×

খেলা

বিশ্বকে চমকে দিল মরক্কো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৬ এএম

বিশ্বকে চমকে দিল মরক্কো

ছবি: সংগৃহীত

এতদিন সমগ্র ফুটবলবিশ্ব দেখেছে ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকার দলগুলোর দাপট। আরব অঞ্চল কিংবা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কোনো দল ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। এবার সেই রেকর্ড ভেঙেছে মরক্কো। প্রথম আবর ও আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে তারা। আশরাফ হাকিমি-হাকিম জিয়েখদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি কোয়ার্টার ফাইনালে হারায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে।

ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে চমকে দেয়া মরক্কো আরো বড় বিস্ময়ের জন্ম দেয় শেষ ষোলোয়। শক্তিশালী স্পেনকে হারিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটি প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে। এবার পর্তুগালকে হারিয়ে আরো এক চমক উপহার দিয়েছে আফ্রিকার দেশটি।

অবিস্মরণীয় জয়ের পর মরক্কো ভাসছে অভিনন্দন বার্তায়। শাদের প্রেসিডেন্ট মাহামাত ইদ্রিস দেবি টুইটারে লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক ও অসামান্য! ২০২২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়া সমগ্র আফ্রিকারই সাফল্য। গ্র্যান্ড ফিনালেতে আফ্রিকার প্রতিনিধিদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আফ্রিকা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, হ্যাঁ তা সম্ভব ইনশাল্লাহ!’ আফ্রিকান ফুটবল কনফেডারেশন টুইটারে লেখে, ‘মহাদেশের ইতিহাস! কী দারুণ একটি অর্জন।’ বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা এটিকে দুর্দান্ত এক ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক অর্জন উল্লেখ করেন। টুইটারে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মাদ বিন রাশিদ, ‘বিশ্বকাপে মরক্কোর চেয়ে জোরাল কণ্ঠস্বর আর কারো নেই!’

এর আগে শেষ ষোলোয় স্পেনকে হারানোর পর ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ছবি তুলেছিলেন মরক্কোর খেলোয়াড়রা। নিজ দেশের প্রতি তাদের এই সমর্থন ছুঁয়ে গেছে ফিলিস্তিনের জনগণের মধ্যে। দেশটির ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোতে ম্যাচের স্ক্রিনিং ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। মরক্কোর জয়ের সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

মরক্কোর এমন সাফল্যের পেছনে খেলোয়াড়দের পরিবারের আত্মত্যাগ অনস্বীকার্য। তাই তো পর্তুগালের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়টি মায়ের সঙ্গেও উদযাপন করেন মরক্কো ফরোয়ার্ড সোফিয়ান বুফোলা। খেলা শেষে মাঠের ভেতর নাচতে দেখা যায় তাদের। সেই মুহূর্ত দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের পর বুফোলা বলেন, ‘আমরা স্বপ্নের মধ্যে বাস করছি এবং আমরা জাগতে চাই না। আমার ভেতর আর কোনো শব্দই নেই। খুবই অসাধারণ। যা অর্জন করেছি আমরা সবকিছুই আমাদের প্রাপ্য। তবে এখানেই শেষ নয়। এ নিয়ে কথা বলতে আনন্দ লাগছে আমরা। আশা করি এই স্বপ্ন এখনই শেষ হবে না।’ বিশ্বকাপে মরক্কোর অনেক ফুটবলারই পরিবার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি জয়ের পরপরই গ্যালারিতে থাকা মায়ের পেছনে ছুটেন ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি। মাকে সামিল করেন জয়োল্লাসে।

এ ম্যাচে দারুণ সব সেভ করে মরক্কোর জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনো। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছিল তার হাতেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই পুরস্কার তিনি তুলে দেন সতীর্থ ইউসুফ এন-নেসিরির হাতে। কারণ তার মতে, ম্যাচের আসল নায়ক আসলে এন-নেসিরি, যিনি দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করে দলকে ঐতিহাসিক জয় পাইয়ে দেন। তবে এর আগেও শেষ ষোলোয় স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে কার্লোস সোলের ও সের্হিও বুসকেতসের শট ঠেকিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।

আল থুমামা স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ডাইভ দিয়ে তিনটি শট ঠেকান বুনো। ফলে আরো একবার ক্লিনশিট বজায় রাখেন মরক্কান গোলরক্ষক। ২০২২ বিশ্বকাপেই এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় ১.৯৫ মিটার উচ্চতার বুনোকে পরাস্ত করতে পারেননি। অবশ্য গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে আত্মঘাতী গোল করেছিলেন মরক্কোর নায়েফ। ২০১৯-২০ মৌসুম থেকে স্পেনের লা লিগার ক্লাব সেভিয়ার হয়ে খেলছেন বুনো। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ক্লাবটির জার্সিতে ১২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এছাড়া ক্লাব ক্যারিয়ারে স্পেনের অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, জারাগোজা এবং জিরোনার হয়ে খেলেছেন এই তরুণ গোলরক্ষক।

তাছাড়া মরক্কোর জার্সিতে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিনি। যদিও নিজ জন্মস্থান কানাডার জার্সিতেও খেলার ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু তার বদলে তিনি পিতৃভূমি মরক্কোকে বেছে নেন।

মার্কিন ক্রীড়াভিত্তিক চলচ্চিত্র রকি বালবাও, যার প্রধান চরিত্রে ছিলেন সিলভারস্টার স্ট্যালন। বুড়ো বয়সে যিনি বক্সিং রিংয়ে ফিরে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বক্সারদের অন্তর। পর্তুগালকে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে বুকে সেই চরিত্র ধারণ করেছে মরক্কো। কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই বলেন, ‘আমরা এই বিশ্বকাপের রকি বালবাও।’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম, গ্রুপ পর্ব উতরে যেতে আমরা সবকিছু দিতে চেয়েছিলাম। আমাদের আকাশে ওঠার লক্ষ্য, এখানেই থামছি না আমরা। কিন্তু আমাদের হারানো কঠিন হতে যাচ্ছে। সুতরাং ট্রফি জয়ের স্বপ্ন কেন নয়?’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App