×

সম্পাদকীয়

মেঘনায় তেলবাহী জাহাজডুবি : জলপথে পরিবহন নিরাপদ হবে কবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:৫৭ এএম

গত রবিবার ভোলার মেঘনা নদীতে কার্গো জাহাজের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯০০ টন ডিজেল ও অকটেন নিয়ে ডুবে যায় তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২। ভোর ৪টায় সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকার মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনায় জাহাজ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকারডুবির ঘটনা নতুন নয়। ২০১৪ সালে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। এতে প্রকৃতি বিশেষ করে জলজ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বছর মার্চ মাসে শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবিতে প্রাণহানি ঘটে। জলপথে অসতর্কতায় এমন দুর্ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। এসব দুর্ঘটনায় কার্গো জাহাজের অসতর্কতা লক্ষণীয়। কার্গো জাহাজ চালনায় যুক্ত স্টাফদের আরো সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ জরুরি বলে মনে করি। বারবার কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এমন দুর্ঘটনা দুঃখজনক। মেঘনায় তেলবাহী জাহাজডুবিতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করা হলেও তেল ছড়িয়ে পড়েছে মেঘনায়। এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করা দরকার ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব সীমিত রাখার। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখে না পড়তে হয়, এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আর দেরি করা যাবে না। ঘন কুয়াশায় নৌযান যেন দৃশ্যমান থাকে সে বিষয়ে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত রাখতে হবে সব নৌযানে। এতে নৌপথে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করি। জলপথে জ্বালানি তেল বা এ জাতীয় পদার্থ পরিবহনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। তেলের জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। মেঘনা বাংলাদেশের গভীরতম ও প্রশস্ততম নদী এবং অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান নদী। মৎস্যশিল্প তথা দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এই নদী। জাহাজডুবির কারণে এখানকার পানিতে প্রচুর পরিমাণ তেল ভাসছে। পানিতে তেলের কারণে অক্সিজেন স্বল্পতায় নদীর মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া শীতে যেসব অতিথি পাখি আসে সেগুলোও মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মেঘনার দূষণ রোধে দ্রুত তেল অপসারণে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর আমাদের হাত নেই। কিন্তু যথাযথ সতর্কতায় মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়গুলো এড়ানো সম্ভব। সারা বিশ্বে তেল পরিবহনের কাজটি করা হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মাথায় রেখে। কারণ এ জাতীয় দুর্ঘটনা শুধু সম্পদেরই ক্ষতি করে না, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যেরও অপূরণীয় ক্ষতি করে থাকে। অথচ আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে চরম ঔদাসীন্য ও অপরিণামদর্শিতা রয়েছে, যার পরিণাম এই বিপর্যয়। এর দায় কোনোভাবেই সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। জলপথে তেল ও তেলজাতীয় পদার্থ নিরাপদে পরিবহনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App