×

খেলা

৩ যুগের অপেক্ষা ঘোচাতে মরিয়া আর্জেন্টিনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪৬ এএম

৩ যুগের অপেক্ষা ঘোচাতে মরিয়া আর্জেন্টিনা

ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৬ সালে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনা কাতারে তিন যুগের অপেক্ষা ঘোচাতে মরিয়া। ফাইনালের টিকেট নিশ্চিতের ম্যাচে মেসিদের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি ক্রোয়েশিয়া। বরং ম্যাচের ৬৯ মিনিটের মধ্যে তাদের জালে ৩ গোল জড়িয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রতিশোধ তুলে নেয় আর্জেন্টিনা। ২০১৮ সালে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে লুকা মড্রিচরা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। সেমিতে সেই বদলা নিয়েছে আলবিসেলেস্তেরা।

তৃতীয় শিরোপা জয়ের আশায় আর্জেন্টিনা ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল। সেবার জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল মেসিরা। এবার তিন যুগ পর সেই ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র অধরা শিরোপা জিতে দেশে ফিরতে মরিয়া স্কালোনির শিষ্যরা। ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার একক নৈপুণ্যে জেতা বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার জেতা শেষ বিশ্বকাপ। এরপর শুধুই আশাভঙ্গের গল্প। লিওনেল মেসি বলছেন, প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারটাই তাদের শক্তিশালী করে তুলেছে।

এবার মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান ব্রাজিল কিংবদন্তি রিভালদো পেরেইরাও। ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মেসির জন্য শুভকামনা জানিয়ে লেখেন, ‘ব্রাজিল আর নেইমার না থাকায় আমি এখন আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছি। মেসি, আরো আগেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তোমার প্রাপ্য ছিল। তবে স্রষ্টা সব জানেন, আগামী রবিবার তোমার মাথায় উঠবে সেই মুকুট। তুমি যে ধরনের ব্যক্তিত্ব, আর সব সময় যে সুন্দর ফুটবল খেলে এসেছ, এ ট্রফি তোমার প্রাপ্য। তোমাকে টুপিখোলা অভিনন্দন। স্রষ্টা তোমার মঙ্গল করুন।’

মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার অপেক্ষায় তার বন্ধু ও সাবেক সতীর্থ লুইস সুয়ারেজও। সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘তুমি যে বিশ্বসেরা, সেটি দেখাতে কখনো ক্লান্তি বোধ করনি। এই ছেলে ফুটবলকে যা দিয়েছে, গোটা বিশ্ব তাকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিক।’

আট বছর আগে মারাকানার মাঠের ফলটা নতুন করে বদলে দেয়ার সুযোগ নেই আর। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হেরে শিরোপার দিকে লিওনেল মেসির ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকার ছবিটা আজও সমর্থকদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। তবে অপূর্ণতা দূর করার আরো একটি সুযোগ মেসির সামনে। সিজার লুই মেনোত্তি, কার্লোস বিলার্দো এই নাম দুটি আর্জেন্টিনার দুই নেপথ্য নায়কের। আর্জেন্টিনার দুই বিশ্বজয়ের রূপকারের। ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে মেনোত্তির অধীনে বিশ্বকাপ জিতেছিল দানিয়েল পাসারেলার আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬-তে এসে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার ‘গুরু’ বিলার্দো।

এবার লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতালে মেনোত্তি আর বিলার্দোর মতোই ইতিহাসে ঠাঁই পাবেন। ঐতিহাসিক সেই অর্জন থেকে স্কালোনি যে আছেন মাত্র এক ধাপ দূরে। ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে তৃতীয় শিরোপা থেকে একটি জয়ের দূরত্ব আর্জেন্টিনার। শেষটা কি রাঙাতে পারবেন লিওনেল মেসি? আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেন, ‘কঠিন লড়াইয়ের পর আমরা মাত্র এক ধাপ পেছনে রয়েছি। এবার শিরোপা জিততে নিজেদের উজাড় করে দেব আমরা।’ আগামী ১৮ই ডিসেম্বর বিশ্বকাপের ফাইনাল। রাত ৯টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে শুরু হবে ম্যাচটি। যে ফাইনালের পথে ৫ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট করে আরেকবার মঞ্চায়ন করেছেন নিজের শ্রেষ্ঠত্বেরও।

