×

মুক্তচিন্তা

ফুটবল জাতীয়তাবাদ ফুটবল ফ্যাসিবাদ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৩ এএম

ফুটবল জাতীয়তাবাদ ফুটবল ফ্যাসিবাদ

তার আগে ফুটবল এবং উপনিবেশবাদ নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অভিজ্ঞতার ওপর খানিকটা আলোকপাত করা যাক। ফুটবল কোনোভাবেই ভারতীয় খেলা নয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈনিক ও রাইটার এবং ইউরোপীয় খ্রিস্টান মিশনারি স্বদেশ ছেড়ে আসার সময় অনেক কিছু ফেলে এলেও সংস্কৃতিটা বহন করে এনেছেন। তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ ফুটবল। এটাও সত্য চতুর্দশ শতকের ইংল্যান্ডে ফুটবলের বাড় এতটাই বেড়েছিল যে ১৩ এপ্রিল ১৩১৪ রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড বিলেতি বণিকদের অভিযোগের কারণে ফুটবল খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। ফুটবল সহিংসতা এবং ফুটবলের কারণে অন্য খেলার প্রতি মনোনিবেশের ঘাটতি কমাতে রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ১৩৮৯ সালে এবং চতুর্থ হেনরি ১৪০১ সালে পুনরায় ফুটবল নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন। রাষ্ট্রের আগ্রহ ছিল আর্চারির প্রতি। সফল তীরন্দাজদের রণক্ষেত্রে দক্ষ সৈনিক হিসেবে কাজে লাগানো যেত কিন্তু রণক্ষেত্রে ফুটবল খেলোয়াড়ের অবদান রাখার সুযোগ কোথায়? ফুটবল স্কটল্যান্ডে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হয়, ফ্রান্সেও। ১৮৩৫ সালে ব্রিটেনে হাইওয়ে অ্যাক্ট জারি করা হলে জনগণের ব্যবহার্য রাস্তায় ফুটবল খেলা নিষিদ্ধ করা হয়। সশস্ত্র সৈন্য নামিয়েও ফুটবল খেলা ভণ্ডুল এবং খেলোয়াড়দের প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটবল তারপর আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, পৃথিবীর সব দেশেই ফুটবলের প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ খেলাগুলোতে দর্শক থাকে উপচে পড়া। টেলিভিশনে ঘরে ঘরে লাইভ ফুটবল প্রতিযোগিতা চলার পরও টিকেট না পেয়ে ক্ষুব্ধ জনতা রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে দেয়। ফুটবল দেখতে গিয়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে ও বাইরে বহু দর্শক প্রাণ হারিয়েছেন। খেলোয়াড়ের মৃত্যুও ঘটেছে। বিশ্বকাপে আকস্মিকভাবে নিজেদের জালে বল ঢুকিয়ে দেয়ায় এসকোবারের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে নোংরা ভারতীয়রা যেন সাদা সাহেব ও সাদা বেগমদের চেয়ে একশত হাত দূরে (পাঁচ টনি, সাত টনি ট্রাকের পেছনে যেমন লেখা থাকে- ১০০ হাত দূরে থাকিবেন) এমনটাই ছিল ফরমান। অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদ ও জাতের বৈষম্য এই সংকটকে আরো ঘণীভূত করে রেখেছে। ছুঁলেই জাত যাবে জাত এমনই ছেলের হাতের মোয়া। ঔপনিবেশিক শাসক ও শাসিতের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত হলেও অনিবার্য ছোঁয়াটা প্রথম লাগিয়েছে ফুটবল। একটি উদাহরণ : ব্রিটিশ ভারতে ৫২তম শিখ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স যখন ফুটবল টিম গঠন করল, ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে যোগ্য ও মোটামুটি যোগ্য মিলিয়ে সাদা সাহেব খেলোয়াড় পাওয়া গেল ৭ জন। বাকি ৪ জন আসবে কোত্থেকে? ব্রিটেন থেকে আনানো চার থেকে ছয় মাসের ঝক্কি। কিন্তু কোম্পানি কি সেই সাদা