×

মুক্তচিন্তা

শীতার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:৪৫ এএম

শীত মৌসুমে যত দুর্গতি প্রান্তিক মানুষের। যাদের প্রাত্যহিক জীবনই চলে নিজেদের কায়িক পরিশ্রমের ওপর ভর করে। শীত এসে তা হঠাৎ করেই থমকে দেয়। ছন্দপতন ঘটে তাদের যাপিত জীবনের। অট্টালিকায় বসবাস করা বেশির ভাগ মানুষই শীতে কুঁকড়ে যাওয়া অসহায় মানুষগুলোর অসহায়ত্বের কথা কখনো তেমন করে ভাবে না। অনেক সময় জীর্ণশীর্ণ গায়ে পথশিশুর দল সারারাত কাটিয়ে দেয় তাদেরই অট্টালিকার সামনে আগুনের তাপ শরীরে মেখে, তবুও তাদের অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে না। এমন পরিস্থিতিতে এ বছর ক্রমেই এগিয়ে আসছে শীত। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে ছোট্ট শিশু, বৃদ্ধ এবং প্রান্তিক মানুষগুলোর অসুখ-বিসুখ ও জীবনযাপনের কষ্ট। এ বছর একটু বিলম্বে হলেও হিমালয় থেকে বাংলাদেশের দিকে বরফ শীতল বায়ু নিয়ে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে শীত। এর ফলে দেশের দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্টও বাড়তে শুরু করেছে। এই মৌসুমে বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীতের প্রকোপ একটু বেশি দেখা দেয়। ওই জনপদের মানুষগুলোর জীবিকা নির্বাহ করার মতো কোনো কাজ থাকে না। তাদের জীবন চলে অভাব-অনটনে। একসময় উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় মঙ্গা লেগে থাকত, বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন হলেও শীতের সময় তাদের দুঃখ লেগেই থাকে। প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কারণে উক্ত জনপদের মানুষ ঘর থেকে বেরই হতে পারে না, ফলে অনেকেই মহাজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে জীবন চালালেও অনেকেই আবার আধপেটা খেয়েই দিন কাটায়। অনেক সময় কিছু সরকারি সাহায্য এদের ভাগ্যে জুটলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য। এ বিষয়ে উক্ত জনপদের জনপ্রতিনিধিদের শীত আসার আগেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শুধু শীতের সময় সাহায্য না করে সারা বছরের জন্য এদের আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে সবচেয়ে ভালো হতো। এতে তারা শীতের সময় কারো বোঝা হতো না। অনেক সময় সরকারের পাশাপাশি অনেক এনজিও এবং বিত্তবান মানুষ শীতের সময় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে, যে এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ শীতে কষ্ট পায় সেখানেই সাহায্যগুলো দেয়ার ব্যবস্থা করলে জনগণ সুফল পেত। প্রকৃতপক্ষে শৈত্যপ্রবাহের সময় শীতার্ত প্রান্তিক মানুষগুলো তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে অত্যন্ত মলিন বদনে। এ সময় আমাদের উচিত যার যা কিছু আছে তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। অনেক সময় এসব মানুষের দুঃখের কথা মিডিয়ায়ও আসে না। আবার কখনো কখনো এদের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে পৌঁছাতেই এদের জীবনই শেষ হয়ে যায়। অনেক সময় এই শীত মৌসুমে অনেক পথশিশুদের জীর্ণশীর্ণ গায়ে ছেঁড়া পোশাকে রাতযাপন করতে দেখা যায়। এদের প্রতি এই শীত মৌসুমে সবার সদয় হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে শীত মৌসুমে সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে দেশের প্রান্তিক মানুষদের জন্য দেশের সবাই সাহায্যে এগিয়ে আসা কর্তব্য, কারণ আমার বাড়ির পাশেই আমার একজন ভাই কিংবা পড়শি শুধু প্রচণ্ড শীতের জন্য কাজ করতে যেতে না পারায় অনাহারে থাকবে যেটা মানুষ হিসেবে আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। আমাদের একটু সাহায্যই এদের গায়ে একটি গরম পোশাক তুলে দিতে পারে আর পারে মুখে আহার তুলে দিতে। মানুষ মানুষের জন্য এই আপ্তবাক্য বুকে ধারণ করে চলুন এই শীত মৌসুমে মানুষের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করি। হোক সে উদ্যোগ অতি ক্ষুদ্র তবুও মানুষ বাঁচুক একদল মানবিক মানুষের আন্তরিকতায়। এ শীত মৌসুমে এ দেশে একজন প্রান্তিক মানুষও যাতে শীতে কষ্ট না পায় সেদিকে আমাদের সবার নজর রাখতে হবে। আমরা যদি মানবিক হই তাহলে এসব মানুষের কষ্ট লাগব করা আমাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই মিলে যদি এই শীতে এসব প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে এরা এ শীতে দুবেলা খেয়ে দিনতিপাত করতে পারবে এবং এসব প্রান্তিক মানুষ পরিবার-পরিজনসহ নতুনভাবে বাঁচতে শিখবে। তাই আসুন সবাই এই শীত মৌসুমে শীতার্ত অসহায় দরিদ্র প্রান্তিক মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই, তাদের বাঁচতে সহায়তা করি। একমাত্র মানবিক মানুষ হতে পারলেই আমরা এসব প্রান্তিক মানুষকে বাঁচাতে পারি। তাই আসুন আমরা সবাই মানবিক মানুষ হই। লাল-সবুজের মায়াময় বাংলাদেশের সব মানুষ এই শীত মৌসুমে প্রান্তিক মানুষগুলোর পাশে থাকবে এমন প্রত্যাশা সবার। রতন কুমার তুরী লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App