×

মুক্তচিন্তা

আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন : ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:৫৭ এএম

গত ২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিল অধিবেশন। এতে অংশ নেন ৭ হাজার ডেলিগেট। সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি এবং ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনা সভাপতি পদে দশমবারের মতো দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সম্মেলন শেষে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে ৮১ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কমিটিতে পুরনো এবং নতুন মিলিয়ে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, রীতি অনুসারে দলের সভাপতিমণ্ডলীর পরবর্তী সভায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে দলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত করেছে। বৈশ্বিক নানা বাস্তবতায় এবারের সম্মেলন মাত্র দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে আড়ম্বর পরিহার করা হয়েছে, তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতিসংবলিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি ছিল যেমন গোছানো এবং চিত্তাকর্ষক; তেমনিভাবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক শেখ সেলিম, শোক প্রস্তাব উত্থাপনকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া এবং উপস্থাপকদের উপস্থাপনা ছিল অনেকটাই গোছানো। শেখ হাসিনা সম্মেলনের অল্প কয়েকদিন আগেই স্মার্ট বাংলাদেশের একটি ধারণা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আগামী দিনের রূপরেখা হিসেবে জাতির সম্মুখে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে- এ বিষয়টি আগে থেকেই তার এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারূপে দলটি বাস্তবায়ন করতে চায়, সেটি এতদিন বলা হয়েছিল। এখন উন্নত-সমৃদ্ধ সেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক কী ধরনের পরিবর্তন সাধিত হবে, সেটি এক কথায় শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ নামে অভিহিত করছেন এবং এর চারটি উপাদান, যথা- ই-সিটিজেন, ই-ইকোনমি, ই-গভর্নমেন্ট এবং ই-সোসাইটি বা সমাজের ধারণা ব্যক্ত করেছেন। এর অর্থ দাঁড়ায়- ২০৪১ সালে বাংলাদেশ এবং এর নাগরিকগণ সার্বিক অর্থেই স্মার্ট তথা তথ্যপ্রযুক্তি, জ্ঞান ও ব্যবহারে ততটাই উন্নত অবস্থানে থাকবেন, যেখানে ই প্রত্যয়টি সবার জন্য স্বাভাবিক থাকবে। এটি মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশের উচ্চতর উত্তরণ ঘটার একটি নতুন ধারণা হিসেবে শেখ হাসিনা উপস্থাপন করেছেন। মজার ব্যাপার হলো ২০০৮ সালে তিনি যখন দিন বদলের সনদ, ২০২১ সালের রূপকল্প উপস্থাপনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কথা উল্লেখ করেন, তখন বেশির ভাগ মানুষই তার এই প্রত্যয়ের কথা বুঝতে পারেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেও অনেকে দ্বিধা করেননি। কিন্তু সত্যি সত্যি বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই ডিজিটালাইজেশনের অনেক সুবিধাই জনজীবনে দিতে শুরু করে। সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এখন চলছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর চাইতে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। যতখানি ডিজিটালাইজেশন আমাদের দেশে ঘটেছে, তাকে একেবারে কম বলা যাবে না। কিন্তু‘ ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্য ক্রমাগতভাবে অধিকতর জনসম্পৃক্তির মাধ্যমে উচ্চতর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গঠন ও পরিপূর্ণ করার যে ব্যাপক নেটওয়ার্ক ক্রমাগত করে যাচ্ছে, সেটিতে পৌঁছানোই শুধু নয়, সেই সড়কেই অবস্থান করার মতো গুণগত মান সর্বক্ষেত্রেও আমাদের অর্জন করতে হবে। ততদিনে বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবও ঘটে যাবে। এই বিপ্লবের সঙ্গে আমরা যদি তাল মিলিয়ে চলতে না পারি, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। গত এক যুগে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পূর্ব প্রস্তুতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি মাত্র। আগামী ১৯ বছর আমরা যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে শেখ হাসিনা কর্তৃক উত্থাপিত স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি উপাদান যথাযথভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের সব উদ্যোগ অব্যাহত রাখি, তাহলেই কেবল উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারব। এই