মানুষের আসা-যাওয়া থাকার খরচ দেবে? খাবার খরচ? চাকরিবাকরি? ব্রিটেন থেকে আনানোর মতো অবাস্তব প্রস্তাব আর হতে পারে না। সুতরাং ‘ইন্ডিয়ান সিপয়’- ভারতীয় সেপাইদের মধ্য থেকে ৪ জন ভালো খেলোয়াড় বেছে নাও। সাদায় বাদামিতে বেশ একটা দল হয়ে গেল। দেখা গেল ফুটবলের কারণে নিচু জাতের সেপাইও ব্রাক্ষণ্যবাদের নিকুচি করে রাজার সঙ্গে হাতে হাতে পায়ে পায়ে খেলতে শুরু করল। সাদার জাত গেল না, এমনকি কিছুটা গিয়ে থাকলেও প্রায়শ্চিত্ত করতে হলো না। একেবারে আক্ষরিক অর্থে ফুটবলকে দূরত্বনাশক না বললেও দূরত্ব সংকোচক বলতে আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই। উনবিংশ শতকে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ব্রিটিশ সৈন্য ছিল ৬৫ হাজার আর ভারতীয় সৈন্য ১ লাখ ২০ হাজার। সে সময় ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের কমান্ডার মেজর জেনারেল হারকোর্ট মর্টিমার বেনাফ বলেছেন ভারতীয়দের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জোরদার করতে সবার আগে তাদের নিয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফুটবল খেলতে হবে, তাতেই ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব হ্রাস পাবে। ১৯৩৮ বিশ্বকাপ ফুটবলে ইতালির ফ্যাসিস্ট স্যালুট কমান্ডার ফুটবলকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং নেটিভদের ক্রিকেট ও হকির প্রতি আকৃষ্ট করার কথাও বলেছেন। উনবিংশ শতকের শেষার্ধে এবং বিংশ শতকের প্রথমার্ধে সাদা অধ্যুষিত কোনো ফুটবল দলকে ভারতীয় কোনো দল হারাতে পারলে সগর্বে মনে করা হতো এতদিন আমরা পলাশীর প্রতিশোধ নিতে পারলাম। তার মানে একদিকে বর্ণবাদের কালো দেয়াল অপসারণের চিত্র উঠে এলেও পাশাপাশি ফুটবল একটি জাতীয়তাবাদী জাগরণও সৃষ্টি করেছে। এই জাগরণের চিত্রটি বহু বিচিত্র। অতিজাতীয়তাবাদ বা ফ্যাসিবাদের দিকেও এই আবেগ মোড় নিয়েছে। একেবারে দেশীয় খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে ১৮৮৯ সালে গঠিত মোহনবাগান স্পোটিং ক্লাব শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং ১৯০৭ সালের ‘ট্রেডস কাপ’-এর প্রিলিমিনারি রাউন্ডের খেলায় ব্রিটিশ ফুটবল টিম ডালহোসি বি দলের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল। হেরে গেলে মানবে না, গোল খেলে হজম করতে পারবে না এমন দল ও দলের সমর্থকের কোনো কমতি ঢাকাতেও নেই। ডালহোসির সাদা খেলোয়াড়রা আর কুলিয়ে উঠতে না পেরে মোহনবাগানের সামনের খেলোয়াড়দের ল্যাং ও লাথি শুরু করে এবং একই সঙ্গে ঘুষিও চালায়। মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা দাঁত কামড়ে মেনে নিলেও তাদের সমর্থকরা প্রিয় খেলোয়াড়ের পা ভাঙার দৃশ্য গ্যালারিতে বসে দেখতে রাজি নয়। সুতরাং আক্রমণাত্মক হয়ে তারাও মাঠে নেমে পড়ল। ১৮৫৭-ও সিপাই বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করে থাকলেও ব্রিটিশদের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল ভারতীয়রা চটে গেলে তাদের সবংশ নিপাত করে দিতে পারে। সুতরাং মাঠের সাদা রেফারি খেলা বাতিল ঘোষণা করে দ্রুত ডালহোসির খেলোয়াড়দের সাজঘরে পাঠিয়ে তাদের ফুটবল জীবন বাঁচালেন। নতুবা ক্ষিপ্ত দর্শক তাদেরও হাত-পা ভেঙে কিছুটা হলে পলাশীর প্রতিশোধ নিত। ১৯১১ সালে মোহনবাগানের বুটহীন ফুটবলাররা ব্রিটিশ রাইফেল ব্রিগেড দলের স্পাইক লাগানো বুটপরা