×

জাতীয়

বাজারে বিক্রি হচ্ছে চিকিৎসা-বর্জ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:০৪ পিএম

বাজারে বিক্রি হচ্ছে চিকিৎসা-বর্জ্য

ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দাবি করেছে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ ও ঠিকাদারদের একটি চক্র অপরিশোধিত চিকিৎসা-বর্জ্য আবার বাজারে ফিরিয়ে আনছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে এক অনুষ্ঠানে ‘চিকিৎসা–বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ করে টিআইবি। অনুষ্ঠানটি অনলাইনে আয়োজন করা হয়। এতে জানানো হয়, চিকিৎসা–বর্জ্য নিয়ে এক গবেষণায় এই দুর্নীতি-অনিয়ম পেয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চিকিৎসা–বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অরাজক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আইনে দুর্বলতা আছে। চিকিৎসা–বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হয়নি। এই কাজে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে।

টিআইবি জানায়, সংস্থাটি দুই শতাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করেছে। এছাড়া তারা চিকিৎসা–বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। গবেষণার তথ্য সংগ্রহের কাজটি হয়েছে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ হাসপাতালে চিকিৎসা–বর্জ্য রাখার জন্য পাত্র নেই। ৮৩ শতাংশ হাসপাতালে বর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া চিকিৎসা–বর্জ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, পরিশোধন-সব ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনবলের সংকট রয়েছে। যে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেই নিয়োগেও আর্থিক দুর্নীতি ছিল। দুর্নীতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত।

টিআইবি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তা হলো: ১. চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়, তদারকি ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে ‘কর্তৃপক্ষ’ গঠন করতে হবে এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে। ২. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করতে হবে। ৩. পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় সুস্পষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্যকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ৪. চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন/পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ৫. চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সক্ষমতা ও কার্যকরতা বাড়ানোর জন্য এ ক্ষেত্রটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ৬. চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে; প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ইটিপি ও এলাকভিত্তিক কেন্দ্রীয় ইনসিনারেটর স্থাপন করতে হবে এবং দক্ষ জনবল দ্বারা চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধন ও অপসারণ করতে হবে। ৭. চিকিৎসা বর্জ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা বর্জ্যকর্মী ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ৮. সিটি করপোরেশন/পৌরসভায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদাভাবে জনবল নিয়োগ দিতে হবে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে। ৯. চিকিৎসা বর্জ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা দিতে হবে। ১০. কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি করে উৎপন্ন বর্জ্যের পরিমাণ সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করতে হবে। ১১. পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App