×

সম্পাদকীয়

জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জটিলতা কাটুক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১১ এএম

জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জটিলতা কাটুক

প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালী সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। নানা কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। সুতরাং এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব। বিশ্ব নেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা যায়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ এখন পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিমিত্তে বিশ্ব নেতাদের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সিদ্ধান্তটির ওপর ভোট আহ্বান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। তবে চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল। মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে কথা বলছে না উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। বরং দেশটির সঙ্গে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। রাশিয়া কিংবা ভারতের দিকে তাকালে সেটি দেখা যায়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব দ্বৈতনীতিতে রয়েছে। এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা মাধ্যমে যোগাযোগ ও তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। আরাকানের বাসিন্দা হিসেবে জাতিসংঘের সহায়তায় মিয়ানমারেই নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার-সংক্রান্ত কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার নিজেরাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো চায় না, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী চায় না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে তাতে গোপনে সমর্থন জানাচ্ছে চীন-রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়ারও উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App