আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদন
চলতি বছর বিশ্বে কয়লার ব্যবহার সামান্য বাড়বে। তবে তা জ্বালানি সংকটের মধ্যেও এর ব্যবহার সর্বকালের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। স¤প্রতি আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত বিষয়ক উদ্যোগ শিথিলের কারণে পরবর্তী কয়েক বছর কয়লার ব্যবহার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে। কয়লার বার্ষিক বাজার প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বে কয়লার ব্যবহার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৮০০ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০১৩ সালের পর এক বছরে ব্যবহারের দিক থেকে সর্বোচ্চ।
বর্তমান বাজার প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সাল পর্যন্ত কয়লার ব্যবহার এক রকম থাকবে। কেননা ম্যাচিউর মার্কেট বা বাজারগুলোর পতন অব্যাহত থাকলেও এশিয়ার অর্থনীতিতে চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। অর্থাৎ বিশ্বে জ্বালানি থেকে কার্বন নিঃসরণের একক শক্তিশালী উৎস হিসেবে কয়লার অবস্থান বজায় থাকবে।
২০২১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইইএ কয়লার চাহিদার বিষয়ে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল ২০২২ সালের চাহিদা তার একেবারে কাছাকাছি। এমনকি ২০২১ সালের পূর্বাভাসের পর বিভিন্ন কারণে কয়লা ব্যবহার খানিকটা প্রভাবিত হলেও চাহিদায় তারতম্য ঘটেনি। বিশ্বের জ্বালানি সংকট ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা নির্ভরতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কিন্তু একই সময়ে অর্থনৈতিক মন্দা বিদ্যুতের চাহিদা ও শিল্প-কারখানার উৎপাদন উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়েছে। এছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হারও নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে।
কয়লা ব্যবহারকারী হিসেবে চীন শীর্ষে। দাবদাহ ও খরার কারণে গ্রীষ্মকালে দেশটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ওপরই বেশি নির্ভরশীল ছিল। কোভিড-১৯ মহামারিসংক্রান্ত বিধিনিষেধের মধ্যে চাহিদা কমলেও উৎপাদন অব্যাহত ছিল। আইইএর জ্বালানি বাজার ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক কেইসুকে সাদামরি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির চূড়ান্ত ব্যবহারের পথে বিশ্ব। অচিরেই কয়লার মজুত শেষ হবে। তবে আমরা এখন সে পর্যায়ে যাইনি।
তিনি বলেন, কয়লার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চলতি বছর বিশ্বে সর্বোচ্চ পরিমাণ কয়লা ব্যবহার হতে পারে। ফলে কার্বন নিঃসরণের হারও বাড়বে। একই সময়ে বর্তমানে বেশকিছু ইঙ্গিত রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের নবায়নযোগ্য ও সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয় ভবিষ্যতে কয়লার চাহিদায় প্রভাব ফেলবে।
২০২২ সাল জুড়ে কয়লার আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির রয়েছে। এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহারে নতুন রেকর্ডও তৈরি হয়েছে। মার্চ ও জুনে দুই দফায় কয়লার দাম বেড়েছে। মূলত বিশ্বে জ্বালানি তেলের সংকট, প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অন্যতম সরবরাহকারী অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো অঞ্চলটিতে কয়লার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে ২০২৫ সাল নাগাদ ইউরোপ অঞ্চলে কয়লার চাহিদা ২০২২ সালের চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কমে আসবে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে নভেম্বরে ভারতে তাপীয় কয়লার আমদানি ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে এসেছে। দেশটির অন্যতম পরামর্শ প্রতিষ্ঠান কোলমিন্ট প্রকাশিত তথ্যসূত্রে এটি জানা গিয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে কয়লার উপাদন বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
কোলমিন্টের তথ্যানুযায়ী, নভেম্বরে দেশটি ১ কোটি ৮৩ হাজার টন তাপীয় কয়লা আমদানি করেছে। যেখানে অক্টোবরে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২০ লাখ টন। অন্যদিকে ২০২১ সালের নভেম্বরে পরিমাণ ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টন। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়া অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ব্যাপক হারে কয়লা উত্তোলন শুরু করায় তা আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের মোট কয়লা চাহিদার ৮০ শতাংশ উত্তোলন করে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহ কয়লা উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানটি চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে উত্তোলন হার ছয় গুণ বাড়তে দেখেছে। এ সময় ৪১ কোটি ২৬ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের পর দেশটি প্রথমবারের মতো বার্ষিক কয়লা উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।