×

জাতীয়

শিশুদেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:৫৫ পিএম

শিশুদেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনক

ফাইল ছবি

আর্সেনিক-দূষিত পানি শিশুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের একটি কারণ

দেশে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকার শিশুদের দেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনক। এই আর্সেনিক দূষিত পানি শিশুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের একটি কারণ বলেও গবেষণায় মিলেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি আছে এমন এলাকায় শিশুদের মল এবং পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ই. কোলাই (একটি ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত উষ্ণ রক্তের প্রাণিদের অন্ত্রের নিচের অংশে পাওয়া যায় এবং এটি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ) এর উচ্চ প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও, কম আর্সেনিক দূষণযুক্ত অঞ্চলের তুলনায় খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেশি, এমন এলাকায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বেশি দেখা গেছে। আর্সেনিকের প্রভাব ও বিস্তার কমানোর প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকরা।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)’র বিজ্ঞানী এবং সহযোগীদের একটি নতুন গবেষণায় এমন তথ্যই মিলেছে। গবেষণাটি প্লস প্যাথোজেন্সে প্রকাশিত হয়েছে বলে আইসডিডিআরবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষকরা চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও মতলব উপজেলার ১’শটি পরিবারের (প্রত্যেক উপজেলায় ৫০টি) মা ও শিশুদের মল এবং খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। হাজীগঞ্জে বসবাসকারী পরিবারের মানুষেরা অগভীর নলকূপের পানীয় পান করে। এখানকার পানিতে আর্সেনিকের উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, মতলবের পরিবারের সদস্যরা আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ থেকে তাদের খাবার পানি সংগ্রহ করে।

খাবার পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সীমা ১০ মাইক্রোগ্রাম/লিটার হওয়া উচিত। অথচ হাজীগঞ্জের ৫০টি পানির নমুনায় মেডিয়ান আর্সেনিকের ঘনত্ব ছিল ৪৮১ মাইক্রোগ্রাম/লিটার। অন্যদিকে, মতলবের ৫০টি নমুনায় মেডিয়ান আর্সেনিকের ঘনত্ব ছিল শূণ্য মাইক্রোগ্রাম/লিটার। সামগ্রিকভাবে, দুটি এলাকার ৮৪শতাংশ পানি এবং মলের নমুনায় ই. কোলাই উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মতলবের (২২ শতাংশ, ঢ়<০ দশমিক শূণ্য ৫) পানির তুলনায় হাজীগঞ্জে (৪৮ শতাংশ) পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ই. কোলাই এর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা যায় এবং হাজীগঞ্জের ৯৪ শতাংশ শিশুদের দেহে ব্যাকটেরিয়াটির উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা মতলবের শিশুদের ক্ষেত্রে ৭৬ শতাংশ। তবে কোনো এলাকার মায়েদের মধ্যে ই. কোলাই এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, হাজীগঞ্জের ই. কোলাই-এর উচ্চতর অনুপাত পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন এবং ক্লোরামফেনিকলসহ একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল।

গবেষকরা আশঙ্কা করেছেন যে, বাংলাদেশে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকার শিশুদের দেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মধ্যকার সম্পর্ক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। ফলে আর্সেনিকের প্রভাব ও বিস্তার কমানোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

গবেষণার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাডজাঙ্কট সায়েন্টিস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল। এসকল ধাতু দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। যার ফলাফল হিসেবে মানুষের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠছে। এর ফলে কখনও অ্যান্টিবায়োটিক নেয়নি তবে আর্সেনিকের মতো ধাতুর সংস্পর্শে এসেছে এমন মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণির দেহে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী বিভিন্ন অণুজীব তাদের বসতি গড়ে তুলতে পারে। অন্যান্য কনফাউন্ডারের তুলনায় গবেষণা থেকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের যে ফলাফল পেয়েছি সেটি নিয়ে আরও গবেষণা করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব। তবে, পরিবেশে যাতে ভারী ধাতুর প্রভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পাশাপাশি ওষুধ ও কৃষিতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমাদের বর্তমান গবেষণার ফলাফলগুলো বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন পরিবেশে সীসা, পারদ ও লোহার মতো অন্যান্য ভারী ধাতুর প্রভাব সম্পর্কে আরও অনুসন্ধান করার এখনই সঠিক সময়।

ডক্টর ইসলামের ল্যাবের পোস্টডক্টরাল গবেষক এবং গবেষণাটির অন্যতম একজন গবেষক প্রভাত তালুকদার বলেন, আমরা দেখেছি যে আর্সেনিক-প্রতিরোধী ই. কোলাই এর একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকের, বিশেষ করে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। আমাদের বর্তমান গবেষণা এই আইসোলেটগুলোর মধ্যে আর্সেনিক এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সহ-প্রতিরোধের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে চলেছে ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App