×

খেলা

ঢাকায় ছন্দে ফিরলেন মুমিনুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৩ পিএম

ঢাকায় ছন্দে ফিরলেন মুমিনুল

ছবি: সংগৃহীত

টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটার ধরা হয় মুমিনুলকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নিজের চেনা ছন্দ হারিয়ে ফেলেন তিনি। টানা ব্যর্থতার কারণে একসময় সাদা পোশাকের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর অফ ফর্মের কারণে পরপর দুই টেস্টে (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত জুনে) আর চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে একাদশেই জায়গা পাননি। তবে দ্বিতীয় টেস্টে আবার দলে ফেরানো হয়েছে তাকে। দলে ফিরেই ব্যাট হাতে পুরনো ছন্দে ফিরে এলেন টেস্টে বাংলাদেশের এই সেরা ব্যাটার। ১২ ইনিংস পর আবার হাসল মুমিনুলের ব্যাট। খেলেন ১৫৭ বলে ৮৪ রানের কার্যকরী ইনিংস। তাতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানের লড়াকু পুঁজি পায় টাইগাররা।

মুমিনুল সৌরভ ছড়ালেন মিরপুরে এসে। অপূর্ণতা থাকল, আফসোসও। তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি। দলকেও দেয়া হয়নি পথ দেখানো সংগ্রহ। তবুও মন ভাঙা মুমিনুল তার ডাকনামের মতো সৌরভই ছড়ালেন মিরপুরে। বাকিদের যখন বড্ড তাড়াহুড়ো, লড়াই, সংগ্রাম- মুমিনুল তখন স্থির, সচেতন। মুমিনুল এমনই নির্লিপ্ত। যেমন গত কয়েক মাস ছিল তার ব্যাটও। ১৫৭ বল, ১২ চার, ১ ছক্কা আর ৮৪ রানের ইনিংসে মুমিনুল ফিরে পেলেন নিজেকে। ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ফিরেছেন অশ্বিনের ক্যারম বলে। ছেড়ে দিতে যাওয়া বল ছুঁয়ে গেছে মুমিনুলের গøাভস। এরপর মাথা নিচু করে সোজা হাঁটা ধরেন সাজঘরে।

মুমিনুল হকের জন্ম ১৯৯১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সমুদ্র উপকূলীয় শহর কক্সবাজারে। দেশের বৃহত্তম ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিকেএসপিতে ক্রিকেট খেলার হাতেখড়ি হয় তার। ঘরোয়া টেস্টে চট্টগ্রাম বিভাগে খেলার আগে ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলেছেন। ২০১০ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। অভিষেকেই তিনি ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বিপিএলে সিলেট রয়্যালস দলের হয়ে খেলেন তিনি। টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি মুমিনুল।

২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। তিনি ছিলেন লাল-সবুজের জার্সি গায়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষিক্ত হওয়া ১০৪তম খেলোয়াড়। একই বছরের ডিসেম্বরে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় মুমিনুলের। তিনি সাদা পোশাকে এ পর্যন্ত ৫৫ ম্যাচে মাঠে নামেন। ১১ শতক আর ১৬ অর্ধশতকে তার সংগ্রহ ৩৬১৩ রান। গড় ৩৮.০৩, স্ট্রাইক রেট ৫৩.২৯, সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮১ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ২৮ ম্যাচে ৫৫৭ রান সংগ্রহ করেন মুমিনুল। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে ৬ ম্যাচে মাঠে নেমে তার ব্যাট থেকে আসে সর্বমোট ৬০ রান।

ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্রাডম্যানীয় গড়ের কারণে সাড়া জাগিয়েছিলেন মুমিনুল হক। টানা ১১ টেস্টে পেয়েছিলেন ন্যূনতম অর্ধশতক। সেই মুমিনুলের ক্যারিয়ারে ২০২২ সালটা কাটল স্মরণীয়ভাবে। অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন, জায়গা হারিয়েছেন দলে। ঘরোয়া লিগেও পাচ্ছিলেন না রান। তবে ইয়াসির রাব্বির বাজে ফর্ম তাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে নতুন করে নিজেকে চেনানোর। আর সুযোগটা পেয়ে কাজেও লাগান পকেট ডিনামাইট খ্যাত এই বাঁহাতি ব্যাটার। পছন্দের তিন নম্বর পজিশনে নেমে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং উপহার দেন ৩১ বছর বয়সী ব্যাটার। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাকিরা যখন সেট হয়ে উইকেট ছুড়ে আসছেন তখন স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করে অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন তিনি।

মুমিনুল বছর শুরু করেছিলেন দারুণ এক ফিফটি দিয়ে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৮৮ রানের (৩৭০ মিনিটে ২৪৪ বলে) দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস। তার সাথে মাহমুদুল হাসান জয় (৭৮), লিটন দাস (৮৬) আর নাজমুল হাসান শান্তর (৬৪) ফিফটি এবং মিরাজের ৪৭ রানের আরো এক কার্যকর ইনিংস যোগ হলে ৪৫৮ রানের লড়াকু পুঁজি তৈরি হয়। তাতেই গড়ে ওঠে জয়ের ভিত।

শেষ পর্যন্ত মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে কিউদের বিপক্ষে ৮ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ পায় টিম বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর কোথায় যেন হারিয়ে যান মুমিনুল। তিনি যে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটার, সে সত্য কর্পূরের মতো উবে যেতে থাকে। পরের ৬ টেস্টে ১২ ইনিংসে (১৩, ০, ৩৭, ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯, ০, ০, ৪ ) শুধুই ব্যর্থতার ঘানি টানলেন মুমিনুল। এ বাঁহাতি ব্যাটার যেন রান করতেই ভুলে যান। ওই ৬ টেস্টে একবারের জন্যও পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছেনি তার ব্যাট।

একটি মাত্র ইনিংস আছে ৩৭ রানের। আর ১০ বার আউট হয়েছেন দুই অঙ্কে পা না রেখেই। এর মধ্যে চার চারটি শূন্যও সঙ্গী তার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App