×

মুক্তচিন্তা

বড়দিনের মাহাত্ম্য

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৮ এএম

বড়দিনের মাহাত্ম্য
শুভ বড়দিন! আজ বিশ্বব্যাপী ক্রিসমাস অর্থাৎ বড়দিন মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে। খ্রিস্ট ধর্মমতে স্রষ্টার পুত্র ঈসা মসিহর জন্মদিন সমগ্র খ্রিস্টীয় জগতে তথা পৃথিবীতে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন হয়। বাংলাদেশেও এই দিনটি অনেক আনন্দ ও গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপন করা হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ক্রিসমাস শব্দটি প্রথম বাংলাকরণ করেন ভোলানাথ শর্মা। তার মতে, খ্রিস্টমাসের বাংলা খ্রিস্টাষ্টমী অনেকের কাছেই এই নামটি মনঃপুত হলো না। এরপর কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত খ্রিস্টাষ্টমী নামটি পাল্টে নতুন নামকরণ করলেন ‘বড়দিন’। দুই হাজার বছর আগে এমনি একদিনে কুমারী মাতা মরিয়মের গর্ভে প্রভু ঈসা মসিহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই পৃথিবীর পাপী মানবজাতির পরিত্রাণের জন্যই তার এই পৃথিবীতে আগমন। ঈসা মসিহের জন্মের বিষয়টি তাঁর জন্মেরও শত শত বছর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। মীখা ও ইশাইয়া নবীর পুস্তকগুলোতে আমরা তাঁর জন্ম বিষয়ে জানতে পারি। ঈসা রাজাধিরাজ, প্রভুদের প্রভু। কিন্তু তিনি অতি দীনবেশে দীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যেন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারে। ঈসার জন্মের সুখবর প্রথম পৌঁছাল মেষ চড়ানো মেঠো রাখালদের কাছে। শীতের রাত, আকাশে অজস্র তারার আলোকছটা। পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে, ‘প্রভুর প্রতাপ চারদিকে দেদীপ্যমান হবে চারদিক স্বর্গীয় জ্যোতিতে ভরে উঠবে (লুক ২:৯)। ঈসা মসিহ মানবজাত নন, কিন্তু তিনি স্রষ্টাজাত। জাগতিক নিয়মে তাঁর জন্ম হয়নি। বরং আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকল্পনায় তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই তিনি স্রষ্টাজাত। স্বাভাবিক নিয়মে তিনি ৩৩ বছর এই পৃথিবীতে ছিলেন। যদিও তিনি আগে ছিলেন, বর্তমানে আছেন এবং থাকবেন। এরপর ইহুদি ও রোমান শাসন কর্তাদের ষড়যন্ত্রের ফলে ক্রুশের ওপর বিদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করা হয়। তিন দিন কবরে থাকার পর তিনি পুনরুত্থিত হন এবং আরো ৪০ দিন পৃথিবীতে ছিলেন। হাজার হাজার মানুষকে দেখা দেন এবং এরপর তাদের সামনেই ঊর্ধ্বাকাশে স্বর্গারোহণ করেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের বলে যান- শেষ বিচারের দিনে তিনি আবার আসবেন এবং মানুষের বিচার করবেন। আমরা মসিহ ঈসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি বলে আল্লাহ আমাদের মসিহের সঙ্গে জীবিত করে মসিহের সঙ্গেই বেহেস্তে বসিয়েছেন। তিনি এই কাজ করেছেন যেন তিনি তাঁর অতুলনীয় অশেষ রহমত আগামী যুগ যুগ ধরে দেখতে পারেন।’ ঈসা আমাদের স্রষ্টার সঙ্গে এক করে দিয়েছেন। বিশ্বাসের মাধ্যমে এখনো আমরা তাঁর সঙ্গে ও স্রষ্টার সঙ্গে একাকার। প্রতিশ্রæত মুক্তিদাতার আগমন পৃথিবীতে শান্তি, একতা, মিলন ও ভালোবাসার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তাঁর জন্মের দুই সহস্র বছর পরও আমাদের সমাজে শান্তি নেই, ক্ষমা নেই, মিলন ও ভালোবাসা নেই। পারস্পরিক হিংসা, অহংকার, স্বার্থপরতা, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি হামলা ও যুদ্ধ সর্বদা বিরাজমান। আজ তাঁর জন্মের শুভবারতা এই ব্যর্থতার মধ্যে সফলতার আভাস। ব্যর্থতা আসবেই, তবে সফলতাই জীবনের পূর্ণতা। তিনি হতাশা-নিরাশা, অশান্তি আর ব্যর্থতার মধ্যে আশা ও শান্তির বাণী শোনাতে এসেছেন। তাঁর আগমন আনন্দ ও পূর্ণতা দিতে। তাঁর জন্ম আজ আমাদের আহ্বান করছে যেন হতাশা থেকে আশা, অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোতে আর পাপের জরাজীর্ণতা থেকে ক্ষমা, মিলন ও ভালোবাসার রাজ্যে পদার্পণ করতে পারি। পরস্পরের কাছে ও আল্লাহর কাছে আমরা যেন উপহার হয়ে উঠতে পারি। তবেই মসিহর জন্মোৎসব বড়দিন হবে সার্থক, সুন্দর, পবিত্র ও মিলন, সুখ ও আনন্দের। এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ শিক্ষক ও গবেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App