×

খেলা

ফের এমবাপ্পে শো, নাকি এটলাস লায়নদের হুঙ্কার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২২ এএম

ফের এমবাপ্পে শো, নাকি এটলাস লায়নদের হুঙ্কার

ছবি: সংগৃহীত

সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তেমনি কাতার বিশ্বকাপ দেখতে দেখতে প্রায় শেষের পথে। ইতোমধ্যে দলের সংখ্যা ৩২ থেকে ছোট হয়ে এসেছে ৩ এ। সেইসঙ্গে বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ বাকি আছে, দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ও ফাইনাল। আজ দ্বিতীয় ও শেষ সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে মরক্কো। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এই দুদল বেশ দাপটে খেলেই সেমিতে পা রেখেছে। কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য নতুন বল উন্মুক্ত করেছে ফিফা। বলের নাম ‘আল হিল্ম’। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ব্যবহৃত বলের নাম ছিল ‘আল রিহলা’। সেমিতে ফ্রান্সকে থামিয়ে দিতে মরিয়া আটলাস সিংহরা।

এবার কাতার বিশ্বকাপে মরক্কো সিংহের মতোই হুঙ্কার দিয়ে এগোচ্ছে। প্রথম পর্ব, শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালের চৌকাঠ পেরিয়ে তারা এখন সেমিফাইনালে। শেষ চারে নাম লেখানোর মধ্য দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে তারা। সে ইতিহাস কেবল মরক্কোর নয়, পুরো আফ্রিকার। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম দল যে মরক্কো! আরব দেশের সদস্য দেশটির এ কীর্তিগাথায় আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আফ্রিকা। নিজেদের এবং আফ্রিকার ফুটবলকে আর কত উঁচুতে তুলতে পারবেন তারা, তাই আজ দেখার বিষয়? সেমিফাইনালে মরক্কোর জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আশরাফ হাকিমিদের সামনে ছন্দে থাকা ফ্রান্সের আক্রমণ ত্রয়ী। ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের তালিকায় শীর্ষে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুদ গোল করেছেন ৪টি, যার মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের জয়সূচক গোল। এখন পর্যন্ত গোলের দেখা না পেলেও দারুণ খেলছেন ফরোয়ার্ড অঁতোয়ান গ্রিজম্যান। ইংলিশদের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচে দুটি অ্যাসিস্টই করেন তিনি। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশম বলেছেন, আসরের এই পর্যায়ের লড়াইয়ে ছোট ছোট বিষয়গুলো নির্ধারক হয়ে ওঠে। কেবল মানসম্পন্ন হলেই তা যথেষ্ট নয়। তবে এই স্কোয়াডের মানসিক শক্তি আছে এবং অল্প হলেও অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ মরক্কোর বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলতে যাবার আগে এবারের বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচেই নিজেদের গোলবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারেনি ফ্রান্স। মরক্কোর বিপক্ষে তাই বাড়তি সতর্কতা নিতেই হচ্ছে দেশমকে। বিশেষ করে সুযোগ পেলে তা কাজে লাগানোর দক্ষতা এবার মরক্কো প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রমাণ করেছে। ফলে ফ্রান্সের রক্ষণভাগ নিয়ে দেশমকে নতুন করে ছক কষতে হবে।

সেমিতে খেলা হচ্ছে ‘আল হিল্ম’ বল দিয়ে। ‘আল হিল্ম’ এর অর্থ হচ্ছে স্বপ্ন। ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জয়ে স্বপ্ন দেখছে ফ্রান্স। অন্যদিকে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে আফ্রিকান সিংহরা।

বিশ্বকাপে সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে ফেভারিট ফ্রান্সেরও। এ নিয়ে ১৬তম বারের মতো অংশ নিচ্ছে তারা। ১৯৯৮ সালে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফরাসিরা। আর সবশেষ ২০১৮ আসরেও সেরার মুকুট মাথায় পড়েছে তারা। এছাড়া একবার হয়েছে রানার্সআপ। সেরা চারে এর আগে ৬ বার উঠে তিনবারই বিদায় নিয়েছে ফ্রান্স। ইউরোপীয় জায়ান্টদের বধ করে ইতোমধ্যে কয়েক দফা উৎসব করেছে মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে তারা। তবে এখনো থামতে চায় না উজ্জীবিত দলটা। বেলজিয়াম-স্পেন-পর্তুগাল বধ করা মরক্কানরা অপেক্ষায় মহোৎসবের। হাকিমি-নেসিরি-জিয়েখরা কি তাদের সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন? নাকি জায়ান্ট তকমাধারী ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা কিংবা ক্রোয়েশিয়াই ছিনিয়ে নেবে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ট্রফি?

মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বোনোর জন্ম কানাডায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা, ফুটবলার হয়ে ওঠা। স্পেনের মাদ্রিদে জন্ম নেয়া পিএসজি তারকা আশরাফ হাকিমি, দলের বড় তারকাই। নেদারল্যান্ডসে জন্ম নিয়ে মরক্কান জাতীয় দলে খেলতে এসেছেন সোফিয়ান আমরাবাত। ফ্রান্সে জন্ম নেয়া সোফিফান বুফাল দলের আক্রমণের অন্যতম চালিকাশক্তি। আরেক তারকা হাকিম জিয়েশেরও নেদারল্যান্ডসে জন্ম ও বেড়ে ওঠা।

মরক্কান জাতীয় ফুটবল দল কয়েক বছর ধরেই সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা নিয়ে এগিয়েছে। ইউরোপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা, ইউরোপের মাটিতে জন্ম নেয়া মরক্কান প্রতিভাদের এক সুতায় গাঁথাই হচ্ছে সেই নীতিমালা। এবারের মরক্কান দলের ২৬ জনের স্কোয়াডে ১৪ জনই ইউরোপ বা বিদেশের মাটিতে জন্ম নেয়া ফুটবলার। এরাই মরক্কোকে হাঁটিয়েছেন অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পথে।

১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে প্রথম খেলা মরক্কোকে এর পরের বিশ্বকাপ খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৮৬ পর্যন্ত। মেক্সিকোতেই আরেক বিশ্বকাপে আফ্রিকার অন্যতম প্রতিনিধিরা খেলেছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে। এরপর ১৯৯৪, ১৯৯৮ তে চূড়ান্তপর্বে খেললেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। আটানব্বইয়ের পর দীর্ঘ একটা বিরতি। ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪ চারটি বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে আসতে পারেনি তারা। রাশিয়ায় ২০১৮ সালে ভালো খেলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে না পারাটা ছিল মরক্কোর জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এবার অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সেমিফাইনালে তারা। অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালটা মরক্কো এবং আর্জেন্টিনা বা ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে হলে হতেও পারে। ফুটবল অবশ্য এইসব সমীকরণ মানে না। দিন যার, ম্যাচ তার। ফ্রান্স-মরক্কো সেমিফাইনালের দিনটা মরক্কোর হবে না- কে বলতে পারে?

এই বিশ্বকাপে মরক্কোর জালে প্রতিপক্ষরা বল পাঠাতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে কানাডার কাছে একটি গোল তারা খেয়েছিল, সেটা ছিল আত্মঘাতী। এরই মধ্যে যারা মরক্কোর সমর্থক হয়ে গেছেন তাদের জন্য আরো মজার তথ্য হলো, এই বিশ্বকাপে কোন ম্যাচ তো নয়ই, এমনকি তারা আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বশেষ ১০ ম্যাচের একটিও হারেনি। টানা ৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল মরক্কো। বিশ্বকাপে টানা ৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকায় না হারার সংখ্যাটা এখন ১০।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App