×

সাহিত্য

পদ্মায় ভেসে আঁকা হলো ১৫০ শিল্পকর্ম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:৫২ পিএম

পদ্মায় ভেসে আঁকা হলো ১৫০ শিল্পকর্ম

ছবি: সংগৃহীত

পদ্মায় ভেসে আঁকা হলো ১৫০ শিল্পকর্ম
পদ্মায় ভেসে আঁকা হলো ১৫০ শিল্পকর্ম

১৯তম এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর চতুর্থতম দিনে টুঙ্গিপাড়ায় পদ্মার বুকে নৌবিহারে আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পে ছবি আঁকায় মগ্ন শিল্পী। ছবি: ভোরের কাগজ

পদ্মায় ভেসে আঁকা হলো ১৫০ শিল্পকর্ম
পদ্মায় ভেসে আঁকা হলো ১৫০ শিল্পকর্ম

পদ্মার উপর হাঁসের মতোই ভেসে বেড়াচ্ছিল লঞ্চটি। তার উপর নিবিষ্ট মনে ছবি আঁকছিলেন ভারত থেকে আগত শিল্পী প্রফেসর নিয়াজ মজুমদার। বললেন, এতো বড়ো আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ, আপ্লুত। এখানকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের কোমলতা আছে। একধরনের দরদ ভরা হৃদয় তাদের। এমনটা ভারতের মানুষের মধ্যেও নেই। এখানকার ঋতুর সঙ্গে মানুষেরও এক ধরনের মিল আছে। কিভাবে ভালোবাসতে হয় এমনই অসাধারণ প্রতিভা তাদের মধ্যে দেখেছি। ভাষার মিল নেই। তবু বিদেশের একজন অতিথির জন্য এতো টান দেখে আমি মুগ্ধ।

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে মন চায় আমি এখানেই থাকি। হয়তো পূর্বপুরুষেরই টান! আমার বাবা মা এপার বাংলার নোয়াখালিরই সন্তান। মায়ের বাড়ি মাইজদী, বাবা চৌমুহনীর। বাবা-মা দুজনই গেছেন ৪৭ এর পরে। এজন্যই বোধহয় নাড়ির টান!

১৯তম এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর চতুর্থতম দিনে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে বিদেশি অতিথিদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পদ্মার বুকে নৌবিহারে আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পে তিনি ভোরের কাগজের কাছে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন। কেবল নিয়াজ মজুমদারই নন, দিনব্যাপী ওই আর্ট ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক শিল্পী অংশগ্ৰহণ করেন। তাদের অধিকাংশেরই ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে প্রমত্ত পদ্মার ঢেউয়ের হিল্লোল, বাংলার অসামান্য প্রকৃতির অপরূপ রূপ, নীলিমার নীল।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরেই প্রবাসে বসবাস করছেন বিশিষ্ট শিল্পী শহীদ কবির। তাকেও দেখা গেল ছবি আঁকায় গভীর মনোনিবেশ করেছেন। প্রবাসী এই শিল্পী বললেন, ছবি আঁকার চেয়ে দেশি বিদেশি অনেক শিল্পীর সঙ্গে আলাপ হলো। বিশেষ করে নিজেদের ছবি নিয়ে মতবিনিময় হলো। এটাই সবচে ভালোলাগা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

শহীদ কবিরের পাশেই ছবি আঁকছিলেন তার বন্ধু বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান। শহীদ কবির তাকে বললেন, আমার ক্যানভাসে একটু রঙ ছড়িয়ে দাও তো। তিনিও বন্ধুর কথা মতোই নীল রঙ ছড়িয়ে দিলেন। আর তাতে শহীদ কবির আঁকলেন ঘন নীল অসাধারণ এক ল্যান্ড স্কেপ। যার নাম দিলেন ‘পদ্মা’।

শিল্পী হামিদুজ্জামান এবং আইভী জামান দুজনেই শিল্পী দম্পতি। ছবিও আঁকছিলেন পাশাপাশি টেবিলে। হামিদুজ্জামান বললেন, পদ্মার বুকে আয়োজিত এই আর্ট ক্যাম্পে অনেক প্রশান্তি নিয়ে ছবি এঁকেছি। এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল বাংলাদেশের শিল্পীদের জন্য বিরাট অর্জন। বিদেশি অনেক শিল্পীর সঙ্গে ছবি আঁকছি, ভাববিনিময় করছি। যা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এমন আয়োজনের জন্য শিল্পকলার মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানাই।

