×

সারাদেশ

ঐতিহ্য হারাচ্ছে রায়গঞ্জের প্রাচীন জয়সাগর দীঘি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৪৭ পিএম

ঐতিহ্য হারাচ্ছে রায়গঞ্জের প্রাচীন জয়সাগর দীঘি

রায়গঞ্জের জয়সাগর দীঘি। ছবি : ভোরের কাগজ

ঐতিহ্য হারাচ্ছে রায়গঞ্জের প্রাচীন জয়সাগর দীঘি

সাগরের কথা উঠলে চোখ বন্ধ করে শোনা যায় তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শোঁ শোঁ আওয়াজ। উত্তাল ঢেউ, নিম্ন চাপের প্রভাবে গর্জে ওঠা জলোচ্ছ্বাসের ভয় এসবের কোনোটাই নেই সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জয়সাগরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থী তবু ভিড় করছেন জয়সাগরের পাড়ে। জয়সাগর তো সাগর নয়। বিশাল এক দিঘি। বিশাল এ দীঘিটির স্বচ্ছ জল নিমিষেই ক্লান্তি দূর করে দেয় দর্শনার্থীদের।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছিতে অবস্থিত এই জয়সাগর। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই দীঘির পাড়ে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। পথিকরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দীঘির পাড়ে বসে ক্লান্তি দূর করে।

ঐতিহাসিক ও প্রাচীন এই দীঘিটি বেশ বিশালাকার। প্রাচীনকালে দীঘিটির দৈর্ঘ্য ছিল আধা মাইল, প্রস্থ ছিল আধা মাইল এর কিছু কম, অর্থাৎ আয়তন প্রায় ৫৮ একর ছিল। এই দিঘীটি নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। সেন বংশীয় রাজা অচ্যূত সেন গৌড়াধিপতি ফিরোজ শাহর করদ রাজা ছিলেন। তার রাজধানী ছিল কমলাপুর।

জানা যায়, ফিরোজ শাহের পুত্র বাহাদুর শাহ অচ্যূত সেন রাজার কন্যা অপরূপ সুন্দরী ভদ্রাবতীকে দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাজা অচ্যুত সেন সম্মত না হওয়ায় বাহাদুর শাহ কমলাপুর আক্রমণ করে ভদ্রাবতীকে অপহরণ করে নিমগাছিতে নিয়ে যান। রাজা অচ্যুত সেন তার সৈন্যবাহিনীসহ বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করেন। নিমগাছি প্রান্তরে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। বাহাদুর শাহের মুষ্টিমেয় সৈন্য সেনরাজের বিরাট সৈন্যবাহিনীর কাছে যুদ্ধে (১৫৩২-৩৪ খ্রি.) পরাজিত হন। এ বিজয় গৌরবের স্মৃতি হিসেবে এবং পরকালের কল্যাণের জন্য তিনি নিমগাছির কাছে ‘জয়সাগার’ নামে এক দিঘি খনন করান।

যুদ্ধজয়ের কারণেই দিঘিটির নাম হয় জয়সাগর। ৪ পাড়ে ২৮টি বাধা ঘাট দিয়ে জয়সাগর দীঘি তৈরি করা হলেও, বর্তমানে এ ঘাটের কোনো চিহ্ন নেই। বিশাল দীঘিটির ভিতরে রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি দীঘি। অতীতের জয়সাগরের জৌলুস আগের মতো আর নেই। সংস্কারের অভাবে দীঘির পাড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দীঘি এলাকায় অবাধে গবাদি পশু চড়ানোয় এবং যত্রতত্র পশুর মলত্যাগে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ঐতিহ্য রক্ষায় দীঘিটির সংস্কার বা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এদিক থেকে। জয়সাগরের পূর্ব পাশে দর্শনার্থীদের বসার জন্য সিমেন্টের চেয়ার এবং টয়লেট রয়েছে। কিন্তু অযত্মের কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে প্রাচীন এ দর্শনীয় স্থান।

বিগত বছরগুলোতে শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি জয়সাগরে ভিড় করত। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় ও শিকারিদের উৎপাতে অতিথি পাখিরা আর আসে না এখানে। এক সময় হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকত। কয়েক বছর ধরে সেখানে বিরানভাব বিরাজ করছে।

জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত এ দীঘিটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কয়েক শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটির সংস্কার ও উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলে জয়সাগর তার হারানো জৌলুস ফিরে পেয়ে হয়ে উঠতে পারে জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App