ে বিতর্ক এড়াতেই জোট ভাঙাগড়ার এই কৌশল।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যুগপৎ নিয়ে ভিন্ন কৌশলের প্রশ্নই আসে না। এই প্ল্যাটফর্ম একেবারেই ফ্রি। এই আন্দোলনে যে কোনো দল ও মতের লোক আসতে পারে। তিনি বলেন, জামায়াত বলে কথা না, যারা এই সরকারের বিদায় চায়, যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা চায়, তারা একমত হয়ে তাদের অবস্থান থেকে আন্দোলন করলে আমরা নিষেধ করতে পারব না।

দায়িত্বশীল নেতারা এড়িয়ে গেলেও চলমান যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির ও জামায়াত যে গোপন আলোচনা করেই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে তার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচিতে। ওইদিন যুগপৎ কর্মসূচির প্রথম দিনে জামায়াতে অসংখ্য নেতাকর্মৗ গ্রেপ্তার ও পুলিশি হামলায় আহত হন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন ছিল। এটা আদর্শভিত্তিক নয়। জামায়াত যদি মনে করে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার, তো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জামায়াত আন্দোলন করতেই পারে। তাছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে সরকারবিরোধী যে কেউই আমাদের মিত্র হতে পারে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের পুরো প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। এরই অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বরে পরে কর্মসূচির ধরন ও সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে দুই দফা বৈঠক হয়েছে জামায়াত নেতাদের। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার এড়িয়ে দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে রুকন সম্মেলন করেছে। গোপনে বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত কর্মিসভায় যোগ দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলাম। সম্প্রতি এসব তথ্য নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠায়।

জামায়াতের আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন তৎপর। রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছতে নানা কৌশল আঁটছে। জামায়াতে ইসলামীও বসে নেই। তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই নির্বাচন চায় দলটি।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, কোনো জোট বা দলের নেতৃত্বে নয়, গণমানুষের মুক্তির জন্য ১০ দফা কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলাম মাঠে আছে এবং থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা যা করব প্রকাশ্যেই করব। হামলা-মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য চলমান এই আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App