×

জাতীয়

রোটা ভাইরাস সংক্রমণে শিশুদের ডায়রিয়া বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৭ পিএম

রোটা ভাইরাস সংক্রমণে শিশুদের ডায়রিয়া বাড়ছে

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপুরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। তার ১০ মাস বয়সি ছেলে যুবায়ের ৩ দিন যাবত পাতলা পায়খানা ও বমি করছে। স্যালাইন খাওয়ানোর পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বাধ্য হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। জাকির জানালেন, ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করাতে বলেছেন। রোটা ভাইরাসের টেস্টও দিয়েছেন। পরীক্ষার জন্য মলের নমুনা দেয়া হয়েছে। এখন রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন তিনি।

রামপুরার বাসিন্দা রেজাউল করিম শামীম। পেশায় সাংবাদিক। শামীম বলেন, আমার সাড়ে ৩ মাসের মেয়ে সারা প্রায় ১০/১২ দিন ধরে ডায়রিয়া ভুগছে। যা খাচ্ছে তাই বের হয়ে যাচ্ছে। এত দিনেও মেয়ের ডায়রিয়া বন্ধ হচ্ছে না। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে দিয়েছেন। রোটা ভাইরাস টেস্টের পরামর্শও দিয়েছেন। রোটা ভাইরাস টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অন্যসব রিপোর্টও হাতে পেয়েছি। রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাব।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি বেড়েছে। তবে এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। জানা গেছে, সাধারণ সময় আইসিডিডিআর,বিতে দৈনিক গড়ে ৩শ থেকে ৪শ রোগী ভর্তি হয়, এখন তা ৪শ থেকে ৫শ। গত সপ্তাহে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৭শ থেকে ৮শ। বিশ্বে শিশুমৃত্যুর চতুর্থ কারণ ডায়রিয়া। রোটা ভাইরাস ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। নবজাতক এবং শিশুরা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়। শীত যত বেশি পড়ে, রোটা ভাইরাসে শিশুর আক্রান্তের হারও তত বাড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাদিনে ৩ বার বা এর বেশি পানির মতো পায়খানা হলে ডায়রিয়া বলা যেতে পারে। এটি ভাইরাস (রোটা, এডিনো ভাইরাস), ব্যাকটেরিয়া (সালমনেলা, সিগেলা, ইকোলাই) ও পরজীবী (জিয়ারডিয়া) দ্বারা সংঘটিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত মৌসুমে ভাইরাসজনিত কারণে যে ৩টি সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে তার মধ্যে রোটা ভাইরাস অন্যতম। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয় বেশি। আর ২ বছরের কম বয়সি শিশুরা আরো বেশি ঝুঁকিতে থাকে। সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি- এই ৪ মাসে রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেশি থাকে। মোট আক্রান্তের প্রায় ৮০ ভাগই এই সময়ে হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, রোটা ভাইরাস হলো এক ধরনের ভাইরাস যা শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ। এই রোগটি পানিবাহিত। মলদ্বারা দূষিত পানি বা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই ভাইরাস সহজেই ছড়াতে পারে। এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের এন্টারোসাইট নামক কোষকে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে ও গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস করে যা ‘স্টোমাক ফ্লু’ নামে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে বিশ্বের প্রতিটি শিশু তাদের জীবনের প্রথম ৫ বছরে একবারের জন্য হলেও রোটা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। প্রতিবার সংক্রমণের ক্ষেত্রে শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হয় তাই দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো ততটা তীব্র হয় না। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রোটা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা বিরল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হয়।

এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। বড়দের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটি খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের রোটা ভাইরাস প্রতিরোধক্ষমতা যথেষ্ট থাকে। রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে শিশুরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে বর্তমানে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। জানা যায়, রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে হাসপাতালগুলোতে রোটা রিক্স ও রোটা টেক নামে দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে। যে কোনো একটি ভ্যাকসিন নিয়েই শিশুকে ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখা যায়। রোটা টেক ৩ ডোজ আর রোটা রিক্স ২ ডোজ নিতে হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাফিসা আবেদীন বলেন, বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। তবে মূলত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হয়। আর শীতে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ রোটা ভাইরাস।

এ সময় অবশ্যই যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে খাবার এবং পানীয় পানের সময়। রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে মায়ের দুধ খুবই কার্যকর। যেসব শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। আর ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। এর ফলে শিশু আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকিতে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App