×

সারাদেশ

রংপুরে ভোট মঙ্গলবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩০ এএম

রংপুরে ভোট মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

সবার দৃষ্টি এখন রংপুরের দিকে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই শুরু হবে ভোট। এই ভোটের মাধ্যমেই রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) তৃতীয়বারের মতো নতুন মেয়র নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিত হবেন ৩৩টি ওয়ার্ডে ৩৩ জন কাউন্সিলর এবং ১১ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর। রবিবার মধ্যরাত থেকে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। ভোটারদের পক্ষে নিতে প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থানে দিনভর জোরালো নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।

গতকাল (রবিবার) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনী মাঠ চাঙ্গা দেখা গেছে। তবে নৌকার নেতাকর্মীরাও তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন। নৌকার পালে কিছুটা হাওয়া দেখা গেছে। প্রধান দুই দল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ৩৩টি ওয়ার্ডে নিয়োগ করা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। থাকছে র‌্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স। অর্থাৎ নিরাপত্তার চাদরে রংপুর শহর ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির জন্য এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে দুই দলেরই ভাবমূর্তি জড়িত রয়েছে। নৌকার বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অটুটু রাখার চ্যালেঞ্জ। রংপুরে নৌকার কাণ্ডারি এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নির্বাচিত হলে রংপুরে নৌকার জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে বলে নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন।

এছাড়া রংপুরের নির্বাচনের ফলাফল আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের সবগুলো আসনে প্রভাব ফেলবে। তবে নৌকার প্রার্থী হেরে গেলেও আওয়ামী লীগের জন্য কোন সমস্যা নেই। বরং আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বলেও সবার কাছে প্রমাণ হবে। তখন আওয়ামী লীগও বলিষ্ট কণ্ঠে দাবি করতে পারবে যে, রংপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার কোনো দলীয় প্রভাব খাটায়নি।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির জন্য এই নির্বাচন ইমেজ পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। রংপুর লাঙ্গল বা জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

ফলে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হলে দলের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হবে। লাঙ্গলের প্রার্থী বিজয়ী হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির দর কষাকষিতে আরো শক্ত অবস্থান নিতে পারবে জাতীয় পার্টি। এসব কারণে জাতীয় পার্টির জন্যও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে বিগত দিনের উন্নয়নের মূল্যায়ন আর নিত্য-নতুন প্রতিশ্রুতির হিসাব মেলাতে ব্যস্ত ভোটাররাও। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড বর্ধিত এলাকা। আয়তনে বিশাল এই নগরী বিগত ১০ বছরের উন্নয়নে কিছুটা বদলে গেছে। উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, কমেছে দূরত্ব। মূল শহরের ভাঙাচোরা সড়কগুলো এখন পুরোপুরি চলাচল উপযোগী। অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। উন্নত হয়েছে বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনার। তবে শ্যামাসুন্দরী খাল হয়নি অভিশাপমুক্ত। কমেনি যানজটের ভোগান্তি।

রংপুর নগরীতে পরিকল্পিত উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, বেকারত্ব দূরীকরণ, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ নানা পরিকল্পনা ও পরিবর্তনের কথা জানিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।

প্রস্তাবিত ২৯ দফা ইশতেহারে সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, শ্যামাসুন্দরী খালের দুপাশে মাটি ভরাট করে উঁচু করে একমুখী রাস্তা তৈরির মাধ্যমে রিকশা ও অটোরিকশা চলাচলের ব্যবস্থা করব। স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকা স্কুল-কলেজের উন্নয়ন, নারীদের জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বেকারত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ নেব।

তিনি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে গত ১০ বছরে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিস্তৃত এলাকার বাসিন্দারা রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সেবা থেকেই বঞ্চিত। তিনি নির্বাচিত হলে রংপুর সিটির পরিকল্পিত উন্নয়নের পাশাপাশি বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর জন্য মেগা প্রকল্প নিয়ে এসে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব।

রসিককে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত গ্রিন সিটি হিসেবে গড়তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টিও মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

তার প্রস্তাবিত ৩১ দফার ইশতেহারে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করা, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানজট নিরসনসহ ২৫০ বছরের পুরাতন এই শহরকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত মাস্টার প্লান অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, গত পাঁচ বছরে ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরাতন ১৫টি ওয়ার্ড ছাড়া বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ড থেকে একটি টাকাও কর আদায় করিনি। ২০১৭ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। তারপরও বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে এ পর্যন্ত ৭৫ ভাগ উন্নয়ন হয়েছে, আরো ২৫ ভাগ বাকি। এই ২৫ ভাগ যখন সম্পন্ন করতে পারব, তখন মূল শহরের সঙ্গে বর্ধিত এলাকাগুলোতে পার্থক্য কমে আসবে। বর্ধিত এলাকাগুলোতে প্রায় ১২৪০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে ৬৫০ কিলোমিটার। এবার যদি নির্বাচিত হতে পারি, বর্ধিত এলাকাগুলোর উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

এবার রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন ও মেহেদী হাসান বনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ জন এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার পর এখন ভোটাররা সংখ্যার হিসাব-নিকাশে বসেছেন। রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। ৩২ হাজার ৪৭৫ জন নতুন ভোটার এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। রংপুর নগরীতে মোট ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট রয়েছে। এছাড়া বিহারি ভোটার রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার।

এই প্রায় ৮৫ হাজার ভোট সব দলের মেয়র প্রার্থীদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ভেতরে থেকেও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে দেড় লাখের বেশি ভোটার ২১ ডিসেম্বর ভোট দেবেন। এসব ভোটাররা যে কোনো মেয়র প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে অনেকই মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সংখ্যালঘু, বিহারি ও নতুন ভোটারদের ভোট নিজেদের পক্ষে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করার কাজটিও জোরেসোরে চালাচ্ছেন জাসদ প্রার্থী সাবেক শিক্ষক শফিয়ার রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তাদের ভোট পেতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App