খেলোয়াড়দের হারিয়ে দিল। এ খেলার সাক্ষী ৪০ হাজার দর্শক। আরো বেশি দর্শকের উপস্থিতিতে একই বছর আইএফএ শিল্ডের সেমিফাইনালে খালিপায়ের মোহনবাগান বুটপায়ের ব্রিটিশ সেনাবাহিনী দলকে হারিয়ে ‘বেয়ারফুটেড ব্রেইভ বেঙ্গলি’ খেতাব পেল ইংরেজদের পত্রিকার পাতায়, ভারতে ও বিলেতে। ২৯ জুলাই ১৯১১ মূলত পূর্ব বঙ্গের খেলোয়াড় অধ্যুষিত মোহনবাগান স্পোর্টি ক্লাব আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ব্রিটিশ ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে দিলে ‘দ্য ইংলিশম্যান’ পত্রিকা লিখল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস যা পারেনি বাংলার মোহনবাগান তাই করে দেখাল। এই বিজয়ের পরই ‘পলাশীর প্রতিশোধ’ বহুল আলোচিত হয়ে উঠল।

ফুটবল ইতিহাস রচনা করে ৪ জানুয়ারি ১৯৫৯। কঙ্গো তখন ১৮৮৫ থেকে নামে ফ্রি স্টেট হলেও বেলজিয়ামের উপনিবেশ। ফুটবল খেলা চলছিল লিউপোল্ডভিল শহরের একটি স্টেডিয়ামে। খেলাতে গোলযোগ হলো। জোসেফ কাসাভুবোর দলের নির্ধারিত সভা ছিল সেদিন। স্টেডিয়ামের উত্তেজিত দর্শক আরো ক্ষুব্ধ হলো যখন শুনল বেলজিয়াম সরকার সভা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা শুরু করল পুলিশ এবং সরকারি লোক পেটানো। দাঙ্গা বেধে গেল। ফুটবলের দর্শক সমস্বরে চিৎকার করল ‘ডিপান্ডাল’। এই শব্দটির মানে স্বাধীনতা। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকল। গোটা ১৯৫৯ অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটল। যে কোনো সময় দাঙ্গা বেধে যায় এমন অবস্থা। অক্টোবরে প্যাট্রিস লুমুম্বাকে গ্রেপ্তার করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বেলজিয়াম কঙ্গোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে চায়। কঙ্গো প্রত্যাখ্যান করে। শেষ পর্যন্ত ৩০ জুন ১৯৬০ কঙ্গো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতার প্রথম সেøাগান দিয়েছিল ফুটবল প্রেমিকরা। ‘ডিপান্ডাল’! বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই- কাতার বিশ্বকাপ থেকে কি ইরানে নারী স্বাধীনতার ডাক আসছে না? সে আহ্বানে সরকার সাড়া দিতে ‘নীতি পুলিশ’ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফুটবলের ভাষাই কখনো কখনো হয়ে উঠে দেয়ালের লিখন, সে লিখন বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারলে ক্ষতির আশঙ্কা কম। নতুবা ক্ষমতাসীনদের আম ও ছালা উভয়ই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ফুটবল ফ্যাসিবাদের প্রথম বলি হতে যাচ্ছিল স্বয়ং ফুটবল। ১৯২১ সালে ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন হলো। তাদের জাতীয়তাবাদ এত তীব্র যে ‘ভোলাটা’ নামের একটি কোড ব্যবহার করে ফুটবলকে ইতালি থেকে চিরতরে নির্বাসিত করার সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হলো। যেসব খেলা ইতালিতে সৃষ্টি হয়নি তা ইতালিতে খেলা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফ্যাসিস্ট আদর্শ হচ্ছে বিদেশি সংস্কৃতি থেকে গা বাঁচিয়ে চলা। সুতরাং ইতালি থেকে নির্বাসিত হবে ইংলিশ ফুটবল এবং আমেরিকান রাগবি। তবে ইতালি ভোলাটা দীর্ঘ মেয়াদি হয়নি এবং মুসোলিনী সরকার দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পর্যন্ত টিকে থাকলেও ফুটবলের নির্বাসন দিতে পারেনি। ১৯৩৮-এর বিশ্বকাপ ফুটবল ইতালিতেই হয়। নাৎসি কায়দায় স্যালুট দিয়ে