×

সারাদেশ

বাঘায় আ’লীগ ও বিএনপি নেতা বহিষ্কার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৪৮ পিএম

বাঘায় আ’লীগ ও বিএনপি নেতা বহিষ্কার

রাজশাহীর বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র আক্কাছ আলী ছবি: ভোরের কাগজ

রাজশাহীর বাঘা পৌরসভায় অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনের অংশ নেওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র আক্কাছ আলী ও বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আগামী ২৯ ডিসেম্বর বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই নেতা। ওই দুই দলের নেতারা জানিয়েছেন,দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করায় তাদের বহিস্কার করা হয়েছে।

গত ২১ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক পত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলীর বহিষ্কার আদেশ বিষয়ে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সিন্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক জেলা কমিটির সদস্য আক্কাছ আলীকে সকল পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তে আদিষ্ট হয়ে পত্র প্রেরণ করা হলো।

আক্কাছ আলী বলেন, ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করছি। তাই তৃণমূলের দাবির কাছে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কোন চিঠিই পাইনি। দলীয় গঠনতন্ত্র মতে জেলা কমিটি রেজুলেশন করে কেন্দ্রে পাঠাবে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক চিঠি দিয়ে জানাবে।

অপরদিকে, গত ২১ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক পত্রে বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেনকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে কামাল হোসেনকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাইফুল ইসলাম টিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে কামাল হোসেন জানান, বহিষ্কার সংক্রান্ত কোন চিঠি পত্র আমি পাইনি।

জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির ওই দুই নেতাসহ চলতি বছর পর্যন্ত ১১ বছরে দুই দলের ১১জনকে বহিষ্কার করা হলো।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে আড়ানি পৌরসভার উপ নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলামের বিপক্ষে নির্বাচন করায় বিদ্রোহী প্রার্থী তোজাম্মেল হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে নজরুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে ওই পৌর সভায় মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পান তোজাম্মেল হক। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন, সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম। পরে তাকেও বহিষ্কার করা হয়। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেনের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নেন উপজেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাউসা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পান শফিকুল ইসলাম। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নুর মোহাম্মদ তুফান। চকরাজাপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী ডিএম বাবুল মনোয়ার এর বিপক্ষে নির্বাচন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিজুল আযম। দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক তাদের বহিষ্কার করা হয়। বাউসা ইউনিয়নে নুর মোহাম্মদ তুফান ও চকরাজাপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ডিএম বাবুল মনোয়ার।

এছাড়া ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত আড়ানি পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীদুজ্জামানের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তার আলী।

পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন জানান, মুক্তার আলী ও ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৪জনকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী।

তবে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল আযম জানান, বহিষ্কার প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুল হাসান বাবলু বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করছে না। কিন্তু দলীয় সিন্ধান্ত উপেক্ষা করে বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন বাঘা পৌর সভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টি অবগত হয়ে তাকে বহিষ্কার করেছে।

অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই সে অটো বহিষ্কার হয়ে যায়। এর পরেও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার স্বাক্ষরিত পত্রে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী আক্কাছ আলীর বহিষ্কারের বিষয়টি পরিস্কার করে জানানো হয়েছে। এর আগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তারা দলীয় কোন পদে থাকতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App