×

খেলা

অতন্দ্র প্রহরী মার্টিনেজ-লরিস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৫৮ এএম

অতন্দ্র প্রহরী মার্টিনেজ-লরিস

ছবি: সংগৃহীত

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ রাত ৯টায় মাঠে নামছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট সামলানোর দয়িত্বে থাকবেন এমি মার্টিনেজ এবং ফ্রান্সের গোলপোস্ট সামলাবেন অধিনায়ক হুগো লরিস। মাঠের খেলায় যাই হোক লড়াই হবে এই দুই গোলরক্ষকের মধ্যেও।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরে আসর শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোকে হারায় ২-০ গোলে। এরপর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকেও হারায় ২-০ গোলে। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১, কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করার পর পেনাল্টি শুটআউটে ৪-৩ ব্যবধানে এবং সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারায় ৩-০ গোলে। প্রথম ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে গোলপোস্টের নিচে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছেন মার্টিনেজ।

কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্টিনা ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকারে। যেখানে নায়ক হয়ে উঠেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পেনাল্টি শুটআউটে নেদারল্যান্ডসের প্রথম দুই শট নেয়া ভার্জিল ফন ডাইক ও স্টিভেন বেরহাসকে রুখে দেন তিনি। অন্যদিকে শেষ দুটি ম্যাচে সহজ কিছু সুযোগ নষ্ট করে রীতিমতো আর্জেন্টাইনদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন লাউতারো মার্তিনেজ। এদিন টাইব্রেকারের শেষ পেনাল্টি নেয়ার দায়িত্ব পরে সেই লাউতারোর কাঁধে। তবে এদিন আর হতাশ করেননি এ ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড। লক্ষ্যভেদে উল্লাসে মাতিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। এছাড়া শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও দারুণ কিছু সেভ করেন মার্টিনেজ।

২০২১ সালের কোপা আমেরিকাতে পাদপ্রদীপের আলোয় আবিভার্ব মার্টিনেজের। একটা আন্তর্জাতিক ট্রফি নেই- মেসির আক্ষেপ মিটিয়েছেন যিনি তিনিই মার্টিনেজ। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকাতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে যেভাবে টাইব্রেকারে পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন, তখনই সবার মন জয় করেছিলেন। এরপর ফাইনালেও ব্রাজিলের আক্রমণভাগের একের এক শট ফিরিয়ে আর্জেন্টাইন দুর্গ রেখেছেন অক্ষত। ২০১২ সালে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন মার্টিনেজ। আর্সেনালের হয়ে আট বছরে মাত্র ১৫ ম্যাচ খেলেছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে এফএ কাপের ফাইনালে খেলেছিলেন আর্সেনালের জার্সিতে। এরপর যোগ দিয়েছেন আরেক ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলায়। এই ক্লাবে এসেই নিজেকে চেনালেন সবাইকে।

আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেকের পর যেন স্বর্গ থেকে দূত হয়ে এসে দাঁড়ালেন মেসির দলের গোলপোস্টে। অন্যদিকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্স প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে আসর শুরু করে। এরপর ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে নকআউট নিশ্চিত করলেও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিশিয়ার কাছে ১- গোলে হেরে যায়। এরপর নকআউটে পোল্যান্ডকে হারায় ২-১ গোলে, কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারায় ২-১ গোলে এবং সেমিফাইনালে মরক্কোকে হারায় ২-০ গোলে।

পুরো আসরে লরিসের সেভ তেমন চোখে পড়েনি। কারণ ছিল তাদের শক্তিশালী রক্ষণ। তবে দলের প্রয়োজনে জ¦লে উঠেছেন তিনি। এখন ফ্রান্সর বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হুগো লরিসও রয়েছেন দারুণ ছন্দে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার মাধ্যমে ফ্রান্সের অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ১৪৩ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েন তিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে শতকরা ৬৭ ভাগ শট ঠেকিয়েছেন লরিস। এবার ৪০ ভাগ। এতে অবশ্য লরিসের ওপর থেকে দৃষ্টি সরছে না কারো। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছেন লরিস। আবারো ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতাতে মরিয়া এই গোলরক্ষক।

গ্রুপ পর্বে কয়েকটি সেভ দিলেও আলোচনায় ছিল না লরিসের নাম। তবে তার অধিনায়ত্ব এবং অভিজ্ঞতায় ফ্রান্স ফাইনালে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি কয়েকটি সেভ দিয়ে নিজের জাত চেনান। এরপর সেমিফাইনালে মরক্কোর দুটি নিশ্চিত হওয়া গোল ঠেকিয়ে বনে যান নায়ক। মরক্কো প্রথম গোল হজম করার পাঁচ মিনিট পরেই মারাত্মক একটি আক্রমণ করে। ডিবক্সের বাইরে থেকে প্রতিপক্ষের নেয়া দূরপাল্লার শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। এরপর বাইসাইকেল ক্লিক থেকে আসা একটি বলও প্রতিহত করেন তিনি।

এর আগের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। তাই এবারের ফাইনালেও তার উপরেই ভরসা রেখেছে কোচ দিদিয়ে দেশম। ২০০৮ সালে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে জড়ান তিনি। এরপর ২০১০ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই প্রথম অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেন লরিস। ১২ বছর ধরে ফ্রান্সের নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ জিতেছেন লরিস। বর্তমান খেলছেন ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যামের হয়ে। ২০১৮ বিশ্বকাপ যে দলটিকে নিয়ে জিতেছিলেন লরিস সেখানে বেশ পরিবর্তন এনেছেন দিদিয়ের দেশম। বিশেষ করে লরিসের সামনে থাকা রক্ষণভাগে দেশম যে শুরুর একাদশ খেলাচ্ছেন সেখানে শুধু গত আসরে খেলা রাফায়েল ভারানেই আছেন। এরপরেও দলকে তুলেছেন সেমিফাইনালে।

ম্যাচের খেলা যেরকমই হোক সতর্ক থাকতে হবে দুই গোলরক্ষককেই। তাই খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আসল যুদ্ধ হবে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ এবং ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিসের মধ্যেও। তারাও বনে যেতে পারেন ফাইনালের নায়ক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App