গুঞ্জন ছিল কাতার আসর লিওনেল মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। সেমিফাইনাল জিতে আর্জেন্টাইন সুপারস্টার জানালেন, বিশ্বকাপের ফাইনালেই তৈরি হবে তার বিদায়ের মঞ্চ। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম দিয়ারিও ডেপোর্তিভো ওলেকে মেসি বলেন, ‘বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত।’

লিওনেল মেসির বয়স ৩৫ বছর। ২০২৬ বিশ্বকাপে তার বয়স থাকবে ৩৯। মেসি মনে করেন, সেই বয়সে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলা কঠিন। তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিশ্বকাপ আসতে অনেক দেরি। আমার মনে হয় না আমি সেখানে অংশ নিতে পারব। (ফাইনাল খেলে) এভাবে বিদায় নেয়াই সর্বোত্তম উপায়।’

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় হোর্হে সাম্পাওলির আর্জেন্টিনা। স্কালোনি তখন তার সহযোগী। রীতিমতো বিস্ফোরণই ঘটল দলে। বিদায়ঘণ্টা বাজল সাম্পাওলির। মেসি হাঁটা ধরলেন উল্টো পথে। এই দুঃসময়ে স্কালোনিতে আস্থা রাখল আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন। ‘অখ্যাত এবং অনভিজ্ঞ’ এক কোচের হাতে দলের হাল তুলে দেয়ায় তুলোধুনো হতে থাকল এএফএফ। দূরত্ব বজায় রাখলেন মেসিও। ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চারজন ভিন্ন ভিন্ন কোচের অধীনে বিশ্বকাপে খেলেছেন মেসি- হোসে পেকারম্যান, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, আলেহান্দ্রো সাবেয়া আর হোর্হে সাম্পাওলি স্কালোনি। ওই চারজনের সঙ্গে কী পার্থক্য চোখে পড়ছে মেসির? কাতার বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে স্কালোনি রসায়নটাও জমেছে বেশ।

মেসির চেয়ে মাত্র ৯ বছরের বড় স্কালোনিও থাকলেন চুপচাপ। আর্জেন্টিনার হাল ধরার সময় তার সঙ্গে ছিলেন পাবলো আইমার, সাবেক এই তারকা মিডফিল্ডারই বরফ গলালেন। তাতে ২৫০ দিন পর ২০১৯ সালের ২২ মার্চ ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আকাশি নীল-সাদা জার্সিতে ফিরলেন দলের প্রাণভোমরা মেসি।

বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত মোট ১০ বার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মেসি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম কোনো খেলোয়াড় এই কীর্তি দেখালেন। সর্বোচ্চ ম্যাচসেরা হওয়ার তালিকায় মেসির পরেই রয়েছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বিশ্বকাপে সিআরসেভেনের ৭টি ম্যাচসেরার পুরস্কার রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের আগের ৪ আসর মিলিয়ে মোট ৬ বার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মেসি।

এবার গ্রুপ পর্বে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেরা হয়ে ছাড়িয়ে যান রোনালদোকে। এরপর কোয়ার্টার এবং সেমিতেও সেরার পুরস্কার জিতলেন মেসি। এই তালিকায় তিনে রয়েছেন নেদারল্যান্ডসের সাবেক ফুটবলার আরিয়ান রুবেন। বিশ্বকাপের ৬ ম্যাচে সেরা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার।

ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দুই আসরে চারবার করে ম্যাচসেরা হওয়ার কীর্তি গড়লেন সাত ব্যালন ডি’অরের মালিক। কাতার আসরের আগে ২০১৪ বিশ্বকাপেও চার ম্যাচে সেরা হয়েছিলেন মেসি। এছাড়া ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডসের সাবেক ফুটবলার ওয়েসলে স্নেইডার চার ম্যাচে সেরা হওয়ার কীর্তি দেখিয়েছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App