×

খেলা

আক্রমণে ফ্রান্স এগিয়ে, রক্ষণে মরক্কো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০৩ পিএম

আক্রমণে ফ্রান্স এগিয়ে, রক্ষণে মরক্কো

কাতার বিশ্বকাপের শেষ চার পর্যন্ত পৌঁছাতে ফ্রান্স-মরক্কো দুদলকেই চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিন্তু সেই পরীক্ষাই শেষ নয়। আল বায়েত স্টেডিয়ামে আজ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, বাঁচামরার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স-মরক্কো।

একটা ফুটবল দল ঠিক ততটাই ভালো, যতটা ভালো এর কোচ। সেমিফাইনালেও ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম ও মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই এর কৌশলের দিকে চোখ থাকবে সবার। কী ছকে তারা দলকে খেলান, একে অন্যকে হারানোর জন্য কী কৌশল নেন, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। ৬০ বছর আগে সবশেষ ব্রাজিল টানা দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছিল। তাদের সেই রেকর্ড ছুঁতে ফ্রান্সের প্রয়োজন আর দুটি জয়। অন্যদিকে মরক্কোর জন্য অবশ্য খুব বেশি ভাবনার কিছু নেই। ইতিহাস গড়া দলটির পথচলা সেমিফাইনালে শেষ হলেও দেশে বীরের মর্যাদাই অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের খেলা অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে মরক্কো উঠে আসবে এমনটা কেউ ভেবে দেখেনি। একের পর এক চমক দেখানো আর অঘটনের জন্ম দেয়া আফ্রিকার দলটি সামনে রয়েছে এবার বিশ্বকাপ জয় করে আরো একবার ফুটবল বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়ার সুযোগ। তবে শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকায় ফেভারিট হিসেবেই খেলবে ফরাসিরা। সেমিফাইনালের এই লড়াইয়ের মাঝেও থাকবে বেশ কিছু লড়াই। যেমন লড়াই হবে এমবাপ্পে ও মরক্কান রাইট ব্যাক আশরাফ হাকিমির মধ্যে। পিএসজির এই দুই খেলোয়াড় মাঠের বাইরে ভালো বন্ধু। তবে ফাইনালে যাওয়ার যুদ্ধে দুজনই চাইবেন একে অন্যের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ দলকে জেতাতে। আবার মরক্কোর ডান দিক দিয়ে প্রতি আক্রমণে ওঠার ক্ষেত্রে হাকিমি ও উইঙ্গার হাকিম জিয়াশের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এই ম্যাচে। কেননা এমবাপ্পেকে আটকাতে তাদের ব্যস্ত সময় পার করতে হবে।

সেমিফাইনালে মরক্কোর জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আশরাফ হাকিমিদের সামনে ছন্দে থাকা ফ্রান্সের আক্রমণ ত্রয়ী। ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের তালিকায় শীর্ষে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুড গোল করেছেন ৪টি, যার মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের জয়সূচক গোল। এখন পর্যন্ত গোলের দেখা না পেলেও দারুণ খেলছেন ফরোয়ার্ড অঁতোয়ান গ্রিজমান। ইংলিশদের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচে দুটি অ্যাসিস্টই করেন তিনি। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশম বলেন, ‘আসরের এই পর্যায়ের লড়াইয়ে ছোট ছোট বিষয়গুলো নির্ধারক হয়ে ওঠে। কেবল মানসম্পন্ন হলেই তা যথেষ্ট নয়। তবে এই স্কোয়াডের মানসিক শক্তি আছে এবং অল্প হলেও অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

মরক্কোর বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে খেলতে যাবার আগে এবারের বিশ্বকাপে কোন ম্যাচেই নিজেদের গোলবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারেনি ফ্রান্স। মরক্কোর বিপক্ষে তাই বাড়তি সতর্কতা নিতেই হচ্ছে দেশমকে। বিশেষ করে সুযোগ পেলে তা কাজে লাগানোর দক্ষতা এবার মরক্কো প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রমাণ করেছে। ফলে ফ্রান্সের রক্ষণভাগ নিয়ে দেশমকে নতুন করে ছক কষতে হবে।

সেমির এই লড়াইয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে মরক্কোর জমাট রক্ষণের বিপক্ষে ফ্রান্সের ফর্মে থাকা আক্রমণভাগের পারফরম্যান্স। গ্রুপ পর্বে মরক্কোর সঙ্গী ছিল ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডা। সেখান থেকে দলটি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে তা হয়তো ভাবতে পারেননি তাদের সবচেয়ে বড় ভক্তও। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে অপরাজিত থেকে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয় উত্তর আফ্রিকার দেশটি। এরপর টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে প্রথম আরব দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পায় মরক্কো।

স্বপ্নের পথচলায় শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রোনালদোর পর্তুগাল। ওই লড়াইয়ে ১-০ গোলে জিতে ইতিহাস গড়ে হাকিমি-জিয়াশরা। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে জায়গা করে সেমিফাইনালে। মরক্কোর এমন অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রেখেছে রক্ষণে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। এখন পর্যন্ত আসরে পাঁচ ম্যাচে একটি গোল হজম করেছে তারা, সেটিও ছিল কানাডার বিপক্ষে আতœঘাতী গোল। শেষ ষোলো পর্যন্ত আসরে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিল পর্তুগাল, ১২টি। নকআউট পর্বের প্রথম ধাপে তারা ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সুইজারল্যান্ডকে। ফার্নান্দো সান্তোসের সেই দলকেই দারুণভাবে বেঁধে রেখে ১-০ গোলের জয় তুলে নেয় মরক্কো। শেষ চারে খেলতে নামার আগে ফ্রান্স দলে কোনো ইনজুরি কিংবা নিষেধাজ্ঞা নেই। রাইট-ব্যাকে বেঞ্জামিন পাভার্ডের স্থানে জুলেস কুন্ডে মূল দলে দুর্দান্ত খেলছেন। ভাই লুকাস ফার্নান্দেজের ইনজুরির সুবাদে দলে জায়গা পাওয়া থিও ফার্নান্দেজও নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। আজ গোল করতে পারলে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সি খেলোয়াড় হিসেবে এক আসরে পাঁচ গোলের রেকর্ড গড়বেন ফ্রান্সের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুড।

অন্যদিকে পর্তুগালের বিপক্ষে হলুদ কার্ড পাওয়া মরক্কান স্ট্রাইকার ওয়ালিদ চেডিরা সেমিফাইনালে খেলতে পারছেন না। ইনজুরির কারণে ওয়েস্ট হ্যামের অগার্ড আগের ম্যাচে খেলতে না পারলেও তিনি দলে ফিরছেন। কারণ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে রোমেইন সেইসকে দলে পাচ্ছেন না রেগরাগুই। যদিও সেমিফাইনালের আগে নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেইস। এছাড়া মূল একাদশের জন্য নিজেকে ফিট করে তুলেছেন অভিজ্ঞ হাকিম জিয়াশ।

মরক্কো কোচ ওয়ালিদ রেগারাগির বিশ্বাস, তাদের সাফল্য পিছিয়ে থাকা দলগুলোকে একটা বার্তা দিতে পেরেছে, ‘এই বিশ্বকাপে আমরা এমন একটা দল হয়ে উঠছি, যাদের সবাই পছন্দ করছে। কারণ আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি যে, (প্রতিপক্ষের মতো) অনেক বেশি প্রতিভা ও অর্থ না থাকলেও সফল হওয়া যায়।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App