×

আন্তর্জাতিক

আর্জেন্টিনার বিজয়ে বিশ্বব্যাপী সমর্থকদের উল্লাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৬ পিএম

আর্জেন্টিনার বিজয়ে বিশ্বব্যাপী সমর্থকদের উল্লাস

ছবি: সংগৃহীত

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে মহাকাব্য রচনা করেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সকে হারিয়ে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে লিওনেল মেসি বাহিনী। ফলে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক আনন্দে ফেটে পড়েন। গঞ্জালো মন্টিয়েলের ডান পায়ের শটটা হুগো লরিসকে ঠকিয়ে গোলপোস্টে ঢুকতেই ঢাকা যেন মিশে গেল বুয়েন্স আয়ার্সের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে সিডনি থেকে লন্ডন, ব্রাসেলস থেকে কোপেনহেগেন।

দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ না জেতার খরা গুছিয়েছে মেসি বাহিনী। তাদের এমন সাফল্যে ফুটবল ভক্তদের ভিড় জমেছে দেশটির রাজধানী বুয়েন্সে। প্রশস্ত রাস্তাতেও মানুষের দাঁড়ানোর জায়গা মিলছে না। আর্জেন্টিনার রাজধানী দেখলে মনে হবে যেন মানুষের ঝড় শুরু হয়েছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী মানুষের কাছে ব্যাপক আকর্ষণীয় একটি স্থান। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পর সেখানে নতুন এক চিত্র দেখা গেছে। রাতজুড়ে মানুষের আনন্দ-হৈহুল্লোড়।

লুসাইলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ ছড়ায় রাজধানী ঢাকাতেও। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি থেকে শুরু করে আলবিসেলেস্তে সমর্থকদের বিজয়োল্লাস দেখা গেছে গোটা শহরজুড়ে। কেউ আবেগে আপ্লুত হয়েছেন, কেউবা আনন্দে অশ্রুসিক্ত। বাঙালির এমন উদযাপনের সংবাদ সংগ্রহে খোদ আর্জেন্টাইন সাংবাদিকের দেখা মিলেছে ঢাকাতে। উদযাপন, উন্মাদনা, অশ্রুসিক্ত নয়ন। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। লুসাইলের সে বিজয় ছাপ ফেলেছে গোটা ঢাকাতে। এই রাতের যত আনন্দ, সবকিছুই আকাশি-নীল সমর্থকদের জন্য। দেশের নানান জায়গা থেকে এদিন ঢাকায় আসেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।

কেবল দেশ নয়, দেশের বাইরে থেকে খোদ আর্জেন্টাইন সাংবাদিক পা রেখেছেন ফুটবলপ্রেমী শহরে। এক আর্জেন্টাইন সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক আর্জেন্টিনার সমর্থক আছেন। তাদের উন্মাদনা আমাদের দেশের মানুষকে জানানোর জন্য এখানে এসেছি। আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আবেগ সত্যিই মুগ্ধ করবে আর্জেন্টাইনদের।’ ঢাকার বাইরে থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা বলেন, ‘অনেক দূর থেকে খেলা দেখার জন্য এসেছি। অনেকের সঙ্গে মিলে জয়ের উল্লাস করতে পেরে ভালো লেগেছে।

এদিকে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হারের পর ফ্রান্সের রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন সমর্থকরা। তাদের সামলাতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ফ্রান্সের উত্তাল রাজপথের টুকরো টুকরো ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্রান্স সরকার ফাইনাল ম্যাচ দেখার জন্য প্যারিসে বা অন্য কোনো শহরে ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ বসানোর অনুমতি দেয়নি। ফলে সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে বড়পর্দায় খেলা দেখা হয়নি। ফাইনাল ম্যাচ দেখার জন্য শহরের নানা প্রান্তে বার কিংবা রেস্তরাঁয় জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। কিন্তু তারা স্বপ্নভঙ্গের সাক্ষী থেকেছেন। অধরা থেকে গিয়েছে বিশ্বকাপ।

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা অর্জন করেছে আর্জেন্টিনা। দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে মেসিদের উষ্ণ সংবর্ধনা দিতে অপেক্ষায় আছেন সমর্থকরা। তবে তার আগে কাতারেই ভক্তদের সঙ্গে ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে আনন্দ উদযাপনে মাতেন মেসিরা।

আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে উদযাপনের জন্য কয়েক লাখ সমর্থক লুসাইল সিটিতে ভিড় জমান। মেসিদের সামনে থেকে এক নজর দেখতে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। পুরো কাতারেই ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসব। জনজীবন স্থবির হয়ে যায়। মধ্যরাতে মেসিদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন আর্জেন্টিনার সমর্থকসহ স্থানীয় জনগণও। তাদের হতাশ হতে হয়নি। ছাদখোলা বাসে ট্রফি ট্যুর করেছেন লিওনেল মেসিরা। সেই বাসের দ্বিতীয় তলায় ট্রফি ও পতাকা নিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা সমর্থকদের দিকে হাত নেড়ে পথ চলতে থাকেন। মেসিদের ছাদ খোলা বাসের পেছনে ছিল চ্যাম্পিয়ন লেখা বাস। সেই বাসও তাদের পেছন পেছন গেছে। ছাদ খোলা বাসের পাশাপাশি আতশবাজিও ছিল। সেই আতশবাজিতে লুসাইল সিটি হয়ে উঠে রঙিন। এই লুসাইল স্টেডিয়াম যেন আর্জেন্টিনার হোমভেন্যুতে পরিণত হয়েছিল এবার। নিজেদের সাত ম্যাচের মধ্যে চারটিই এখানে খেলেছেন মেসিরা। ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে লুসাইলকে স্মরণীয় করে রাখে আলবিসেলেস্তেরা। কাতারে শীতের মৌসুম চলছে। অন্য দিনের চেয়ে বাতাসে ঠাণ্ডার তীব্রতা একটু বেশিই। সেই তীব্র শীতের নিকুচি করেই আর্জেন্টাইন সমর্থক ও সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা লুসাইল স্টেডিয়ামের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন মেসিদের এক নজর দেখার জন্য।

