×

খেলা

ইউরোপীয় গতিময় ফুটবলের বিরুদ্ধে লাতিন শৈলীর লড়াই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:৩৫ পিএম

ইউরোপীয় গতিময় ফুটবলের বিরুদ্ধে লাতিন শৈলীর লড়াই

ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপীয় গতিময় ফুটবলের বিরুদ্ধে লাতিন শৈলীর লড়াই

ছবি: ফিফা

কাতার বিশ্বকাপে আজ লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে রাত ১টায় প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার মোকাবিলা করবে ক্রোয়েশিয়া। লাতিন প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্সআপ ইউরোপের ক্রোয়েশিয়া মেসিদের চোখ রাঙাচ্ছে। লাতিন-ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। বিশ্বকাপে গত ২১ আসর থেকে ইউরোপের ৫ দেশ শিরোপা জিতেছে ১২ বার। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার ৩ প্রতিনিধি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে শিরোপা জিতেছে ৯বার। এবার মেসিরা শিরোপার নাগাল পেলে তা হবে লাতিনের দশম শিরোপা। ইউরোপ জিতলে হবে ১৩। দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে জিততে মরিয়া মেসি-মড্রিচরা।

টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিলের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে দারুণ প্রত্যাবর্তনের পর টাইব্রেকারে জিতেছে তারা। গতবারের রানার্সআপরা টানা দ্বিতীয় আসরে ফাইনালে ওঠা থেকে আর একটি জয় দূরে। ২০১৮ সালে ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে হেরে যায় ক্রোয়াটরা। এবার অভিযান সফল করতে হলে ক্রোয়েশিয়াকে পেরোতে হবে আর্জেন্টিনা বাধা। টানা দুটি নকআউট ম্যাচে টাইব্রেকারে সফল দলটি আত্মবিশ্বাসী। দলের স্ট্রাইকার ব্রুনো পেতকোভিচ বলেছেন, মেসিকে থামানোর জন্য এখনো আমাদের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই এবং সাধারণত আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়ের চেয়ে পুরো দলকে থামিয়ে রাখার কথা ভাবি।’

এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি আর্জেন্টিনার। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিতভাবে হারতে হয় দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। তবে এরপর থেকে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে লিওনেল মেসির দল। মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে দলটি।

শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়েও অপ্রতিরোধ্য ছিল আর্জেন্টিনা। মেসির ঝলকে দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। এবার সামনে আরো দুটো জয়। এই দুই ধাপ পেরোতে পারলেই প্রথমবারের মতো শিরোপা উঠবে মেসির হাতে। ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠেও শিরোপার দেখা পাননি মেসি। এবার সেই অধরা শিরোপার দেখা পেতে মরিয়া স্কালোনির শিষ্যরা।

বিশ্বকাপ ট্রফিটা নিজের করে নিতে কি পারবেন লিওনেল মেসি? প্রথম ম্যাচ থেকেই বিশ্বকাপে দুরন্ত মেসি। এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলে গোল করেন ৪টি, প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে গোলের খরা কাটিয়েছেন। আর গোল করিয়েছেন দুটি। সবগুলো ম্যাচেই খেলেছেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এই ৫ ম্যাচে আর্জেন্টিনার গোলে তার অবদান প্রায় অর্ধেক, ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ জয়ে মেসির অবদান ৪৬ শতাংশ আর বাকি ১০ জনের অবদান ৫৪ শতাংশ! ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের (সিবিএফ) চাওয়া কাপটা যেন লাতিন আমেরিকাতেই আসে। আর সে কারণে সমর্থন জানাচ্ছে মেসির দেশ আর্জেন্টিনাকে। উল্লেখ্য, ২০০২ বিশ্বকাপে সবশেষ লাতিন দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল।

মেসিকে নিয়ে ভাবনার শেষ নেই ক্রোয়েশিয়ার কোচ জলাটকো ডালিচের। মেসিকে আটকানোর প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বিশেষ মনোযোগই দিয়েছি। তাকে ম্যান মার্ক করে আটকানো যাবে না। আমরা শেষবারো এমন করিনি, এবারো তা করব না। আমরা তার কাছে আসা পাসগুলো আটকে দিতে চেষ্টা করব, তাকে খুব বেশি জায়গা দেব না।’ মেসির খেলার ধরনটাও পুরোপুরি পড়ে ফেলেছেন ডালিচ, এবার তাকে আটকে দেয়ার পরিকল্পনা, জানিয়েছন ক্রোয়াট কোচ। বললেন, সে খুব বেশি দৌড়ায় না। সে বলের পেছনেও ছোটে না। সে অপেক্ষা করে, বল পেলে সব শক্তি দিয়ে আক্রমণ করে। আমাদের এদিকে মনোযোগ দিতে হবে।’ ক্রোয়েশিয়া নির্দিষ্ট কোনো একজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। এরপরও কাতার বিশ্বকাপে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক লুকা মড্রিচ।

মাঝমাঠ থেকে ক্রোয়েশিয়ার খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকা মিডফিল্ডার মড্রিচই। দলকে এক সুতায় গাঁথতেও বড় ভূমিকা রাখেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও পুরো মাঠজুড়ে খেলেছেন মড্রিচ। এই ৩৭ বছর বয়সেও ১২০ মিনিট মড্রিচ ‘বল যেখানে, তিনি সেখানে’ ধরনের ফুটবল খেলেছেন। এরপর টাইব্রেকারে পেনাল্টি শট নিয়ে গোল করেছেন।

আর্জেন্টিনার প্রথম একাদশে আনহেল দি মারিয়া সর্বশেষ খেলেছেন গ্রুপ পর্বে। এরপর শেষ ষোলো আর কোয়ার্টার ফাইনাল পেরিয়ে শেষ চারে উঠে এসেছেন লিওনেল মেসিরা। এবার দি মারিয়া কি সেমিফাইনালে প্রথম থেকে খেলতে পারবেন?

প্রশ্নটা উঠছে শতভাগ ফিট হতে লম্বা সময় লাগায়। দি মারিয়া ঊরুতে চোট পেয়েছিলেন পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। শুরুতে গুরুতর কিছু মনে হয়নি। কিন্তু শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাকে খেলানো যায়নি। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও নব্বই মিনিটের খেলায় বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২-২ সমতা হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে (ম্যাচের ১১২ মিনিটে) ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে তুলে দি মারিয়াকে পাঠানো হয়।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দি মারিয়া শুরু থেকেই খেলবেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় স্কালোনির ফরমেশন কেমন হয়, সেটির বড় ভূমিকা থাকবে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নামার আগে কার্ড সমস্যায় নেই ক্রোয়েশিয়ার কোনো ফুটবলার। পুরো দলকেই পাবেন কোচ জলাটকো ডালিচ। হলুদ কার্ড সাসপেনশনের কারণে সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের দুই খেলোয়াড় মার্কোস আকুনিয়া ও গনসালো মন্তিয়েল। মরক্কোর আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ওয়ালিদ শেদিরাও সেমিফাইনাল ম্যাচ মিস করবেন। সেমিফাইনালে চার দলের আর কোনো খেলোয়াড়ের ওপর হলুদ কার্ডের খড়গ নেই। আর ফাইনালে যে দুই দলই যাক তারা পূর্ণ স্কোয়াডই পাবে। ফিফার নিয়মানুযায়ী সেমিফাইনালের পর খেলোয়াড়দের হলুদ কার্ড গ্রাহ্য হয় না। অর্থাৎ হলুদ কার্ডের কারণে ফাইনালে হারাতে হয় না কোনো খেলোয়াড়কে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App