×

সারাদেশ

অভিযানে গিয়ে এএসআই আহত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২৬ এএম

অভিযানে গিয়ে এএসআই আহত

ছবি: ভোরের কাগজ

মানুষ বন্ধক রেখে মাদক পাচার করা সেই শাকের মাঝি গ্রেপ্তার

টেকনাফের আলোচিত মাদক ও মানবপাচারকারী গ্যাং লিডার শাকের মাঝিকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন অভিযান পরিচালনাকারী টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ টিমের সদস্য এএসআই শাখাওয়াত হোসেন। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) ভোররাত সোয়া ১টার সময় উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মুন্ডার ডেইল গ্রামের নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক শাকের মাঝি স্থানীয় কবির আহমেদের ছেলে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আবদুল হালিম জানান, সোমবার ভোররাতে টেকনাফ মডেল থানার ওয়ারেন্ট তামিলকারী টিম পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক, এসআই নুরে আলম, এসআই হোসাইন, এএসআই সাখাওয়াতসহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে ২০১২ সালের মানবপাচার আইনের ৭/৮ এর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এবং আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারি মো. শাকের মিয়া ওরফে শাকের মাঝিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ওই আসামি শাকের মাঝি সন্ত্রাসী কায়দায় এএসআই মো. সাখাওয়াতকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে এএসআই সাখাওয়াতের ঠোঁট ফেটে যায়। এ সময় আসামির ভাই মনু মিয়া (৪০) ও রফিকুল ইসলাম (২৯) পাশের কক্ষ থেকে বের হয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পুলিশকে আঘাত এবং পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে। তারপর অভিযানকারী টিম আসামি শাকের মাঝিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও তার দুই ভাইসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। আহত এএসআই মো. শাখাওয়াতকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার ঠোঁটে তিনটি সেলাই দেয়া হয় বলেও জানান ওসি।

মানুষ বন্ধক রেখে যেভাবে মাদক পাচার করত শাকের : মাদকের উৎসস্থল মিয়ানমারে মাদক কারবারিরা মানুষ জিম্মি রেখে বাকিতে মাদক বিক্রি করত এ দেশের কারবারিদের কাছে। ঠিকমতো মাদক বিক্রির অর্থ পরিশোধ করলেই মুক্তি দেয়া হতো জিম্মিকে, অন্যতায় নেমে আসতো মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। স¤প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে ফের আলোচনায় আসে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাকের মাঝি। তিনি একই ইউনিয়নের বাহারছাড়া এলাকার আলী হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মিয়ানমার মাদক কারবারিদের হাতে বন্ধক রেখে ১ লাখ ইয়াবা আনেন। যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় তাকে বর্বর নির্যাতন করা হয় এবং শাকের মাঝি টাকা পাঠাবে বলে ভুক্তভোগী তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। মিয়ানমার থেকে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের কাছে পাঠানো একটি ভিডিওতে এমন চিত্র দেখা যায়।

এক সময় মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা এ দেশীয় মাদক কারবারিদের লেনদেনের স্বচ্ছতার উপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ বাকিতে বা অর্ধেক বাকিতে মাদক বিক্রি করত। বিভিন্ন সময় এ দেশীয় কারবারিরা মাদক এনে তা বিক্রি করে অর্ধেক পরিশোধ করে কখনো সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে নেয়। এসব ঘটনার পর থেকে সে দেশের কারবারিরা বাকি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। আবার এ দেশীয় কারবারিরা টাকা মেরে দেয়ার ভয়ে মিয়ানমারে অগ্রিম অর্থ লগ্নি করাও বন্ধ করে দেয়। এ রকম একটি অবস্থায় মিয়ানমারের কারবারিরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মাদকের চালান আনার সময় ক্যাশ টাকা না দিলে ক্রেতা মিয়ানমারে তাদের কাছে কোনো নিকটজনকে বন্ধক রাখবে। পরে অর্থ পরিশোধ করলে ছেড়ে দেয়া হবে। অন্যতায় মেরে ফেলা হবে।

পুলিশ এই ঘটনার অনুসন্ধানে নামলে এমন আরো কয়েকটি ঘটনা উঠে আসে। উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নুরুল আমিনের (২২) ভাই আব্দুল্লাহ জানান, তার ভাইকে মিয়ানমারে কারেন্ট জাল আনার নাম করে নিয়ে ১১ লাখ টাকার ইয়াবার চালানের বিপরীতে বন্ধক রেখে চলে আসে একই এলাকার আলী হোসাইনের ছেলে শহীদ উল্লাহ। সময় মতো অর্থ পরিশোধ না করায় তাকে নির্যাতনের একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠায় সে দেশের কারবারিরা। এরপর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মগোপনে চলে যান।

এর আগে গত মার্চের শুরুতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে নুরুল ইসলামকে একইভাবে মিয়ানমারে বন্ধক রেখে ১০ লাখ টাকার ইয়াবা আনার অভিযোগ রয়েছে একই এলাকার আব্দুল খলিল এবং মহেষখালী উপজেলার আবছারের বিরুদ্ধে। পরে নুরুল ইসলামকে নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রচার পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অর্থ পরিশোধ করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এদিকে বন্দিদশা থেকে এসে তিনি আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, অপরাধীরা আগে পরে ঠিকই আইনের আওতায় চলে আসবেই। উল্লেখ্য, আসামি শাকের মাঝির বিরুদ্ধে মাদক, মানবপাচার, অস্ত্রসহ চারটি মামলা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App