মেসিদের জন্য কয়েক লাখ সমর্থক লুসাইল সিটিতে ভিড় জমান। মেসিদের সামনে থেকে দেখতে লাখো মানুষের সেই অপেক্ষা। আর্জেন্টিনার সমর্থক ছাড়াও সাধারণ জনগণ মেসিদের এক নজর দেখতে চান। খেলা দেখে যারা গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তারা সবাই দেড়-দুই ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় ছিলেন। গাড়ি একদম নড়েনি। মেট্রোরেলও ছিল স্থবিরতা।

৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে মেসির আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ের মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব পেল লাতিন আমেরিকার এই দেশটি। এরপরই হাজার হাজার আর্জেন্টিনার মানুষ রাজধানী বুয়েন্স আয়াসের্র রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের উল্লাস-উচ্ছাস ছিল বাঁধভাঙা।

কাতার থেকে বুয়েন্স আয়াসের্র দূরত্বটা ১৩ হাজার ৮০৯ কিলোমিটার। দূরত্বটা বাধা হয়নি আর্জেন্টাইনদের কাছে। লুসাইলে মেসিদের গগনবিদারী চিৎকার পৌঁছে গেছে বুয়েন্স আয়ার্সের আকাশে বাতাসে। আনন্দের ক্ষণ উপভোগে যা এখন উৎসবের নগরী। ম্যারাডোনার পর নিজ দেশের হয়ে শিরোপার তৃষ্ণা মেটানো আর্জেন্টাইন দলের বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছেন আর্জেন্টিনার ভক্ত ও সমর্থকরা। আকাশি-নীলদের পতাকা, গায়ে জার্সি, মাথায় টুপিসহ আরো কত আয়োজন মেসিদের জন্য। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে বুয়েন্স আয়ার্সের পথঘাট সব। এক আর্জেন্টাইন বলেন,‘আমি আমার আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। মেসিদের এমন জয়ে আমি খুবই গর্বিত। একজন মেসি আমাদের দেশের এত বড় অর্জনের কাণ্ডারি। ৩৬ বছর পর এমন আনন্দ উদযাপনের মুহূর্ত পেয়ে আমরা খুবই খুশি।’ আরেকজন বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে, তা আমি ম্যাচ শেষের আগে পর্যন্ত কল্পনাও করতে পারিনি।’

কাতারের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ানো উত্তেজনার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনার প্রতিটি মানুষের মনে। ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তের মনে। রয়টার্স বলছে, পতাকা, টুপি এবং দেশের আইকনিক নীল-সাদা জার্সি নিয়ে আর্জেন্টাইনরা ফাইনালে জয়ের কয়েক মিনিটের মধ্যে বুয়েন্স আয়াসের্র কেন্দ্রস্থল এবং অন্যান্য আইকনিক স্পট দখল করে নেয়। একই সময়ে দেশজুড়ে আরো অনেক স্থানে আনন্দ, উল্লাস ও উদযাপন ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে যাওয়া লাতিন আমেরিকার এই দলটি ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। তবে দলের উত্থান আর্জেন্টিনাকে ব্যাপক উৎসাহিত ও উল্লসিত করেছে, যদিও এই দেশটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। যা দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ জনসংখ্যাকে দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে এতটুকু ভাটা পড়েনি অর্থনৈতিক সংকট।

বিশ্বকাপ জয়ের পর আনন্দের মুহূর্ত ভাগাভাগি করে নিয়েছেন লিওনেল মেসির ভাই রদ্রিগো মেসিসহ তার পরিবারের সদস্যরা।নাচেগানে তারা মাতিয়ে তোলেন পুরো স্টেডিয়াম পাড়া। গান গেয়েছেন বাংলাতেও। লুসাইল স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজতেই উল্লাসে মাতেন আর্জেন্টিনার ভক্ত ও সমর্থকরা। উচ্ছাসে ভেসে গেছে মেসির পরিবারও। লিওর তিন ছেলে থিয়াগো, সিরো আর মাতেওর সঙ্গে পুরো পরিবার ফ্রেম বন্দি হয় ক্যামেরায়। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে তারা ‘বাংলাদেশ’ ’বাংলাদেশ’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে মেসির পরিবারের সদস্যরা নেচেগেয়ে উঠেন। ভামোস আর্জেন্টিনা বলে গান গাইতে গিয়ে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’বলে উচ্ছাস করতে থাকেন তারা।

মেসির গর্বিত মা সিলিয়া মারিয়া আলবিসেলেস্তেদের অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়ায় বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমর্থকদের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার অনেক সমর্থক আছে বলে জেনেছি। তারা মেসিকে খুব ভালোবাসে। মেসির প্রতি তাদের এমন ভালোবাসা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশিদের আমিও ভালোবাসি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App