×

সারাদেশ

পাহাড়ে মিশ্র চাষে তুলা উৎপাদন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৫৬ পিএম

পাহাড়ে মিশ্র চাষে তুলা উৎপাদন

ছবি : ভোরের কাগজ

পাহাড়ে মিশ্র চাষে তুলা উৎপাদন

পাহাড়ে তুলা চাষের মাধ্যমে ভাগ্য বদল হবে বাংলাদেশের

পাহাড়ের উঁচু নিচু ঢাল বেয়ে সবুজের সমারোহ। এক সময় প্রকৃতির ফসল শুধু কাঠ, বাঁশ ও জুমের উপর নির্ভর করে চলতে হতো এখানকার অদিবাসীদের। জুম চাষের মাঝে জুমিয়ারা একই সঙ্গে ধান, সবজি, তিল-তিশি, হলুদ -আদা- র পাশাপাশি জুম তুলা উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকি অংশ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। জুমচাষে উৎপাদিত তুলা থেকে সুতা ও সেই সুতা দিয়ে নিজেদের পিনন (ব্যবহৃত কাপড়) বুনাতো।

কালের বিবর্তনে জুম থেকে তুলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এরি মাঝে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত তুলা চাষ বৃদ্ধি ও কৃষকদের দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের আওতায় পাহাড়ের পতিত অনাবাদি জমিতে তুলা চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড। তুলা চাষ বৃদ্ধি ও কৃষকদের দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়িত সম্ভব হলে পাহাড়ের তুলা চাষের মাধ্যমে ভাগ্য বদল হবে বাংলাদেশের।

খাগড়াছড়ি জেলা র তুলা উন্নয়ন বোর্ড সহকারী কটন ইউনিট অফিসার সোহাগ চাকমা জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক উদ্ভাবিত সিবি-১২, সিবি-১৩ ও সিবি-১৪ জাতের তুলাবীজ সারা দেশে চাষ করা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি বীজ কোম্পানি কর্তৃক আমদানিকৃত হাইব্রিড বীজ (রূপালি-১, সৌরভ, ডিএম-২ প্রভৃতি) বর্তমানে পার্বত্যাঞ্চলে চাষ হচ্ছে। জাত ভেদে তুলার বীজ ১৫ জৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত পাহাড়ে বপনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে সমতলে ৩০ শ্রাবণ পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে। হাইব্রিড জাত আগাম বপন করা উত্তম।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জাতের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ১.৫০ কেজি এবং হাইব্রিডের ক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের আগে তুলাবীজ ৩-৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে শুকনো মাটি বা ছাই দিয়ে ঘষে নেয়া উত্তম। পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ে পানি জমে থাকে না তাই এখানে তুলা চাষে ঝুঁকি কম। তবে সেচ ব্যবস্থা না থাকলেও তুলা উৎপাদন কম হয়। উত্তম সুনিষ্কাশিত মাটি তুলাচাষের উপযোগী। তুলাচাষের জন্য উৎকৃষ্ট হচ্ছে- বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ প্রকৃতির মাটি। এ ছাড়াও, এটেল দো-আঁশ ও পলিযুক্ত এটেল দো-আঁশ মাটিতে তুলাচাষ করা যায়। মাটির অবস্থা বুঝে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও ঝরঝরে করে নিতে হবে। সারি থেকে সারি ৯০ সেমি. (৩ ফুট বা ২ হাত) এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫সেমি. (১.৫ ফুট বা ১ হাত) বজায় রেখে বীজ বপন করতে হয়। সারি বরাবর মাটি উঁচু করে তার ওপর বীজ বপন করা উত্তম।

তুলাচাষী সুমন জ্যোতি চাকমা, জুম ধন চাকমা, প্রতাপ চাকমা, নীলধন ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েক জন কৃষকের সাথে আলাপকালে জানান, প্রতিবিঘায় ৪২শত থেকে ৪৫শত চারা বপন করতে হয়। বপনের পর জাত ভেদে ১১০-১২০ দিনের মধ্যে তুলার বোল ফাটতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে গড়ে ৩৫-৪০টি বোল থাকে ,প্রতি বোলে ৫গ্রাম তুলা পাওয়া গেলে প্রতি বিঘায় ৭৩৫ কেজি থেকে ৭৫০ কেজি তুলা উৎপাদন সম্ভব। ৩-৪ বারে সব তুলা সংগ্রহ করতে ৪০-৫০ দিন দরকার হয়। তুলার বোল সম্পূর্ণরূপে ফাটার পর ও ৭-১০ দিন গাছেই শুকানো উচিত। এতে আঁশ ও বীজের মান উন্নত হয়।

খরচ ও আয় ব্যয় নিয়ে জানতে চাইলে তুলা চাষীরা জানান, মাঝে মাঝে পানি সেচ ও সামান্য সার- কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া তুলা চাষে তেমন একটা ব্যয় নাই। তুলার সাথে শুরুতেই লালশাক, ও পরে বরবটি ও ভুট্টা চাষ করা যায়। এছাড়াও আম ,মাল্টা পেয়ারা বাগানেও তুলা চাষ সম্ভব হচ্ছে। এক হেক্টর জমিতে ৪-৫ মাসে সার বীজসহ মোট ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হলেও ৬৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার ফসল পাওয়া যায়। আগামীতে সরকারি ভাবে সেচ যন্ত্রের সহযোগিতা পেলে অধিক জমিতে তুলা চাষ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চাষীরা।

খাগড়াছড়ি জেলার তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, তুলা একটি অর্থকরী ফসল। পার্বত্যাঞ্চলের মাটি তুলার সাথে মিশ্র চাষে উপযোগী। পাহাড়ের অনাবাদি ও জুমে মিশ্রচাষে সম্ভাবনার ফসল তুলা। তুলা চাষ করে পার্বত্যবাসী অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে। বস্ত্র শিল্পে তুলার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রতি বছর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। অধিক চাহিদার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিল এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীরা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আফ্রিকান ও মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং পাকিস্তান থেকে তুলা আমদানি করে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৮৫ থেকে ৯০ লক্ষ বেল তুলার বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে বছরে ২ থেকে ৩ লক্ষ তুলা বেল (১ বেল প্রায় ৪৮০ পাউন্ডের সমান) কম উৎপাদন করে। চলতি বছরে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় ৩০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। এতে ৩-৪ শত বেল তুলা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App