×

খেলা

বুয়েন্স আয়ার্সে মেসিদের রাজকীয় সংবর্ধনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৪ এএম

বুয়েন্স আয়ার্সে মেসিদের রাজকীয় সংবর্ধনা

ছবি: সংগৃহীত

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ খরা কাটিয়েছে আর্জেন্টিনা। এর আগে স্বপ্ন ছোঁয়ার খুব কাছে গিয়েও না পারার কষ্ট অনেকবারই সঙ্গী হয়েছে তাদের। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে অপেক্ষার অবসান হয়েছে। পুরো ফুটবল দুনিয়া এখন মেসি-মার্তিনেজ বন্দনায় ব্যস্ত। এবার বহু কাক্সিক্ষত সেই স্বর্ণালি ট্রফি নিয়ে নিজের দেশে ফিরেছে লিওনেল মেসি বাহিনী। দেশে ফিরেই দেশবাসীর রাজকীয় সংবর্ধনায় সিক্ত হন আলবিসেলেস্তেরা। উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের বীরের মতো স্বাগত জানিয়েছে লাখো মানুষ। যুগের পর যুগ অপেক্ষার পর তারা আবারো হাসছে যেন মন খুলে। তাদের এই আনন্দের উপলক্ষ এনে দেয়া নায়কদের একনজর দেখার ইচ্ছা সবার মনে। স্বর্ণে মোড়ানো ট্রফিটা কাছ থেকে বীরদের হাতে দেখার সুযোগ বোধহয় হারাতে চাননি কেউ।

দোহা থেকে রোম হয়ে গতকাল রাত সাড়ে তিনটায় (আর্জেন্টাইন সময়) ইজিজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিবর্তে অ্যারোপার্কে অবতরণ করে মেসিদের বহনকারী বিমান। ততক্ষণে বুয়েন্স আয়ার্সে ছিল অপেক্ষমাণ মানুষের ঢল। বিমান থেকে বের হওয়ার সময় ফুটবলে সদ্য অমরত্ব পাওয়া লিওনেল মেসি ডান হাতে সোনার ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন। ছাদখোলা বাসে চড়ে আর্জেন্টিনা দল সমর্থকদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। তাদের সবার গলায় স্বর্ণের মেডেল। একটু পরপর বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেন খেলোয়াড়রা, উল্লাসে ফেটে পড়ে চারপাশ। সে সময় জ্বলছিল হাজার হাজার মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট, উড়ছিল পতাকা, যেন অন্যরকম এক জগৎ। যেন দেশবাসীর প্রতি এই মেসির স্বপ্নের অর্ঘ্য নিবেদন। এই আরাধ্য মুহূর্তের নাগাল পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন আর্জেন্টাইনরা। তারা বিজয়ের ধ্বনি তুলে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করেন। যেন গোটা পৃথিবীটা তাদের হাতের মুঠোয় তুলে দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের মহানায়ক মেসি। এ সময় মেসির পাশে স্কালোনিকে দেখা যায়। বিশ্বজয়ের আনন্দে হাজার হাজার মানুষ পতাকা নেড়ে, স্লোগানে স্লোগানে মেসিদের অভিবাদন জানায়। হাত নেড়ে তাদের অভিবাদনের জবাব দেন বিশ্বকাপ বিজয়ীরা।

এদিকে বাস প্যারেডের মধ্যেই অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছেন মেসিসহ আর্জেন্টিনার বেশ কয়েক ফুটবলার। সবাই ছাদখোলা বাসের একপাশে ছোট একটা ছাদে দাঁড়িয়ে যখন জনতার অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন, ঠিক তখনই রাস্তার ঝুলন্ত তার এসে পড়ে তাদের সামনে। দ্রুতই মাথা নিচু করে তারা দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচেন। মেসিকে মাথার সঙ্গে সঙ্গে হাতে থাকা বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়েও ভাবতে হয়েছে। তবে একপাশে থাকা লিয়ান্দ্রো পারেদেস মাথায় আঘাত পেয়েছেন। মাথায় থাকা টুপিও হারিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবলার।

১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে মেক্সিকোর মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ছিল কেবলই অপেক্ষার পালা। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠলেও জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মেসি, ডি মারিয়া, গঞ্জালো হিগুয়েনদের। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপেও সুবিধা করতে পারেনি আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা।

তবে ব্রাজিলকে হারিয়ে সবশেষ কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের পর টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা এক দল নিয়েই এবার স্বপ্নপূরণের মিশনে কাতারে এসেছিলেন মেসিরা। শেষ পর্যন্ত তাদের মাথায় উঠেছে বিশ্বজয়ের রাজমুকুট। তিন যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মেসিরা এখন তিন তারকাখচিত চ্যাম্পিয়ন। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসিদের এই উদযাপন আরো কতদিন চলে সেদিকেই এখন চোখ থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।

কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে গত রবিবার রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ছড়ানো শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয়ের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার বাঁধভাঙা উদযাপনের শুরু। যেন থামাথামির নাম নেই। তিন যুগের প্রতীক্ষার পর যে ঘরে এসেছে বিশ্বকাপ। এর আগে সেই ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিল দেশটির মানুষ।

এদিকে বিশ্বকাপজয়ী দলের আগমন উপলক্ষে গতকাল ছুটি ঘোষণা করে আর্জেন্টিনা সরকার। পুরো দেশ যেন লিওনেল মেসিদের আনন্দে সামিল হতে পারে, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া। আর্জেন্টিনার জাতীয় দল বুয়েন্স আয়ার্সের ওবেলিস্কে তাদের বিশ্বকাপ জয় উদযাপন করে। ওবেলিস্কে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভটি ক্রীড়াবিষয়ক নানা অর্জনের পর উদযাপনের জন্য ঐতিহ্যবাহী স্থান। বিশ্বকাপ জেতার পরপরই আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনায় কতটা পাগলামি হচ্ছে তা দেখতে চাই আমি। আমি চাই তারা অপেক্ষা করুক আমার জন্য। তাদের সঙ্গে উদযাপন করার জন্য আর তর সইছে না আমার।’

এর আগে কাতারেই ভক্তদের সঙ্গে ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে আনন্দ উদযাপনে মাতেন মেসিরা। আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে উদযাপনের জন্য কয়েক লাখ সমর্থক লুসাইল সিটিতে ভিড় জমান। মেসিদের সামনে থেকে একনজর দেখতে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। পুরো কাতারেই ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসব। জনজীবন স্থবির হয়ে যায়। মধ্যরাতে মেসিদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন আর্জেন্টিনার সমর্থকসহ স্থানীয় জনগণও। তাদের হতাশ হতে হয়নি। ছাদখোলা বাসে ট্রফি ট্যুর করেছেন লিওনেল মেসিরা। সেই বাসের দ্বিতীয় তলায় ট্রফি ও পতাকা নিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা সমর্থকদের দিকে হাত নেড়ে পথ চলতে থাকেন। মেসিদের ছাদখোলা বাসের পেছনে ছিল চ্যাম্পিয়ন লেখা বাস। সেই বাসও তাদের পেছন পেছন গেছে। ছাদখোলা বাসের পাশাপাশি আতশবাজিও ছিল। সেই আতশবাজিতে লুসাইল সিটি হয়ে ওঠে রঙিন। এই লুসাইল স্টেডিয়াম যেন আর্জেন্টিনার হোম ভেন্যুতে পরিণত হয়েছিল এবার। নিজেদের সাত ম্যাচের মধ্যে চারটিই এখানে খেলেছেন মেসিরা। ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে লুসাইলকে স্মরণীয় করে রাখে আলবিসেলেস্তেরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App