ইতালি দল বিতর্কিত হলেও কাপটা ঠিকই জিতে নেয়। চরম ফ্যাসিবাদের নগ্ন চেহারাটি তুলে ধরেছেন এদুয়ার্দো গালিয়ানো। ৯ আগস্ট ১৯৪২ জার্মানি অধিকৃত ইউক্রেন (রাইরসকামিশারিয়েট ইউক্রে) কিয়েভ শহরের একটি দুর্ভাগ্যজনক ফুটবল ম্যাচ বিশ্বজুড়ে ডেথ ম্যাচ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইউক্রেনের দলটির নাম ডায়নামো কিয়েভ। অধিকৃত অঞ্চলে নাৎসি নিয়ন্ত্রণাধীন একটি রুটির কারখানায় তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এই রুটি জার্মান সৈনিকদের সরবরাহ করা হতো। তাদের খেলোয়াড়রা সামান্য খাবার পেত, প্রায় সবাই ছিল আন্ডার নারিশড পুষ্টিহীনতায় ভোগা, অধিকৃত শহরে সার্বক্ষণিক আতঙ্কে তাদের দিন কাটছিল। জার্মান সৈনিকদের দল ফ্লাকেলফ ফুটবল দলের বিরুদ্ধে সেদিন তাদের খেলতে বাধ্য করা হয়। টিকেটপ্রতি ৫ রুবল দাম দিয়ে ২০০০ দর্শককেও আসতে হয়। খেলায় প্রায় অভুক্ত কিয়েভ দল ৫-৩ গোলে জার্মানদের হারিয়ে দেয়। প্রথমার্ধের বিরতির পর জার্মান সেনা কর্মকর্তা চেঞ্জিং রুমে এসে কিয়েভের খেলোয়াড়দের সর্তক করে দেন যদি তোমরা জিততে চেষ্টা কর পরিণতি খারাপ হবে। জার্মানদের জিততে দাও। দ্বিতীয়ার্ধে একজন কিয়েভ খেলোয়াড় জার্মানদের গোলপোস্ট পর্যন্ত বল এলেও গোলে না ঢুকিয়ে আবার মধ্যমাঠে পাঠিয়ে দেয়। বিজয়ের খেসারত দিতে হয় ডায়নামো কিয়েভকে। কমিউনিস্ট হিসেবে বহুল পরিচিত একজন খেলোয়াড়কে জার্মানরা সেদিনই গুলি করে হত্যা করে। বাকিদের শ্রম শিবিরে পাঠায়। শেষ পর্যন্ত তিন থেকে পাঁচজন বেঁচে যান। যে খেলোয়াড় মধ্য মাঠে বল পাঠিয়ে ছিল, যুদ্ধের পর তাকে জার্মান চর সন্দেহ করে স্ট্যালিনের শ্রম শিবিরে নিক্ষেপ করা হয়। এই বর্ণনায় বাড়াবাড়ি থাকতে পারে, কিন্তু বিজয়ের চড়া মূল্য দেয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। ২০০৬-এর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ওরহান পামুক ফুটবল জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদেও চিত্র তুলে ধরেছেন : ‘সাবেক পর্তুগিজ স্বৈরশাসক (এন্টোনিও) সালাজার তার দেশ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ফুটবলকে ব্যবহার করতেন। তিনি ফুটবলকে জনগণের জন্য আফিম বিবেচনা করতেন- এটাই শান্তি রক্ষা করার পথ। আমাদের দেশে যদি তেমনটা হতো, ভালোই হতো। এখানে ফুটবল আফিম নয়, বরং জাতীয়তাবাদ উৎপাদনের একটি যন্ত্র বিদেশিদের ঘৃণা করার এবং একচ্ছত্রবাদী চিন্তার উৎস। আমি অবশ্য এটাও বিশ্বাস করি যে বিজয় নয়, পরাজয়ই জাতীয়তাবাদকে এগিয়ে দেয়।… জার্মানিতে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে আমাদের খেলোয়াড়রা জিততে না পেরে সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়দের আক্রমণ করেছে। বিশেষ করে যেভাবে তুরস্কের সংবাদপত্রগুলো এ নিয়ে পরে লেখালেখি করেছে, তা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। তুরস্কের ফুটবল দল যে বাছাইয়ে টেকেনি তার দায় ঠেলে দেয়া হয়েছে রেফারি ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রের ওপর। ব্যাপারটা ভয়াবহ। তুরস্কের ফুটবল এখন জাতির কাজে লাগে না, লাগে জাতীয়তাবাদের।’ জনতার বিনোদনই হোক শাসকের হাতিয়ারই হোক ফুটবল নিজস্ব জাদুতে সব ক্রীড়া ও বিনোদনের শীর্ষস্থানে অব্যাহত কর্তৃত্ব করে যাচ্ছে।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App