×

মুক্তচিন্তা

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট নেতৃত্ব চাই

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৮ এএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব দলের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচনী আবহ লক্ষ করা যাচ্ছে। আবহ কেবল নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েই নয়- নির্বাচন না হওয়া নিয়েও! অর্থাৎ সরকার যেমন একদিকে বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তেমনি বিএনপিও বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচন করবে না- কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না! সুতরাং আমরা বলতেই পারি, নির্বাচন নিয়েই সব দলের মধ্যে এরূপ আবহ সৃষ্টি হয়েছে! এককথায় রাজনৈতিক পরিবেশ দিন দিন সরগরম হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন। তাই আগামী এক বছরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে নানা রকমের গতি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হবে, তা অনুমান করা যায়। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করেছে। সম্প্রতি তারা আবার রাষ্ট্র ‘মেরামতের’ কিছু তরিকাও প্রকাশ করেছে! এই তরিকায় ২৭টি ফর্মুলা দিয়ে একটি কার্যতালিকাও তারা দিয়েছে! তাদের এই কৌশলপত্রকে অনেকে ‘ইউটোপিয়ান’ বা কল্পকাহিনী বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেউ কেউ আবার প্রশ্নও উত্থাপন করছেন এই বলে যে, বিএনপির উচিত আগে দল হিসেবে ‘নিজেকে মেরামত’ করা। নিজের চরকায় তেল না দিয়ে রাষ্ট্রের জন্য মেরামত মন্ত্র প্রদানকে তাই হাস্যকরও বলছেন কেউ কেউ। শুধু বিএনপি নয়, ছোট, বড়, মাঝারি বিভিন্ন আকার-আয়তনের রাজনৈতিক দলগুলোও বিএনপির মুখ্য দাবিকে সমর্থন জুগিয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য পোষণ করছে। আর এ লক্ষ্যে মাত্র দুদিন আগেই গঠিত হলো ১২ দলীয় জোট! ১২টি দলের কোন দলে কতজন সদস্য আছেন, সেটি অবশ্য গোপন প্রশ্ন! সরকার পতনের আন্দোলনের কৌশল হিসেবে পূর্বের ২০ দলীয় জোটকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির সমমনা দলগুলোর মতো কিছু বামপন্থি রাজনৈতিক দলও জোটবদ্ধ হয়েছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হতে দেবে না এটিই তাদের লক্ষ্য। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আমেজের চেয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়াসই বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের বাইরেও কোনো কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা মহলবিশেষের মধ্যেও উত্তেজনা সৃষ্টির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে! তারা বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী প্রচারণায় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে! বলার অপেক্ষা রাখে না, এরূপ উত্তেজনা ও অস্থিরতা তৈরির পেছনে কেবল ক্ষমতা লাভেরই ষড়যন্ত্র- যে কোনো প্রকারেই হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র! বিভিন্ন দল ও জোটের নেতৃত্ব দানকারী ও সমর্থনকারীদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার চেয়ে যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার লালসাই এখন তুঙ্গে। ক্ষমতার স্বর্ণশিখরে আরোহণের স্বপ্নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের মনের ভেতর ক্ষণে সক্রিয় হয়ে ওঠা এসব উত্তেজনা কিংবা উত্তেজনার রসদ দেখে সময়ে, অসময়ে আমরাও দর্শক হিসেবে যারপর নাই উত্তেজিত হয়ে পড়ি এবং ভুক্তভোগী হিসেবে ফলও ভোগ করি! তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উৎসাহব্যঞ্জক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হোক, কোনো ধরনের উত্তেজনা নয়- কোনো ধরনের অস্থিরতা নয়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে দিকে দিকে রণবাদ্যের দামামা বেজে উঠছে যেন! যে করেই হোক আওয়ামী শাসনের অবসান ঘটাতেই হবে। বুকের ভেতর কোন দলের কতটুকু বিশ্বাস আছে জানি না, তবে মুখে মুখে এমন প্রত্যয় স্বপ্নবাদী অনেক রাজনীতিবিদ, সংবাদকর্মী, এনজিওকর্মীসহ এককালীন সুশীলের ছদ্মবেশে থাকা বিশালদেহী ব্যক্তিদের মধ্যে একটা উৎসাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে নির্বাচনের পরিবেশ এক অর্থে সরকারবিরোধীরাই বিনষ্ট করে চলছে বলে সাধারণের কাছে মনে হয়। আবার এও দেখা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু বেশ কিছু নামি বেনামি গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ রূপ এবং এক ছাতার নিচে জমায়েত হওয়াকে গণমাধ্যমগুলোও অনর্থক বাতাসে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছে! এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে, যেন যে কোনো মুহূর্তেই তাদের ষড়যন্ত্র আওয়ামী বিধ্বংসী টর্নেডোতে পরিণত হয়ে যাবে! শ্রীলঙ্কার মতো ভেসে উড়ে যাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার! ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারও করেছে, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে ২টি বিমান, টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়সহ রেডি করে রাখা আছে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের ২৭ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই বিমানে পালাবে!’ এরূপ নানা রকমের প্রোপাগান্ডায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল! এসব দেখে-শুনে অতি পুরনো প্রবাদের কথাই মনে পড়ে- ‘খালি কলসি বাজে বেশি’। নূর, সাকি, মান্না, রেজা কিবরিয়াসহ দেশের ডান-বাম-পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ-উঁচু-নিচু প্রভৃতি নানা আদর্শের বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা একত্র হয়েছেন। এরূপ প্রয়াস ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দেখেছি! দেখেশুনে মনে হয়েছে- ‘যাহা বায়ান্ন তাহাই তেপ্পান্ন!’ যাই হোক, সরকার পতনের জন্য সবাই মিলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ধনুর্ভঙ্গ পণ করে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন! এসব জোটবদ্ধদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রাচীন ইতিহাস সবার জানা- ‘একই অঙ্গে এত রূপ মার্কা’! তবু একেকজন একেক রকমের হুংকার দিয়ে যাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাদের শূন্যগর্ভ হুংকারের গর্জনের চেয়ে নানা সমীকরণে ‘মিডিয়া-কাভারেজ’ই বেশি! রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে এটিই বড় এক নিয়ামক। গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের এরূপ ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্নেরও অন্ত নেই। প্রশ্নের চেয়ে এক জাতীয় মানুষের উৎসাহই মাত্রাতিরিক্ত! আর গণমাধ্যম তো বিএনপি সাংসদদের পদত্যাগ, সমাবেশের নামে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ নাম-সর্বস্ব রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নানারূপ ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো! খবর ও খবরের পেছনকার খবর বের করার উদ্যমী প্রচেষ্টাও তাদের নিরন্তর এবং আপসহীন। ফলে নবগঠিত বিভিন্ন ঐক্যের পশ্চাতে যে গভীর ষড়যন্ত্র সক্রিয় তাও কোনো কোনো গণমাধ্যমেরই আবিষ্কার! আজ যারা ডান-বাম-পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণের নানা বর্ণ-গন্ধ-গানের ব্যক্তি একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ তাদের কারো কারো ব্যক্তিত্ব নানা কারণে উজ্জ্বল হলেও রাজনৈতিকভাবে তারা অনুজ্জ্বলই শুধু নন ইতোপূর্বেকার বিভিন্ন নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক পরিত্যক্তও! এদের কেউ কেউ আবার বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগের সময় ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারেও’ তৎপর ছিলেন। তাদের প্রতি এদেশের মানুষের সমর্থনশূন্যতাও প্রমাণিত। তারা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও দেশের জনগণের ভোটের প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে। তাই বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে বর্তমান সরকার উৎখাতের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির অপপ্রয়াসের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করে চলেছে। দেশের মানুষকে সেই জালের ভেতর ফেলে ক্ষমতাচ্যুতরা দীর্ঘদিনের প্রতিশোধ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। এখানে আদর্শ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই- ‘আওয়ামী শাসনের অবসান’ কিংবা ‘শেখ হাসিনার পতনই’ এদের একমাত্র লক্ষ্য। দুঃখজনক, গণতন্ত্রের কথা বলে দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বতন নেতারাও প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশকে বাংলাদেশের ওপর নানারূপ নিষেধাজ্ঞা প্রদানের অনুরোধ ও দেনদরবারে মত্ত! এ কথা সত্য, আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। সাধারণ মানুষও পরিবর্তন চায়। কিন্তু পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘খাল কেটে কুমির আনা’র মতো বোকামিও এদেশের সাধারণ মানুষ করতে চায় না। পরিবর্তনের মাধ্যমে এমন কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো কতটা সঙ্গত হবে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যারা পাকিস্তানের সুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, এমনকি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে! ধিক তাদের! যারা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির হাতের পুতুল! টানা তিন মেয়াদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও সাফল্য ব্যাপক হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির একটি বিরোধী দল সৃষ্টিতে উৎসাহ দেয়নি! সাধারণের মনেও এই আক্ষেপ রয়েছে, স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের অপমান হয়, রাষ্ট্রও অন্তর্গতভাবে লাঞ্ছিত হয়! যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করে না, যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার স্থপতি মনে করে না, ভূলুণ্ঠিত করে চলে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ; তাদের কাছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই বা কতটুকু? আবার এ কথাও সত্য, আজ না হোক কাল ক্ষমতার পরিবর্তন হবেই। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়- কোনো কিছুই চিরস্থায়ী হয় না! কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় গেলে বাঙালির দুঃখটাই চিরস্থায়ী হবে! আশার কথা আওয়ামী লীগও দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নানা তৎপরতা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগেও এসেছে নতুন নেতৃত্ব। দলের ভেতরকার সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর থেকে দলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। এটি একটি শুভ উদ্যোগ বলে আমাদের মনে হয়েছে। কেননা, দলের মধ্যে বিভেদ ও অন্তর্দ্ব›দ্ব কখনো নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় শুভ ফল নিয়ে আসে না। আবার এ লেখা যখন তৈরি হচ্ছে তখন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। আবার লেখা প্রকাশের আগেই হয়তো আওয়ামী লীগ নতুন নেতৃত্বের সমহারে দলের পুনর্গঠন সম্পন্ন করবে। তবু আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এই প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করতে চাই, যখন সেøাগান উচ্চারিত হয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ’ তখন দলের সাংগঠনিক সব পর্যায়ে সৎ, কর্মঠ, যোগ্য এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যমীরা স্থান পাক। যারা নতুন প্রজন্মের মানসিকতা উপলব্ধির মাধ্যমে প্রকৃতই একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন। আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App