×

স্বাস্থ্য

শীতের পর আসতে পারে সংক্রমণের নতুন ঢেউ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১৩ এএম

শীতের পর আসতে পারে সংক্রমণের নতুন ঢেউ

ছবি: সংগৃহীত

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ দিন ধরেই ১ শতাংশের নিচে রয়েছে সংক্রমণের হার। দৈনিক মৃতের সংখ্যাটিও প্রায়ই থাকছে শূন্যের ঘরে। তারপরও চলমান রয়েছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম। ২০ ডিসেম্বর থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে চতুর্থ ডোজ। সার্বিকভাবে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বস্তির। তবে করোনার নতুন উপধরন ওমিক্রন বিএফ.৭-এর কারণে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ আবারো বাড়ছে।

এসব দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল। ভারতের অবস্থাও উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাই নড়েচড়ে বসেছে মোদি সরকার। ইতিমধ্যে দেশটিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে ভিড় হয়, এমন জায়গায় মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বুস্টার ডোজ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সম্প্রতি এএফপি ও রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে চীন। রোগীদের ভিড়ে চাপে রয়েছে হাসপাতালগুলো। কবরস্থানগুলোতে দেখা গেছে মরদেহের সারি। ২০২০ সাল থেকে ‘শূন্য করোনা নীতির’ আওতায় চীনে কঠোর বিধিনিষেধ চলছিল। সম্প্রতি ওই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায়ও নেমেছিলো দেশটির অনেক শহরের বাসিন্দারা। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে বেশির ভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় চীন সরকার। তার পর থেকেই দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।

২১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, চীনে বর্তমানে যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে ডব্লিউএইচও খুবই উদ্বিগ্ন। ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে করোনার টিকা দেয়ায় চীনকে সহায়তা করছে সংস্থাটি। এছাড়া দেশটির জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়ে যাবে ডব্লিউএইচও। এমন পরিস্থতিতে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে- তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে যে টিকা দেয়া হচ্ছে তা ওমিক্রণের মতো ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। টিকা গ্রহণের হারও অনেক বেশি। ফলে আপাতত খুব বেশি একটা ঝুঁকি নেই। তবে শীতকাল চলে গিয়ে গরম পড়তে শুরু করলে কোভিডের সংক্রমণ বাড়তে পারে। সংক্রমণের নতুন একটি ওয়েভ (ঢেউ) আসতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, এখন নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে। তাই রোগীও কম।

চীনসহ বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়ার প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, চীনে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হলো দেশটির মানুষ সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে ছিল না। সেখানে টিকা গ্রহণের হার খুব কম। প্রবীণদের টিকা গ্রহণের হার অত্যন্ত কম। এছাড়া চীনের যে নিজস্ব টিকা, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ওই টিকার সক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ ছিল। ভারতে কয়েকটি এলাকায় ওমিক্রণের নতুন ধরনের সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। তাতে আমাদের দেশের কিছুটা ঝুঁকিত থাকেই। তবে ভারত থেকে যে তথ্য আমরা পাচ্ছি তাতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ভ্যাকসিনেশন এবং ন্যাচারাল ইনফেকশন প্রটেকশন যা রয়েছে, নতুন ওই ধরনটি থেকে তা সুরক্ষা দিতে সক্ষম। ধারণা করছি, আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও তেমনটি হবে। তাতে খুব একটা ভয়ের কারণ আপাতত দেখছি না। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সিকোয়েন্সিং বাড়াতে হবে। প্রতিটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে রুটিন সার্ভিলেন্স করা জরুরি।

সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, শীতের পর গরম কালে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। সেদিক দিয়ে আমরা সুরক্ষিত। বর্তমানে সংক্রমণ ১ শতাংশেরও কম। তবে সংক্রমণ আবার বেড়েও যেতে পারে। আরেকটা ওয়েব শুরু হতে পারে। তবে সেই ওয়েবটা কখন হবে তা বলা মুশকিল। পূর্ব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, শীতকালে আমাদের দেশে কোভিডের সংক্রমণ কম থাকে। কারণ শীতকালে কিছু ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে যারা কোভিডকে বাড়তে দেয় না। আগামীতে গরম যখন পড়তে শুরু করবে তখন কোভিডের এই সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং মাস্ক পড়ার অভ্যাসটা আমাদের আবার করতে হবে।

আর ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের এখানে শীতকালে হয়তো সংক্রমণ বাড়বে না কিন্তু শীত বিদায় নেয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে সংক্রমণ বাড়ার একটা আশঙ্কা আছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। এটি ভালো দিক। তবে সংক্রমণকে জয় করার মতো টিকা এখনো আবিস্কৃত হয়নি। করোনা হবেই। তবে টিকা নেয়ার ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম হবে। তবে যারা বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছেন এবং টিকা নেননি তাদের ঝুঁকি রয়েই গেছে। সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতলে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App