×

আন্তর্জাতিক

ভারতের দিকে তাকিয়ে কিয়েভ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৯ এএম

ভারতের দিকে তাকিয়ে কিয়েভ

প্রতীকী ছবি

‘জেনারেল উইন্টার’-এর দাপটে এবার বেশ কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে জেলেনস্কি বাহিনী। প্রবল শীতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে কিয়েভ দখলে আসছে রুশ বাহিনীর চতুর্ভূজ আক্রমণ। যাকে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান বলছেন রাশিয়ার চতুরংগ বাহিনী।

বছরের শুরুতেই শেষ: ক্রিসমাস উপলক্ষেও কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। শীতের মধ্যেই কিয়েভ দখলের নতুন প্রস্তুতি শুরু করেছে রুশ বাহিনী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-কে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি বলেছেন, ২০২৩ সালের শুরুতেই কিয়েভ দখলের প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রায় ২ লক্ষ রুশ সেনা। বিশ্লেষকরা সন্দেহ করছেন যে মস্কো আগামী বছরের শুরুতে কিয়েভের বিরুদ্ধে একটি নতুন স্থল আক্রমণ চালাতে চায়। ইউক্রেনীয় কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনিও এই সপ্তাহে বলেছিলেন যে তিনি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কিয়েভের উপর একটি নতুন রাশিয়ান আক্রমণের আশঙ্কা করেছিলেন। রুশরা প্রায় ২ লাখ নতুন সৈন্য প্রস্তুত করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে শীত। এখন কিয়েভে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে। ফলে ঘর গরম রাখতে ও জলের পাইপগুলোকে সচল রাখতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করছে রাশিয়া। এভাবে জনতার মনোবল ভাঙতে চাইছে পুতিন বাহিনী। শুধু তাই নয়, ঠাণ্ডায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার একটি পরিকল্পনাও করছে রুশ সেনারা।

হেনরি কিসিঞ্জারের পরামর্শ: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসতে পারলে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো যাবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। ৯৯ বছর বয়সি এই রাজনীতিক-কূটনীতিক বলেন, ১৯১৬ সালেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বন্ধের সুযোগ পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। দ্য স্পেক্টেটরে প্রকাশিত কিসিঞ্জারের ওই নিবন্ধে ইঙ্গিত দেয়া হয়, ইউক্রেনে মূলত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনে দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশ সংঘাতে জড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে তাই দ্রুত আলোচনায় বসার তাগিদ তার।

যেখানে আটকে আছে আলোচনা: গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ায় যোগ দেয়া খেরসন ও ঝাপোরিশিয়ার কী হবে তা নিয়েই মূলত আলোচনা আটকে আছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মহল। রাশিয়া চাচ্ছে যে এলাকাগুলো দখলে আনা হয়েছে অর্থাৎ গণভোটের মাধ্যমে একীভূত অঞ্চলগুলো বাদ দিয়ে আলোচনা করলে যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব। আর পশ্চিমারা চায় ২৪ ফেব্রুয়ারির আগের পর্যায়ে আসতে হবে রাশিয়াকে। রাশিয়া বলছে যা অসম্ভব। এ অঞ্চলগুলো এখন রাশিয়ার বাস্তবতা।

আসন্ন আক্রমণে পশ্চিমা ভাবনা: ফ্রান্স-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক মেডিটারিয়ান ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পরিচালক প্যাসকেল অসিউর বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে একটি আসন্ন আক্রমণের ব্যাপারে ইউক্রেনের আশংকায় পশ্চিমাদের মনকে কেন্দ্রীভূত করার একটি প্রচেষ্টা মাত্র, কারণ ইদানীং পশ্চিমারা ইউক্রেন রেখে নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত।

মোদিকে নিয়ে টানাটানি : ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দিল্লি দীর্ঘদিন ধরে নীরব। এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বারবার তাদের উষ্মা প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ভারতকে প্রভাবিত করতে চায়। তবে ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপোভ জানিয়েছেন, ইউক্রেন সংঘাতে দিল্লির অবস্থান একই রকম আছে। ইউরোপ শুধু নিজেদের সমস্যার কথা বলে, অন্যের কথা চিন্তা করে না। এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত শুক্রবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি আবারো মনে করিয়ে দেন, শুধুমাত্র আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমেই সংঘাতের সমাধান সম্ভব। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গত সেপ্টেম্বরে শাংহাই করপোরেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে পুতিনকে মোদি বলেছিলেন, ‘এই যুগ যুদ্ধের নয়।’ প্রকাশ্যে রাশিয়ার উদ্দেশে মোদির এই মন্তব্যকে প্রশংসা করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। শোনা যাচ্ছে, এই ফোনালাপেও মোদি যুদ্ধ শেষ করার জন্য জোর দিয়েছেন। ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, নরেন্দ্র মোদির অনুরোধে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার মৌলিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করেন। এবার ‘জি-২০’ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছে ভারত। এ নিয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে কথা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতের নেতৃত্বে সাংহাই করপোরেশন অর্গানাইজেশনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার দিকে তাকিয়ে আছেন পুতিন। দুই রাষ্ট্রপ্রধান একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

বিশ্বের কণ্ঠস্বর: গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘পুরো বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ হয়ে উঠেছেন। তিনি আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। ইউক্রেন অবশ্য ভারতের অবস্থানে সন্তুষ্ট নয়। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা গত সপ্তাহে একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন, ভারত সস্তায় রাশিয়ার তেল কিনছে, আর রুশরা ইউক্রেনে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করছে। জবাবে জয়শঙ্কর জানান, ভারত যে পরিমাণ তেল কিনছে তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি কিনছে ইউরোপ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App