×

খেলা

ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ মরক্কো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৪৩ এএম

ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ মরক্কো

ছবি: সংগৃহীত

ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ মরক্কো

ছবি: এএফপি

মরুর বুকে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনাল ম্যাচের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই শিরোপার লড়াইয়ে ফাইনালের দুদল নির্ধারণ হয়ে গেছে। যেখানে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট ফ্রান্স। ফলে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পরাজিত দুদল তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে। আগামীকাল দোহার খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে। যেখানে গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ এবারের বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়া অ্যাটলাস লায়ন্স মরক্কো।

চলতি বিশ্বকাপে একই গ্রুপে ছিল ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো। আল বায়েত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘এফ’ গ্রুপে নিজেদের মধ্যকার ওই ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। পরে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মরক্কো আর রানার্সআপ হয়ে নকআউট রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছিল দল দুটি। নকআউট রাউন্ডে শেষ ষোলোয় জাপান ও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে পরাজিত করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল লুকা মদ্রিচের দল। তবে প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরে শিরোপা স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তাদের। অন্যদিকে নকআউট রাউন্ডে শেষ ষোলোয় স্পেনকে টাইব্রেকারে হারানোর পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় আশরাফ হাকিমিরা। তবে সেমিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে আফ্রিকার দেশটির স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দুদল বিশ্বকাপের আগে অতীতে একবারই পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের প্রীতি টুর্নামেন্টের সেই ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। পরে ক্রোয়াটরা টাইব্রেকারে ৭-৬ গোলে পরাজিত করেছিল মরক্কোকে।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে একটি বিশ্বকাপ ছাড়া সবকটিতেই খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বমঞ্চে তাদের অভিষেক ১৯৯৮ আসরে। সেবার সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরেছিল তারা। সবশেষ ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে দলটি। এবারো তাদের হারিয়ে দেয় ফ্রান্স। অন্যদিকে ষষ্ঠবারের মতো এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেয় মরক্কো। কিন্তু গত ৩৬ বছরে কখনোই গ্রুপ পর্ব পার করতে পারেনি দলটি। ১৯৮৬ সালে শেষ ষোলোতে খেলা তাদের সর্বোচ্চ অর্জন। গত বছর ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩৯ লাখ। ১৯৫০ সালের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ তারা।

বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে টানা তিন ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে জেতা একমাত্র দল ক্রোয়েশিয়া। ২০১৮ সালের ফাইনালে ওঠার পথে শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে এই কীর্তি গড়ে তারা। তিনটি ম্যাচই গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে, যেখানে দুটি ম্যাচ শেষ হয়েছিল টাইব্রেকারে। ছয়বার বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করার পথে বাছাই পর্বে কেবল চারটি ম্যাচ হেরেছে মরক্কো। কাতার আসরে তারা জায়গা করে নিয়েছে বাছাই পর্বে অপরাজিত থেকে।

মরক্কো সেমিফাইনালে খেলবে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমন বাজি ধরার লোক ছিল না বললেই চলে। তারাই একের পর এক চমক উপহার দিয়েছে। তাদের ইতিহাস গড়া পথচলা থেমেছে শেষ চারে। দলটির কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই মনে করছেন, কাতারে যা করেছে মরক্কো তা সহজে মুছে যাওয়ার নয়।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শিরোপাধারী ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে শেষ হয় মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা। তবে আসরজুড়ে যে হার না মানা মানসিকতা দেখিয়েছে দলটি, তা নজর কেড়েছে সবার। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে মরক্কো পায়নি তাদের সেরা একাদশ। চোট পেয়ে আগেই ছিটকে যান ডিফেন্ডার নায়েফ আগের্দ। ম্যাচ শুরুর ২০ মিনিট পর মাঠ ছাড়তে হয় অধিনায়ক ও সেন্টার ব্যাক রোমা সাইসকে।

ফুলব্যাক নুসে মাসাওয়ি ডাগআউট যোগ দেন প্রথমার্ধ শেষে। এই দুজনের চোট শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। ম্যাচের শুরুটা ভালো হয়নি মরক্কোর। পঞ্চম মিনিটে থিও এরনঁদেজের গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। এরপর লড়াই চালিয়ে গেলেও জালের দেখা পায়নি দলটি। বেশ কিছু সুযোগও তৈরি করে তারা, ভীতি ছড়ায় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের শিবিরে। এর মাঝে ৭৯ মিনিটে রন্দাল কোলো মুয়ানির গোলে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় আরব ও আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা মরক্কো।

ম্যাচ শেষে দলটির কোচ রেগরাগুই বলেন, এই হার তাদের বিগত সাফল্যকে বিলীন করে দিচ্ছে না, ‘আমরা সর্বোচ্চটা দিয়েছি, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কিছু চোট সমস্যা ছিল, ওয়ার্মআপে আগের্দকে হারিয়েছি। তবে কোনো অজুহাত দিচ্ছি না। সামান্য ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে আমাদের। ভালো শুরু করতে পারিনি, প্রথমার্ধে বেশ কিছু কৌশলগত বাজে পদক্ষেপ ছিল। দ্বিতীয় গোলটি আমাদের ছিটকে দেয়। কিন্তু এই হার আমরা আগে যা করেছি তার সবকিছু বাতিল করে দেয় না।’

মরক্কোকে ফুটবলবিশ্ব মনে রাখবে অনেক দিন। রেগরাগুই এবার তাকিয়ে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের দিকে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। তার ভাষ্য, ‘মানসিক দিক থেকে এটা হবে কঠিন। যারা খেলার সুযোগ পায়নি, আমি তাদের সুযোগ দেব এবং আমরা তৃতীয় হওয়ার চেষ্টা করব। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আমরা আমাদের দলকে ভালোভাবে উপস্থাপন করেছি। মরক্কোর ফুটবল শীর্ষ পর্যায় থেকে খুব বেশি দূরে নয়।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App