×

বিনোদন

মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৫৩ এএম

মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকের একটি দৃশ্য

মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নবযাত্রা শুরু হয়েছিল মঞ্চনাটকের, যেখানে সরাসরি প্রেরণা জুুগিয়েছিল পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নানাভাবে উঠে এসেছে আমাদের মঞ্চনাটকে। তবে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যে নাটকটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে সেটি হলো সৈয়দ শামসুল হকের লেখা কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। আবদুল্লাহ আল-মামুনের নির্দেশনায় নাট্যদল ‘থিয়েটার’ নাটকটি মঞ্চে আনে, ১৯৭৬ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকার মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়েছিল কালজয়ী এ নাটকটি। ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ ছিল। ১০ বছর বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় এই নাটকের প্রদর্শনী। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নাটকটি মঞ্চস্থ করে চলেছে নাট্যদল ‘থিয়েটার’। দুই শতাধিক মঞ্চায়ন হয়েছে নাটকটির। স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো নিয়মিত মঞ্চায়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে যাচ্ছে নাটকটি।

গতকাল বিজয় দিবসেও প্রায় স্বাধীনতার সমান বয়সি এ নাটকটির বিশেষ প্রদর্শনী করা হয়েছিল মহিলা সমিতির মঞ্চে। থিয়েটারের পরিচালক (সাংগঠনিক) রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি প্রতি বছরই বিজয় দিবসে এই নাটকটির প্রদর্শনী করতে। কারণ এই নাটকের সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।’

১৯৮১ সালের ১০ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আইটিআই আয়োজিত পঞ্চম তৃতীয় বিশ্ব নাট্যোৎসবে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’র দুটি প্রদর্শনী হয়। ভারতের বাইরে এটিই ছিল কোনো বাংলাদেশের নাটকের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। ১৯৯০ সালের ২৩ মার্চ নাটকটির ১০০তম প্রদর্শনী হয়। ২০১৬ সালে এই নাটকের ৪০ বছর উদযাপন হয়। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর নাটকটি ২০০তম মঞ্চায়নের গৌরব অর্জন করে। এছাড়া ১৯৮৭ সালের ২৫ মার্চ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশে নাটকটির একটি অভিনয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।

নাটকের গল্পে দেখা যায়, চারদিকে মুক্তিযুদ্ধের দামামা। উদ্বেগ-উত্তেজনা ছোট-বড় সবার মধ্যে। ১৭ গ্রামের নারী-পুরুষ এসেছেন মাতব্বরের কাছে। তাদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। গত রাতেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাতব্বরের সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে সবাইকে আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ভরসা রাখতে বলছেন উপস্থিত লোকজনকে। সহজ-সরল গ্রামবাসী সহজে আশ্বস্ত হতে পারেন না মাতব্বরের কথায়। এভাবে নানা ঘটনার ঘনঘটায় এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। একসময় ঘর থেকে বের হন মাতব্বরের মেয়ে। সবার সামনে বলেন, বাবা জোর করে তাকে ওই রাতে ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পরে সেই বীরাঙ্গনা আত্মাহুতি দেন। অবশ্য নিস্তার মেলেনি রাজাকার মাতব্বরের। নিজের পাইকের হাতেই নির্মমভাবে মারা পড়েন তিনি।

বর্তমানে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা, তোফা হোসেন, ত্রপা মজুমদার, মারুফ কবির, পরেশ আচার্য, সমর দেব, খুরশিদ আলম, নুরুল ইসলাম, রাশেদুল আওয়াল, জোয়ারদার সাইফ, তামান্না ইসলাম, রুনা লায়লা, তানভীর হোসেন সামদানী প্রমুখ। এদের বাইরে চার দশকেরও বেশি সময়ে প্রায় ৭০ জন অভিনেতা বিভিন্ন পর্যায়ে এ নাটকে অভিনয় করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App