আইভী জামান বলেন, করোনায় আমাদের সবকিছু যেন থমকে গিয়েছিল। এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের এই বৃহৎ আয়োজনে মনে হচ্ছে পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছি। এটা কেবল আর্ট ক্যাম্পই নয়, শিল্পীদের মিলনমেলা। যেখানে প্রাণে প্রাণ মিলে একাকার। পদ্মার বুকে এই আর্ট ক্যাম্পে এসে দেশ এবং নিজের অস্তিত্বকেই যেন খুঁজে পেলাম।

তারই পাশে সাদা আর হালকা বাদামি পোর্ট্রেটে রঙ ছড়িয়ে মায়াজাল তৈরী করছিলেন আরেক বরেণ্যে শিল্পী আব্দুল মান্নান। নদীর পাড়ে বৃক্ষঘেরা বসতি। অসাধারণ এক চোখ বুঁজে আসা সুন্দর শিল্পকর্মটির নাম দিলেন ‘রিভার’। আব্দুল মান্নান ভোরের কাগজকে বললেন, এই আয়োজন নিঃসন্দেহে খুব চমৎকার। এর সঙ্গে ভিন্ন মাত্রা যোগ হলো ১১৪ দেশের অংশগ্রহণ। এরকম প্রদর্শনীতে এসে তারা আয়োজনটাকেই সার্থক করে তুলেছেন। এটা আমার জীবনে স্মৃতি নয়, ইতিহাস হয়ে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর বাড়ির আঙ্গিনায় কুড়িয়ে পাওয়া শীতের হলুদ এক ঝরা মরা পাতা দিয়ে অসাধারণ এক শিল্পকর্ম তৈরি করে ফেললেন শিল্পী নিলুফার চামান। শিল্পকর্মটির নাম দিয়েছেন 'জাগো সবুজ জাগো'।

তিনি বললেন, পৃথিবীজুড়ে অনেক বিরূপতা। আমি আমার শিল্প কর্মের মধ্য দিয়ে মাতৃভূমিকে বলছি, জাগো-জাগো-জাগো...।

গভীর মনোযোগে কোনো প্রকৃতি নয়, মানুষের মুখ আঁকছিলেন প্যালেস্টাইনের শিল্পী মো. আবু সাল। তিনি বললেন, বাংলাদেশের আর্ট বিয়েনালে এসে অনেক আনন্দ পাচ্ছি। আমি আমার দেশে এক ধরনের বন্দী অবস্থায় আছি। সরকার চায় না আমরা বাইরের বিশ্বে আসি। এখানে অংশগ্ৰহণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। আশা করি এখানকার শিল্পীদের সঙ্গে একটা কমিউনিটি গড়ে উঠবে আমাদের। যেখানে সবকিছু শেয়ার করা যাবে।

এর আগে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধীসৌধে এসে অভিনবভাবে জল রঙ ছড়িয়ে বিশাল ক্যানভাস রাঙালেন শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। যে ক্যানভাসজুড়ে আঁকলেন বঙ্গবন্ধুর মুখ! যে মুখ সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মুখ।

এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন, এবারের সর্ববৃহৎ আয়োজনে শিল্পীদের একটাই উচ্চারণ-আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি তারা।

আর্ট ক্যাম্প শেষে পদ্মা নদীতে নৌবিহারের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শিল্পী ইয়াসমিন আলীর পরিচালনায় ঢাকা সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় ৩৭টি ভাষায় সংগীত পরিবেশিত হয়। সংগীত পরিবেশন করেন একাডেমির সংগীত দলের শিল্পীরা। সায়লা আহমেদ লিমার পরিচালনায় গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য শিল্পীবৃন্দ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক নৃত্য পরিবেশন করেন রাগ শানমুখপ্রিয়া এর সাথে নৃত্যশিল্পী জুয়েরিয়া মৌলী। কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন ফিফা চাকমা। ‘আমি বনোফুল গো’ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্য শিল্পী হেনা ইসলাম। সমসাময়িক নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী আনন্দিতা খান। ‘মলয়ও বাতাসে’ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী রোজা। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মেহেক, রাফি তালুকদান, রওশন আলম, হিমাদ্রী, মিম, ও সিফাত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App