×

আন্তর্জাতিক

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ার আভাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৩৩ এএম

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ার আভাস

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো বনাম রাশিয়া। শক্তি প্রদর্শন আর শক্তি সংরক্ষণ। স্পর্শকাতর দুটি বিষয়ে খুবই কৌশলী অবস্থানে আছে উভয়পক্ষ। যুদ্ধের চিরায়ত কৌশলের বাইরে যেতে পারছে না কোনো পক্ষই। ন্যাটো নিজেকে পক্ষ বলতে না চাইলেও রাশিয়া বারবার ইইউ এবং ন্যাটোকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখছে। কারণ অর্থ, অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনের হয়ে লড়ে যাচ্ছে রাশিয়ার বিপক্ষে। যে কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বলতে বাধ্য হয়েছেন, ইউক্রেনের অভিযান আমাদের ধারণার বাইরে বেশি সময় নিচ্ছে।

এখন উভয়পক্ষই পারমাণবিক যুদ্ধের বোতামে হাত রেখে লাভ-ক্ষতির হিসাব করে যাচ্ছে এবং কে আগে বোতামে চাপ দেবে এটা নিয়ে উভয়পক্ষই কূটনৈতিক চাল চালছে। এর চেয়েও বড় কথা- হার-জিৎ নয়, উভয়পক্ষই একটা সম্মানজনক পরিণতি চায় অথবা উভয়পক্ষই জিততে চায়। প্রশ্নটা হচ্ছে- কোন কৌশলে উভয়পক্ষের জয় নির্ধারণ সম্ভব। কুশীলবরা সেই কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এর মধ্যেই গতকাল পুতিন কৌশলের সমান্তরাল পথে আস্থার সংকটকে সামনে নিয়ে এলেন। এতে আরো পেছনে পড়ে গেল আলোচনা বা সমাধানের বিষয়গুলো।

আস্থার সংকট : পুতিনের ভাষায় একটা আস্থার অভাব রাশিয়াকে সন্দেহমুক্ত করতে পারছে না। রাশিয়া যতটুকু ইউক্রেনের ভূমি দখল করেছে ততটুকুই ধরে রাখতে চায়। আর এটা রাখতে পারলেই যুদ্ধ জয়ের সহজ সমীকরণ নিয়ে খুশি থাকতে চায় রাশিয়া বলে মনে করছেন অনেকে। এমনই একটি আস্থার সংকটের কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেছেন, কিয়েভের সঙ্গে একটি কার্যকর চুক্তিই ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য যথেষ্ট, তবে সেই চুক্তির ভিত্তি হতে হবে আস্থা। সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মের্কেলের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের পর পুতিন এই আস্থাহীনতার কথা সামনে নিয়ে আসেন।

একটি জার্মান দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মের্কেল বলেছিলেন, ইউরোপের মূল লক্ষ্য ছিল মস্কোর বিরুদ্ধে কিয়েভকে ‘লড়াইয়ের’ যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা এবং তার প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল মিনস্ক চুক্তি। এর পরেই পুতিন বলেন, আমি জার্মানির ব্যাপারে খুবই হতাশ। কারণ আমি বিশ্বাস করতাম, জার্মান সরকার অন্তত আমাদের প্রতি সৎ ছিল।

যুদ্ধ ছড়িয়ে যেতে পারে : এদিকে গত শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের পরিবর্তে, রাশিয়া-ন্যাটোর মধ্যে এই যুদ্ধ পরিণত হতে চলেছে।

নরওয়েজিয়ান ব্রডকাস্টার এনআরকে দেয়া এক মন্তব্যে তিনি বলেন, যদি কিছু ভুল হয়ে যায় তাহলে ভয়ংকর হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ একটি ভয়ানক পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে যা ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি বড় যুদ্ধে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এটি এড়াতে আমরা প্রতিদিন কাজ করছি। তিনি যোগ করেন যে, ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশকে এই যুদ্ধ জড়িত করে ফেলেছে ।

কামানের খোরাক ইউক্রেনের মানুষ : পুতিন বলেন, সম্ভাব্য শান্তি আলোচনাকে জটিল করে তুলছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনকে তার দেশের বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। অনেক বছর ধরে, পশ্চিমারা নির্লজ্জভাবে শোষণ করেছে এবং দেশটির সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। ডনবাসে গণহত্যা ও সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করেছে এবং কার্যকরভাবে দেশটিকে একটি উপনিবেশে পরিণত করেছে। তিনি বলেছেন, এটা নিষ্ঠুরভাবে ইউক্রেনের জনগণকে কামানের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রেখে এবং ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়ে দেশটিকে আত্মঘাতী পথে ঠেলে দিয়েছে।

সুুনাকের উদ্যোগ : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং উভয়েই যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়ার অকৃত্রিম আহ্বানের গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন। সুনাকের অফিস জানিয়েছে, যে কোনো চুক্তি বিবেচনা করার আগে ক্রেমলিনকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App