উপলব্ধি আমাদের আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা তার ভিশনারি-মিশনারি নেতৃত্বের গুণে দিতে পারছেন। ভিশনারি-মিশনারি নেতৃত্বরা এমনই হন। তারা সবার আগে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে জানেন, যা অন্যরা জানেন না। বঙ্গবন্ধু তার রাজনীতির পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতা থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে পূর্ব বাংলার অবস্থানকে একেবারে অগ্রহণযোগ্য মনে করেই ধাপে ধাপে স্বাধীনতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। বিশেষত ৬ দফা প্রদানের পর যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল তা হচ্ছে- হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রে আমাদের স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে, নতুবা আমাদের এক দফার দাবি তথা স্বাধীনতায় পৌঁছাতেই হবে। তিনি যদি এসব লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধাপে ধাপে উপস্থাপন না করতেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে না তুলতেন তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কল্পনা আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্য থেকে কোনোভাবেই করতে পারতাম না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষা, কূটনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এরপর ৮ বছর আমাদের কেটেছে পুরনো ধ্যানধারণা এবং উগ্রবাদী নেতৃত্বের অধীনে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার দিন বদলের সনদ এবং ২০২১-এর রূপকল্প ছিল বঙ্গবন্ধুর মতোই আরেকটি ভিশনারি-মিশনারি রাজনৈতিক নেতৃত্বের রূপকল্পের প্রক্ষেপণ। যার পথ ধরে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছি, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও লাভ করেছি, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও আমাদের ঘটেছে ব্যাপক রূপান্তর। বাংলাদেশ এখন একটি সম্ভাবনাময় আধুনিক রাষ্ট্রের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পেরেছে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্য উৎপাদন, বিদ্যুৎ, গার্মেন্টস শিল্পসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্প এবং উন্নয়ন-অর্থনীতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে গ্রামীণ সমাজ অনেকটাই বদলে গেছে। শহর এবং গ্রামের পার্থক্য অনেকটাই কমে আসছে। ডিজিটাল পদ্ধতি আমাদের রাষ্ট্র, অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখন দ্রুত পরিবর্তনশীলতাকে নিয়ে আসছে। আমাদের ব্যাপক সংখ্যক তরুণ এখন ডিজিটাল-কর্মসংস্থানের সারথি হয়ে উঠেছে। আমরা এখন বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছি। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ভিশনারি-মিশনারি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শী লক্ষ্য নির্ধারণপূর্বক কর্মসূচি প্রদানের মাধ্যমে। তিনি বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় যেসব চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও জলবায়ুগতভাবে আমাদের মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হবে তার সবকিছুকে উপলব্ধি করে স্মার্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নতুন অভিযাত্রার রূপরেখা দলের ২২তম সম্মেলনে প্রাথমিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর বিস্তার ঘটবে আগামী দিনগুলোতে। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি উপস্থাপন করবেন ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের মহাপরিকল্পনা। সেখানে নাগরিক হিসেবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে, যা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হতে পারে। তবে স্মার্ট নাগরিক হওয়ার জন্য আমাদের এখনো অনেক কিছু অর্জন করতে হবে। বিশেষত শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে আমাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের শতভাগ নাগরিককে অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতেই হবে। তাদের থাকতে হবে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং আধুনিক চিন্তাধারার প্রয়োজনীয় সমাজ সচেতন হওয়ার শিক্ষা ও দক্ষতা। এরপর মেধাবীদের উচ্চতর জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা এবং গবেষণায় দক্ষ মানব জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা গেলে তবেই আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব। শিক্ষায় এই