মার্কিন তহবিলে ভোগান্তি বাড়বে ইউক্রেনের
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩০ এএম
ছবি: সংগৃহীত
নিজের দেশের প্রায় শতভাগ নাগরিকের জীবন বুলেটের মুখে রেখে খুব গোপনে সাহায্য আনতে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। কঠোর গোপনীয়তায় যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি। এর আগে বাখমুটের একটি রণাঙ্গনের যুদ্ধাবস্থা দেখতে গিয়েছিল জেলেনস্কি। খুব গোপনে সেখান থেকে পোল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্সের একটি বিশেষ বিমানে তিনি ওয়াশিংটনে পৌঁছেন।
ন্যাটোর যুদ্ধবিমান জেলেনস্কিও বিমানকে পাহারা দিয়ে নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলেনস্কিকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশেষ আয়োজন এবং সর্বশেষ তহবিল ছাড়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে দিল যুদ্ধ বন্ধ হোক বা যুদ্ধবিরতি হোক এটা তারা চায় না। এমনকি যুদ্ধ আরো অনেকদিন চলুক- এই ব্যবসা তারা করেই দিল। যে কারণে এর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন বলছে, যুদ্ধটাকে আরো লম্বা করে দিল এই সফরের মাধ্যমে। ইউক্রেনের ক্ষয়-ক্ষতির দায় যুক্তরাস্ট্র এবং জেলেনস্কিকেই নিতে হবে।
অথচ গত এপ্রিলের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির জন্য একটা চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু কিয়েভ তার পশ্চিমা সমর্থকদের কথায় আলোচনার টেবিল থেকে বারবার দূরে সরে চলে গেছে। মস্কো বলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আলোচনাকে লাইনচ্যুত করেছে বারবার। যাতে তারা ইউক্রেনের স্বার্থকে উপেক্ষা করে রাশিয়ার আরো ক্ষতি করতে পারে। আর রাশিয়াকে ক্ষতি করতে গিয়ে তারা ইউক্রেন ও দেশটির জনগণের অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলেছে।
ফেব্রুয়ারিতে কি যুদ্ধবিরতি : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় সরকার ফেব্রুয়ারির কোনো একসময় একটি নতুন শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করতে পারে। ইউক্রেনীয় নেতৃত্ব তার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে প্রথমে যুদ্ধক্ষেত্রে কিছুটা বিজয় অর্জন করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের সরকারের সূত্রের মাধ্যমে তারা এই দাবি করছে। জেলেনস্কি গত
মাসে ইন্দোনেশিয়ায় বৈঠকে থাকা জি-২০ নেতাদের বক্তৃতার সময় একটি শান্তি পরিকল্পনা দিয়েছিলেন। এতে কিয়েভ তার সার্বভৌমত্বের অধীনে বিবেচনা করে এমন কিছু অঞ্চল রাশিয়ান সৈন্যদের থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায়। যদিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সেই সময় বলেছিলেন যে, শর্তগুলো অবাস্তব এবং অপর্যাপ্ত।
সফরের প্রতিক্রিয়া : ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি প্রেস কনফারেন্সের সময় সংঘাতের অবসানের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন, এই শব্দটির অর্থ কী তা তিনি জানেন না। অথচ বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি এবং জেলেনস্কি উভয়ই শেষ পর্যন্ত শান্তি চান। মার্কিনের এই দ্বৈতনীতি রাশিয়ার ভাষায় কৌশলগতভাবে ইউক্রেনের জন্য পরাজয়কে সংকটের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইউক্রেন হলো হাতিয়ার : ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সিযুদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। অথচ রাশিয়া বারবার ইউক্রেনের জনগণের মঙ্গল চেয়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বুধবারের বৈঠকের প্রধান উপাদান হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জেলেনস্কি কেউই রাশিয়ার উদ্বেগের দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছে না।
মস্কোর দৃষ্টিতে, বাইডেন বা জেলেনস্কি কেউই এমন কোন শব্দ উচ্চারণ করেননি যা ইউক্রেনের জনগণের প্রতি মনোযোগ বোঝানো যেতে পারে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র এই সত্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি তার ইউক্রেনীয় সহকর্মীকে ডনবাসের আবাসিক এলাকায় গোলাগুলির বিরুদ্ধে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো পক্ষই শান্তির ডাক দেয়নি।
পেসকভের মতে, যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহ কেবল ইউক্রেনের জনগণের দুর্ভোগকে দীর্ঘায়িত করতে সহায়তা করবে।
দীর্ঘ সংকটে ইউক্রেন : মস্কো বারবার ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের নিন্দা করেছে, সতর্ক করেছে যে তারা রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। একই সাথে, আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে আমেরিকানরা সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি দেখতে চায় না। আন্তোনভ উল্লেখ করেছেন, তারা সংকট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে এবং অত্যধিক কঠোর পদক্ষেপের পরিণতিও তারা জানে। তারা এটাও বুঝতে পেরেছে যে, রাশিয়া ছাড়া বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের উত্তর দেয়া অসম্ভব। খাদ্য সংকট একটি স্পষ্ট উদাহরণ। আর এই সংকট ইউক্রেনকেই দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি বাড়াবে।
ফিরে এসেছেন জেলেনস্কি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি সের্গেই নাইকিফোরভ জানান, জেলেনস্কি দেশে ফিরে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোল্যান্ড হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। ফেরার পথে জেলেনস্কি পোল্যান্ডে একটি সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেছিলেন।