×

সম্পাদকীয়

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন দ্রুত শেষ হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৯ এএম

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন দ্রুত শেষ হোক

প্রতি বছর ঘটা করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দালিলিক কাজ এগোচ্ছে না। স্বাধীনতার ৫১ বছরেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা সম্ভব হয়নি। ঠিক করতে পারেনি শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা নির্ধারণ। এটা দুঃখজনক। ধীরগতিতে চলছে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ। এ বছরের জুন মাসে দ্বিতীয় পর্বের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখন তৃতীয় পর্বের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখা ২০ জুন তালিকার দ্বিতীয় পর্বে ১৪৩ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এ নিয়ে দুই পর্বে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৩৪ জন। এর আগে গত বছরের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে তালিকার প্রথম পর্বে ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করেন। একই বছর ২৭ মে তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শাসকচক্রের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিকনির্দেশক এবং সোচ্চার কণ্ঠ। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ, সর্বোপরি একটি সুখী-সমৃদ্ধি প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা তারা লালন করতেন। পাকিস্তানি কুচক্রী ও এ দেশে তাদের দোসর ধর্মান্ধ গোষ্ঠী যখন আঁচ করতে পারল বাঙালির স্বাধীনতা সমাসন্ন, তখন তারা জাতির দিকপালদের হত্যা করল যেন বাঙালি জাতি প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে; যেন সদ্য স্বাধীন দেশটি সুস্থ চেতনা ও বিচার-বুদ্ধির পথভ্রষ্ট হয়ে নিঃস্ব, দুর্বল ও নির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে অঙ্কুরেই দুর্বল করে দিতে এক হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তাদের বাসা থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। সারাদেশে কতজন বুদ্ধিজীবী এমন বর্বর হত্যাকণ্ডের শিকার হয়েছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্নভাবে তালিকা করার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা হয়েছিল। পরে ডাক বিভাগ ১৫২ জন শহীদের ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে। আরো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা হয়েছে। কিছু বেসরকারি উদ্যোগেও গবেষণা হয়েছে, সে তালিকাও সহায়ক হতে পারে। বাংলাপিডিয়ার হিসাব বলছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়। ১৪৯ জন। সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা না করে যদি জনসংখ্যা আর মৃত্যুর হার হিসেবে হিসাব করা হয় তাহলে ঢাকার বাইরে জেলাতে আরো বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যার তথ্য বেরিয়ে আসবে। শুধু ১৪ ডিসেম্বর নয় বরং ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাঙালিদের ওপর গণহত্যার পর থেকে শুরু করে পরবর্তী ৯ মাস ধরে চলা মুক্তিযুদ্ধ- পুরোটা সময়েই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। ওই সময়কার নিহতদের তালিকাও প্রণয়ন জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App