×

জাতীয়

১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে লাখো বাঙালির সমাগম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৫৭ এএম

১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে লাখো বাঙালির সমাগম

ছবি: সংগৃহীত

১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১। শীতের কনকনে হাওয়া উপেক্ষা করে লন্ডনে লাখো বাঙালি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে সমবেত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। লেবার পার্টির এমপি পিটার মোর ও জন স্টোন বলেন, ব্রিটিশ সরকারের উচিত অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র’-এর পঞ্চম, একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড থেকে জানা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার রাশিয়ার প্রতিনিধি ভোরেন্টসভকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ১২ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নের আগেই ঢাকায় ভারতীয় বাহিনীকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা নেবে। এদিনই মার্কিন প্রশাসন তাদের হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে জানিয়ে দেয়, মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত নিজেদের নৌবহরকে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে আফ্রিকা ও জাপান থেকে সাবমেরিন তেলবাহী জাহাজ এগোতে শুরু করে। ভারত মহাসাগরে তিনটি সোভিয়েত গোয়েন্দা জাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখে ক্রেমলিনের সঙ্গে। আরব সাগরে অবস্থানরত সোভিয়েত গোয়েন্দা নৌবহর নজর রাখতে শুরু করে ব্রিটিশ নৌবহরের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে চীন হয়তো কোনো পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নই শেষ পর্যন্ত তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়, এখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয় বরং একটি জাতি তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে। বেপরোয়া আল বদর বাহিনী : এদিন সেনানিবাসে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সভাপতিত্বে বৈঠক বসে। ওই বৈঠকেই আল বদর, আল শামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৎকালীন পূর্ব বাংলার শীর্ষ মুক্তবুদ্ধির অধিকারীদের তালিকা তুলে দেয় হন্তারক বাহিনীর হাতে। পরিকল্পনা মাফিক, রাতেই আল বদর বাহিনী সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। প্রতিরোধ যুদ্ধ : এদিন যৌথবাহিনী টাঙ্গাইল অভিমুখে আক্রমণ শুরু করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিক থেকে মিত্রবাহিনীর জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগ দিয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছত্রীসেনা নামিয়ে রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। সারারাত তুমুল যুদ্ধ শেষে ভোরে হানাদার বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করে। বিজয়ীর বেশে মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ওদিকে ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত থাকে। ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় কারফিউ, ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে লুটতরাজ শুরু হয়। অবরুদ্ধ ঢাকাবাসী শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আশঙ্কার দিনযাপন করতে থাকে। যে কোনো সময় মুক্তি-মিত্রবাহিনীর মিলিত কমান্ড পাকিস্তানিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এমন খবরে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যায়। ঢাকা থেকে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না। এদিন হানাদারমুক্ত হয় নীলফামারী, গাইবান্ধা, নরসিংদী, সরিষাবাড়ী, ভেড়ামারা এবং শ্রীপুর। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন দেয়ায় ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানান। এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, তার জীবনের শেষ সংগ্রাম বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ে তোলা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App