×

আন্তর্জাতিক

ভূরাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০৮ এএম

ভূরাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ

ছবি: সংগৃহীত

দেড় হাজার বছর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছিলেন, জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যাও। চীনের সঙ্গে ইসলামের ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক একদম ভালো ছিল না। বরং পশ্চিমা দেশ বা মার্কিনিদের সঙ্গে ছিল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সুসম্পর্ক।

কিন্তু ভূ-রাজনীতির পালা বদলে গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। বরফ জমেছে সৌদি- মার্কিন উষ্ণ সম্পর্কে। বরং উষ্ণতা বেড়েছে রাশিয়া-চীন-সৌদি মেরুতে। এই পালে হাওয়া লেগেছে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যখন রাশিয়া সফর করেন তখনই। আরো বেশি গতি পায় যখন রাশিয়ার স্বার্থে সৌদি আরব তেল উত্তোলনে মার্কিন অনুরোধ উপেক্ষা করে পরিমাণ কমিয়ে আনে, তখন থেকে। সর্বশেষ মরুর বুকে ঝড় তোলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাজকীয় ও রাজনৈতিক সফর।

উচ্ছ্বাস শিকে নিয়ে : চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৭ বছর পর সৌদি আরব সফরে গেলে তাকে নিয়ে আরব বিশ্বের নেতাদের মধ্যে যে মাত্রার আগ্রহ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তার নজির বিরল। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা জোটের (জিসিসি) সব দেশের নেতা প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে বৈঠকের জন্য রিয়াদে আসেন। পরে গত শুক্রবার চীন-আরব শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে রিয়াদে হাজির হন মিসর, তিউনিশিয়া, লেবানন, ইরাক এবং সুদানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

যুক্তরাষ্ট্রের আঁতে ঘা : প্রেসিডেন্ট শির এই সফর এবং তাকে নিয়ে সৌদি আরবসহ আরব নেতাদের এই মাতামাতি যুক্তরাষ্ট্রের যে আঁতে ঘা লেগেছে, এবং একবারেই পছন্দ হয়নি তাতে সন্দেহ নেই। কারণ জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ আরব অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে তাদের প্রভাব বলয়ের অন্যতম মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে। যে দেশের নেতাকে নিয়ে সেখানে এত উদ্দীপনা সেই চীন বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী। লন্ডনে মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, সৌদি আরব এ বছরের শুরুর দিকেই চীনা প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বার বার রিয়াদের কাছে এ নিয়ে আপত্তি জানানো হয়। শুধু চীনা প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণই নয়, জুলাইতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জেদ্দায় গিয়ে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করলেও ক্ষমতাধর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সে বিষয়ে গুরুত্ব দেননি।

কেন এই দূরত্ব : ২০১৭ সালে সৌদি আরবের ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর যুবরাজ সালমান আধুনিক এবং স্বাবলম্বী একটি দেশে পরিণত করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। এজন্য গুপ্তচরবৃত্তিতে সংশ্লিষ্টতার যুক্তিতে চীনা যে টেলিকম কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করেছে, সেই হুয়াওয়ে সৌদি আরব এবং ইউএইসহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক বসিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি প্রশাসনের সম্পর্ক শীতল হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যুবরাজ সালমানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সম্পর্কের টানাপড়েন। খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য যেন যুবরাজ সালমানকে কখনো যুক্তরাষ্ট্রে মামলায় না পড়তে হয় তার নিশ্চয়তা চেয়ে সৌদি রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসের কাছে অনুরোধ করা হলেও এখনো কোনো নিশ্চয়তা বাইডেন দেননি। জো বাইডেন যখন জেদ্দায় আসেন তাদের দুজনের মধ্যে করমর্দন পর্যন্ত হয়নি। এখন মোহাম্মদ সালমান চীনা প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসে আমেরিকানদের দেখাতে চেয়েছেন, তিনি নতুন এক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পথ নিয়েছেন। শুধু তিনি নিজে নয়, অন্য আরব নেতাদেরও তিনি এই পথে আনছেন।

চীনের দিকে ঝুঁকছে কেন : এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করার মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে চীন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী চীন।

চীন রাজনীতি চায় না : সৌদি আরবের সঙ্গে চীনের মিত্রতার ক্ষেত্রে বড় যে বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে, তা হলো বেইজিং কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকটিতেই গুরুত্ব দেয়। মিত্রদের ওপর রাজনৈতিক কোনো চাপ প্রয়োগ করে না। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য উপায়ে রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধে জড়াতে সৌদি আরবের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে।

বাইডেন আফ্রিকায় হাত বাড়ালেন : অন্যদিকে এতদিন আফ্রিকার দেশগুলোতে একচেটিয়া ব্যবসা ও বিনিয়োগে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল রাশিয়া ও চীনের। চীন-রাশিয়ারকে পাল্লা দিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিপরীতে আরেকটা নতুন বাজার ধরতে মার্কিন প্রশাসন এখন আফ্রিকার দিকে হাত বাড়িয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই মার্কিন এবং আফ্রিকান নেতাদের মধ্যে আস্থার ব্যবধান সংকুচিত করার জন্য আজ ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর মার্কিন-আফ্রিকা সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন বাইডেন। ওয়াশিংটনে কয়েক ডজন আফ্রিকান নেতার সঙ্গে হোয়াইট হাউসের একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে এই সম্মেলনের উদ্যোগ বলে মনে করছেন অনেকেই। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মতে, করোনা ভাইরাস, জলবায়ু পরিবর্তন, আফ্রিকায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব, বাণিজ্য এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App