আমূল পরিবর্তনের বেশ কিছু ভিত্তিপ্রস্তর এরই মধ্যে স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু নতুন ও তরুণ প্রজন্মের কোটি কোটি নাগরিকের জন্য ২০৪১ সালের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা আরেক কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেটি সম্ভব করা ছাড়া আমাদের সামনে দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। একইভাবে স্মার্ট অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো মোটেও সহজ কোনো কাজ হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অনেক কিছু নির্ভর করবে অর্থনীতিকে কতখানি ২০৪১ সালের উপযোগী করতে পারব তার ওপর। এর জন্য সব শ্রেণি-পেশায় ই-অর্থনীতির ধারণা, ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা এবং সাফল্যকে নিরন্তর পরিবীক্ষণের মাধ্যমে উত্তরোত্তর মানবৃদ্ধি ঘটিয়ে টেকসই করে নেয়া, এসবকে বাস্তবে পরিবীক্ষণ, পরিচালন এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চাই ই-গভর্নমেন্ট। একটি ই-গভর্নমেন্ট কতখানি মিশনারি-ভিশনারি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্র ও নাগরিকদের সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদান করবে সেটি অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব উপাদানের সফল প্রয়োগই কেবল আমাদের গড়ে তুলতে সাহায্য করবে ই-সোসাইটি, যা শেষ বিচারে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হতে সহায়ক হবে। মনে রাখার বিষয় হচ্ছে এ সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিপক্ষ ‘রাষ্ট্র মেরামত’ তত্ত্ব নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছে। ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ তাদের কারো রয়েছে ১০, কারো ১৪, কারো বা ২৭ দফা। তবে যারা এসব দাবি এবং রূপরেখা এখন উত্থাপন করছেন, তারা অতীতে দেশ শাসন করলেও দেশকে কোনো মিশনারি-ভিশনারি নেতৃত্ব প্রদান করতে পারেননি। তাদের কোনো শাসনামলেই দেশ উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির মুখ দেখেনি। অধিকন্তু‘ তারা দেশকে পশ্চাদমুখী দর্শনে পরিচালিত করেছে। দেশকে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ এবং সুবিধাবাদের উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। তারা ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ নানা হাস্যকর ‘ব্যবস্থাপত্র’ উপস্থাপন করেছে, যা কিছু মানুষকে হয়তো বিভ্রান্ত করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশকে সম্মুখের দিকে এগিয়ে নেয়ার কোনো দিকদর্শন এর মধ্যে নেই, নেই কোনো ভিশনারি-মিশনারি নেতৃত্ব। তবে রাজনীতির কূটকৌশলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। সরকার উৎখাত করে তারা পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যেতে প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও অভিজ্ঞতায় ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায় অনেকটাই বিএনপি এবং জামায়াতের কূটকৌশলের কারণেই ঘটেছে। এখন তারাই আবার সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। রাষ্ট্র মেরামতের নামে কী সব করতে চাচ্ছে, তা তারাই ভালো জানে। কিন্তু রাষ্ট্র কখনো মেরামত করা যায় না। রাষ্ট্রকে নির্মাণ এবং সংস্কার করতে হয়। আধুনিক রাষ্ট্রনির্মাতার দর্শনের সঙ্গে বিএনপি এবং জামায়াতের দর্শন যায় না। রাষ্ট্র মেরামতের এই রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের ধারণা অভিজ্ঞতায় মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য হতে পারে। তবে এর জন্য থাকতে হবে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তির সম্মিলিতভাবে কাজ করার, জনগণের মধ্যে ধারণা তৈরি করার সর্বশক্তি নিয়োগের ওপর। সেই চ্যালেঞ্জও আওয়ামী লীগের সম্মুখে কম নয়। আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পরস্পরবিরোধী দুই রাজনৈতিক মতাদর্শের লড়াইয়ে এখন রাজনীতির মাঠে জনগণকে সচেতন করার কাজে সফল হতেই হবে। তাহলেই ২০৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাংলাদেশের সব নাগরিকের কাছে মর্যাদার আসন পাবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে বাংলাদেশের ভূপাতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও থাকবে। জনগণের কাছে এই দুই বাস্তবতার বৈসাদৃশ্যগুলো তুলে ধরতে হবে, ২০৪১ সালকে কেন গ্রহণ করতে হবে তাও বোঝাতে হবে। ২২তম সম্মেলন সেই ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার পথ দেখিয়েছে। মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App