×

জাতীয়

বড় আন্দোলনে নামছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৫ পিএম

বড় আন্দোলনে নামছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

ছবি: ভোরের কাগজ

লক্ষাধিক লোক নিয়ে ঢাকামুখী রোডমার্চ ৬ জানুয়ারি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাত দফা দাবিতে আগামী বছরের শুরুতেই মাঠে নেমে বড় আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ স্লোগানে রোড মার্চ করবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। পরদিন ৭ জানুয়ারি ঢাকার শাহবাগে জমায়েত এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেবে সংগঠনটি। বছরের শুরুতেই দুদিনের এই কর্মসূচিতে প্রায় ১ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে চাইছে সংগঠনটি। প্রসঙ্গত, দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসিদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।

শনিবার এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটি ঢাকাশে^রী মন্দিরে প্রতিনিধি সভা করে। এতে সারাদেশের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ যোগ দিয়ে বলেন, দেশ ও দেশের বাইরের সব রাজনৈতিক দল এবং মহলের কাছে আমরা জানান দিতে চাই, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে। আমাদের উদ্বেগ ও দেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি যেভাবে সব রাজনৈতিক দল এবং মানুষকে জানাতে চাই, একইসঙ্গে আজকের বাস্তবতায় গোটা বিশ্ববাসীর কাছেও পরিস্থিতি তুলে ধরতে চাই। লক্ষ্য হলো, দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু জীবনযাপন যাতে করতে না হয়। বক্তারা বলেন, আমরা এখন অনেক সচেতন। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, যে নির্বাচন বা নির্বাচনের ফলাফল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ-অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না, সেই নির্বাচনে যোগ দিয়ে আমাদের কী লাভ? ৭৫-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই আমরা নিরাপত্তা পাইনি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সম্ভাব্য আন্দোলনের কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, আগামী বছরের ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ স্লোগান দিয়ে রোড মার্চ করবো। সারা দেশ থেকে রোড মার্চ করে ঢাকায় এসে শাহবাগ চত্বর বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হবো আমরা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে পদযাত্রা করবো। এটা কোনও কাজে না লাগলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা মহাসমাবেশ করারও চিন্তাভাবনা আছে। সেখানে কয়েক লাখ লোক জমায়েত করার কথা ভাবছি। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাসমাবেশে আমাদের কথাগুলো বলার কথা ভাবছি আমরা। এরপরেও কাজ না হলে আমরণ অনশনে যাবো। এসব কর্মসূচির একটাই লক্ষ্য, যাতে আমরা নির্বাচনের আগেপরে এমন কোনো পরিস্থিতি দেখতে চাই না যেখানে সংখ্যালঘুরা নির্বাচন নিয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হবে। সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।

সংগঠনটির আরেকজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, দাবি-দাওয়া আদায়ের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয়েছে। এজন্য বড় আন্দোলন করতে হবে। এটা আমাদের জীবন-মরণ লড়াই। তারমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য আন্তরিক। তিনি আমাদের সব সমস্যা সমাধান করতে চান। কিন্তু একটি চক্র প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতাকে সহ্য করতে পারছে না। এই চক্রকে ভাঙার পাশাপাশি চক্রান্তকে রুখে দিতে হবে। ১৯৪৭ সাল থেকে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাড়া খাচ্ছে আর ত্যাগ করছে। তারপরেও দাবি আদায় হচ্ছে না। এখন রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলবেন। কিন্তু আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শুনতে চাই।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, দাবি আদায়ে আমরা যেমন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব ঠিক তেমনি আলোচনার পথও খোলা রাখব। ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেন মন্ডল বলেন, আমাদের দাবি আদায়ে যে সমাবেশ করব তাতে শাহবাগে যদি সব থমকে যায় তাতেও আমরা থামব না। এরআগে সংগঠনটির বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক এনসি বাড়ৈ বলেন, বগুড়ার নাম শুনে ঘাবড়ে যাবেন না। আমরা এখনো টিকে আছি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি একা ভালো থাকলে চলবে না। আমাদেরও ভালো রাখতে হবে। সংগঠনটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি বিশ^জিৎ সাধু বলেন, অনেক জেলা প্রশাসক আমাদের বিষয়ে কাজ করতে চান না। এমন মনোবৃত্তির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন নিয়েও ফলাফল পাওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। এসব কারণে হিন্দুরা মনে করে তারা প্রতারিত হয়েছেন।

বক্তারা বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের লড়াইয়ে মাঠে রয়েছি। এর অংশ হিসেবে আড়াই লাখ লোকের সিগনেচার ক্যাম্পেইন করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছি গত মার্চ মাসে। একই দাবিতে জুন মাসে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। গত ২২ অক্টোবর দেশব্যাপী গণঅনশন করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App