×

জাতীয়

করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ: আগ্রহ কম আস্থায়ও সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪০ এএম

করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ: আগ্রহ কম আস্থায়ও সংকট

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি রেখেই দেশে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার ৪র্থ ডোজ দেয়া। ২০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে জনগণের সাড়া নেই। প্রচার প্রচারণায় ঘাটতি এবং এই কাজের জন্য সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি না করেই টিকার ৪র্থ ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কম হলেও এই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ খুব একটা নেই। এদিকে সম্প্রতি ফাইজারের মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ৪র্থ ডোজে ব্যবহৃত হচ্ছে- এমন খবর টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে বিমুখ করছে।

দেশে টিকায় আগ্রহ কম থাকায় এর আগেও বিভিন্ন জেলা থেকে টিকা ঢাকায় পাঠানোর নজির আছে। ধীরে ধীরে সেই সংকটও কেটে গেছে। এবারো তেমনটাই হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

৪র্থ ডোজের কর্মসূচির উদ্বোধনের দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, ৪ কোটি মানুষ ৪র্থ ডোজ নেয়ার উপযোগী। আপাতত ৫টি ক্যাটাগরিতে এই টিকা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে উদ্দিষ্ট মানুষ আছে ৮০ লাখ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, ৩য় ডোজ পাওয়ার পর ৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে এমন ব্যক্তিরা টিকার ৪র্থ ডোজ নিতে পারবেন। ষাটোর্ধ্ব, সম্মুখসারির যোদ্ধা ও কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন, গর্ভবতী মহিলা এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের ৪র্থ ডোজের টিকা দেয়া হবে।

টিকায় মানুষের আগ্রহে ভাটার বিষয়টি স্বীকার করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ধীরে ধীরে টিকা কেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়ানো হবে প্রচার প্রচারণা। সুরক্ষা অ্যাপের কাজটিও আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হবে। এরপর মানুষের আগ্রহও বাড়বে।

দেখা গেছে, সুরক্ষা অ্যাপে ৪র্থ ডোজের বিষয়ে কোনো অপশন না থাকায়, টিকা নিতে আসা? মানুষের নিবন্ধন কপির (পুরনো কপি) এক সাইডে টিকা কর্মীরা সিল দিয়ে স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন। যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের নাম ও নিবন্ধন নম্বর একটি খাতায় লিখে রাখছেন।

সুরক্ষা অ্যাপ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, সুরক্ষা অ্যাপটি তৈরি হতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। সেজন্যই আমরা কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছি। বিষয়টি টেকনিক্যাল। যারা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা আমাদের জানিয়েছেন কাজটি শেষ হতে আরো এক মাস সময় লাগবে। তখন আমাদের কাজের গতিও বাড়বে। আমাদের মনে রাখতে হবে ৪র্থ ডোজ টিকা সবাইকে দেয়া হচ্ছে না। সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী আগ্রহীরা টিকা নেবেন।

টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের অনাগ্রহের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, এ কথা সত্য। সংক্রমণ ও মৃত্যু এখন কম। মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছেন। তাই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ নেই। তবে আস্তে আস্তে টিকাগ্রহীতার আগ্রহ বাড়বে।

সম্প্রতি ৪র্থ ডোজে মেয়াদোত্তীর্ণ ফাইজারের টিকা ব্যবহার হচ্ছে এমন তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে এতে কোনো সংশয় নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তারা জানান, ফাইজারের টিকার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত থাকলেও তা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল এডভাইজারি কমিটি (নাইট্যাগ) ও যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অনুমোদনের ভিত্তিতেই ফাইজারের এ টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

ডা. শামসুল হক বলেন, ফাইজার গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে যখন টিকা সরবরাহ করে, তখন তারা বলেছিল এর মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু তারা নভেম্বরে এসে জানায় টিকার মেয়াদ আরো ৩ মাস বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে প্রথমে আমরা নাইট্যাগের কাছে যাই। নাইট্যাগ টিকার মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

এরপর ডিজিডিএও এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়। গত ২০ নভেম্বর আমরা বিষয়টি এক চিঠির মাধ্যমে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সব সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জেলা ইপিআই সুপারিনটেন্ডেন্টকে জরুরি ভিত্তিতে জানিয়ে দিয়েছি।

টিকা কার্যক্রমের সার্বিক বিষয় নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে কোভিড টিকাদান কার্যক্রম চলছে। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। তাই ৩য় ডোজের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। এরই মধ্যে টিকার ৪র্থ ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। তবে যারা ফ্রন্টলাইনার, অসংক্রামক বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এবং যারা ৩য় ডোজ নিয়েছেন তাদের ৪র্থ ডোজ নেয়া দরকার। কারণ টিকা কাউকে আজীবন সুরক্ষা দেবে না। ফলে ঝুঁকি না নিয়ে যারা ৩য় ডোজ নিয়েছেন তাদের ৪র্থ ডোজ নিয়ে নেয়াই ভালো।

টিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও টিকা দেয়া প্রসঙ্গে এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, এটি টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বলতে পারে যে টিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও তা কতদিন পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। সাবধানতার জন্য মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখটা একটু এগিয়ে আনা হয়। কিন্তু অধিকাংশ টিকায় এক্ষেত্রে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App