×

সম্পাদকীয়

স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরিতে গড়িমসি কেন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:২৮ এএম

স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্তিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ হবে বলে প্রত্যাশা ছিল জনগণের। কিন্তু তা হয়নি। সমন্বয়হীনতার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ এগোচ্ছে না। তালিকা তৈরির জন্য গঠিত উপকমিটির সদস্যরা পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। কেউ বলছেন, এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো কোনো কাজই হয়নি। আবার কেউ বলছেন, তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এতে করে বিষয়টি নিয়ে একধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। রাজাকারদের তালিকার আইনি রূপ দিতে ২০০২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এরপর তালিকা প্রকাশে গড়িমসি সত্যিই দুঃখজনক। ইতোপূর্বে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটিসহ স্বাধীনতাবিরোধী প্রায় ১১ হাজার নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে তালিকাটি বিতর্কমুক্ত করা যায়নি। পরে সে তালিকা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর নতুন তালিকা প্রকাশে গড়িমসি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব। এক রক্তঝরা অধ্যায়। স্বাধীনতা লাভের পরপরই যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারসহ এদের তালিকা চূড়ান্ত করা যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু সেটি করতে না পারার ব্যর্থতায় বাঙালি জাতিকে এখনো মূল্য দিতে হচ্ছে নানাভাবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলন ও শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও উচ্চারিত হয়েছিল রাজাকারদের তালিকার দাবিটি। আমরা এ তালিকা প্রকাশে আলোর মুখ দেখতে চাই। জানা গেছে, একাত্তরের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা দিতে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থি কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরে দেশের অন্যান্য অংশেও গড়ে তোলা হয় এই বাহিনী। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশ বলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়। এর সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার। শাহ আজিজ, গোলাম আযম, সবুর খান, আয়েনউদ্দিনসহ ইসলামী দলগুলোর নেতারা রাজাকার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে সবকিছুর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী এবং তাদের জেনারেলরা সরাসরি রাজাকার বাহিনী তৈরি করেছিল। রাজাকার ছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামস এবং শান্তি কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন ছিল। বাকি সংগঠগুলোর সদস্যদের তালিকাও পর্যায়ক্রমে প্রকাশের উদ্যোগ রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার যে প্রয়াস শুরু হয়, তার পূর্ণতা পেতে রাজাকারের তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। অসংখ্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের তালিকা তৈরি করে প্রকাশ করলে এই জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতাবিরোধী কারা। তালিকা তৈরির পর এদের সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যানের ডাক দিতে হবে। তবে সতর্কও থাকতে হবে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ যেন বিতর্কমুক্ত হয়। প্রকৃতই যারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছে অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, তারাই যেন শুধু তালিকাভুক্ত হয়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাতে তালিকা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে শতভাগ সততার পরিচয় দিতে হবে। রাজাকারের সন্তান, যারা তাদের বাবার মতো আজো মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবোধক রাখতে চায়, তাদেরই চিহ্নিত করতে হবে আজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App