×

খেলা

অশ্রুসিক্ত রোনালদো-হ্যারি কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:২০ এএম

অশ্রুসিক্ত রোনালদো-হ্যারি কেন

ছবি: সংগৃহীত

মরুর বুকে একের পর এক নক্ষত্রের পতন হচ্ছে। নেইমারের পর এবার বিদায় নিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও হ্যারি কেন। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। অন্যদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়বঞ্চিত থেকে সেমিফাইনালে ওঠা হয়নি হ্যারি কেনের ইংল্যান্ডের। নিজেদের দেশকে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতাতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে চোখের জলে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছে এই দুই তারকা ফুটবলার।

আল থুমামা স্টেডিয়ামে শেষ বাঁশি বাজতেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো হাঁটা দেন টানেলের দিকে। সতীর্থরা যখন মাঠে, তখন সিআরসেভেন খুঁজছেন আড়াল। নয়ন ভাসছে জলে। হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এই দৃশ্য মুহূর্তেই ভেঙে দিয়েছে ফুটবল ভক্তদের হৃদয়।

পর্তুগীজদের স্বপ্নভঙ্গের রাতে কোটি ফুটবল ভক্তের হৃদয় ভেঙে দেয় রোনালদোর চোখের জল। আগ্রাসী রোনালদোর বিশ্বকাপ থেকে এমন বিদায় হয়তো চায়নি কেউই। প্রতিদ্ব›দ্বী ভক্তদেরও হৃদয় কেঁপেছে এমন হাহাকার করা দৃশ্য দেখে। ফিফা তাকে জানিয়েছে সম্মান। বিশ্বকাপে ৮ গোল করা রোনালদোর বিশ্বমঞ্চে সেরা কয়েকটি মুহূর্ত তুলে ধরে ভিডিও পোস্ট করে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ‘একটি পৌরাণিক কাহিনী, একজন কিংবদন্তি, একটা মেশিন। ধন্যবাদ, ক্রিশ্চিয়ানো।’

গোল দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হলেও পরের যাত্রা ছিল বিষাদময়। বসে থাকতে হয় বেঞ্চে। নামতে হয় বদলি ফুটবলার হিসেবে। এই নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। বিবৃতি দিতে হয় পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশনকেও। লিখেন রোনালদো নিজেও। আকাশ থেকে কিভাবে মাটিতে নামতে হয়, নক্ষত্রের কিভাবে পতন হয় রোনালদো দেখে ফেলেছেন কাতারে কাটানো এই কদিনে। ৩৭ বছর বয়সি রোনালদো তার এই বিশ্বকাপ ভুলে যেতে চাইবেন নিঃসন্দেহে। শুধু বিশ্বকাপ নয় এই বাইশ সালে রোনালদো হারিয়েছেন সন্তান, এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়ে তার জাগরণের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ঘটেছে বিচ্ছেদ, ম্যানইউ ম্যানেজারের সঙ্গে হয়েছে বিবাদ, খেলেছেন ইউরোপা কাপ, যার ছোঁয়া লেগেছে নিজ দেশের হয়ে খেলার সময়েও।

এই বিশ্বকাপ ছিল রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। হয়তো পর্তুগীজ জার্সিতে খেলে ফেলেছেন শেষ ম্যাচটিও। তবে মরক্কোর বিপক্ষে বদলি নেমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করেন পর্তুগাল অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড আগে থেকেই রোনালদোর।

এবার সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডেও নাম লেখালেন। পাঁচ বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলে ৮টি গোল করেছেন রোনালদো। আর পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে ১৯৬ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ১১৮টি, যা রেকর্ড। এর আগে কাতার বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন রোনালদো। ঘানার বিপক্ষে পর্তুগালের উদ্বোধনী ম্যাচে গোল করেছিলেন রোনালদো। সে ম্যাচে গোল করে বনে যান ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করেছেন।

বিশ্বকাপ অর্জন করতে না পারলেও রোনালদো ঝুলিতে অর্জন কম নেই। সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার মেসুত ওজিল। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওজিল লেখেন, ‘রোনালদো সম্পর্কে গণমাধ্যমে নেতিবাচক কথা কোথা থেকে আসে আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। গণমাধ্যম শুধু ক্লিক পেতে চেষ্টা করছে। আর যে পণ্ডিতদের ক্যারিয়ার নেই, তারা রোনালদোর মতো বড় তারকার নাম সামনে এনে নিজেদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে। তারা সিআরসেভেনকে খারাপ দেখাতে চেষ্টা করছে।’

এদিকে চোখের জলে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন। ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচের বাকি তখন মিনিট সাতেক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে ফ্রান্স। ঠিক তখনই পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। ম্যাচে ফেরার সহজতম সুযোগ। এর আগেও ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড সমতায় ফিরেছিল হ্যারি কেনের নেয়া পেনাল্টি গোলে। দ্বিতীয়বার পাওয়া পেনাল্টি নেন হ্যারি কেন। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ও গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার কিক চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ম্যাচ তখন ঝুলে পড়েছে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের দিকে। ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে টেনে নেয়ার সবচেয়ে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক।

ম্যাচের পর দলের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের দায়-দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছেন হ্যারি কেন। বলেছেন, ‘আমি হতাশ। দলও হতাশ। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ছিল এই বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারব। কিন্তু পারিনি। এর দায় আমিই নিচ্ছি।’ এই দুঃখ তাকে অনেকদিন তাড়িয়ে বেড়াবে উল্লেখ করে ইংলিশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি জানি এটা অনেক কষ্টের বিষয়। যে কষ্ট অনেক দিন ধরে রাখতে হবে। অধিনায়ক হিসেবে আমার কষ্টটা আরো বেশি।’

ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল করে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন হ্যারি কেন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন যৌথভাবে ওয়েন রুনি ও হ্যারি কেন। আল বাইত স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি গোলে দলকে ১-১ সমতায় ফেরান কেন।

২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২০ ম্যাচ খেলে ৫৩ গোল করেছিলেন রুনি। পূর্বসূরিকে কেন ছুঁয়ে ফেলেন ৮০ ম্যাচেই। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জয়ী কেন কাতারে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে জালের দেখা পাননি। তবে নকআউট পর্বের প্রথম দুই ম্যাচেই গোল করেন ২৯ বছর বয়সি তারকা। বিশ্বকাপে কেনের গোল হলো ১১ ম্যাচে ৮টি। ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বমঞ্চে তারচেয়ে বেশি গোল আছে কেবল গ্যারি লিনেকারের, ১২ ম্যাচে ১০টি।

এদিকে শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। এর আগে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোল হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া।

একই দিন রাতে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিতে উঠে আর্জেন্টিনা। তৃতীয় কোয়ার্টারে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে মরক্কো। শেষ ধাপে চলে এসেছে মাসব্যাপী চলা বিশ্বকাপের সূচি।

ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে লড়বে গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। পরেরদিন ১৪ ডিসেম্বর আল বায়েত স্টেডিয়াম বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মোকাবিলা করবে মরক্কো। দুটি ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত একটায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App