×

সারাদেশ

গোমস্তাপুরে ঋণ পরিশোধ করেও কৃষক কারাগারে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫৪ এএম

গোমস্তাপুরে ঋণ পরিশোধ করেও কৃষক কারাগারে!

ছবি: ভোরের কাগজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের বালুগ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন ব্যাংক ঋণের পুরো টাকাই পরিশোধ করেও গত ৩দিন (রবিবার পর্যন্ত) যাবত কারাগারে রয়েছেন। তার বন্ধকী দায়মুক্তির দলিল সম্পাদনও করে দিয়েছে ব্যাংক। তারপরও ব্যাংকের মামলায় এখন তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। যদিও ব্যাংক ম্যানেজার বলেছিলেন টাকা পরিশোধ করলেই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা করেনি।

গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় তাকে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) নাচোল থেকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, আফজাল হোসেন ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেঅথর্নশ লিমিটেডের রহনপুর শাখা থেকে তার এবি কৃষি খামারের ওপর ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। ওই টাকায় তিনি জমিতে আম, পেয়ারা ও পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন।

কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঋণের কিস্তি সঠিকভাবে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান। তারপরও তার নামে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চারটি মামলা করা হয়। তখন ব্যাংকের মোট দাবি ছিল ২২ লাখ টাকা। এদিকে মামলার পর আফজাল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এ সময় ব্যবস্থাপক আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ঋণ পরিশোধ করলে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। ওই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করে ও বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকের সব পাওনা পরিশোধ করেন। সুদ ও মামলার খরচসহ তার কাছ থেকে ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা আদায় করা হয়। যদিও ব্যাংক ২২ লাখ টাকার দাবিতে মামলা করেছিল। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওই টাকা আদালতের মাধ্যমে না নিয়ে সরাসরি ব্যাংকে জমা নেন।

এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গোমস্তাপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে তাকে বন্ধকী দায়মুক্তির দলিল নিবন্ধন করে দেয়। কিন্তু এখনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। বিষয়টি এর আগে কৃষক আফজাল হোসেন জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে তার ভোগান্তির কথা জানালে, তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি।

কৃষক আফজাল হোসেনের গ্রেপ্তারের খবর শুনে জেলা প্রশাসক জানান, এটা ব্যাংকের বেনিয়াসুলভ আচরণ।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, তিনি নিজেই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন, যে তারা ব্যাংক টাকা পেয়েছে-এ মর্মে কাগজপত্র আদালতে দাখিল করুক। তারপর মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক হিসাবে তিনিও আদালতকে অনুরোধ করবেন।

জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান বলেন, যে কষৃক একবার ঋণের টাকা শোধ করে দিয়েছেন। তিনি কেন শুধু মামলা নিষ্পত্তির জন্য পুনরায় টাকা জমা দিবেন। আর এতো টাকা এই কৃষক পাবে কোথায়? এই দায়ভার ব্যাংকেই নিতে হবে। তিনি আইনের ধারা ব্যাখ্যা করেও ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেছিলেন। কৃষককে একই ঋণের টাকা দ্বিতীয়বার জমা দিতে তারা বাধ্য করতে পারে না। তবে কৃষক আফজাল হোসেনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জেলা প্রশাসক দুঃখ প্রকাশ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App