×

জাতীয়

গণহত্যাকারীদের বিচারে দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশ সরকারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪৯ এএম

গণহত্যাকারীদের বিচারে দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশ সরকারের

ছবি: সংগৃহীত

ডেডলাইন ১১ ডিসেম্বর, একাত্তর। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার ৫ দিন পর যশোর শহরের টাউন হল মাঠে জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো মুক্তাঞ্চলে এটিই ছিল প্রথম জনসভা। জনসভায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দৃঢ় ঘোষণা, যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করবে বাংলাদেশ সরকার। যারা শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা নিজ নিজ ঘরবাড়ি ফিরে পাবেন। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং নেজামে ইসলাম- এই ৪টি রাজনৈতিক দলকে আমরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা আমাদের সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজ যশোর যেমন মুক্ত, সমগ্র বাংলাদেশও তেমন মুক্ত হবে খুব শিগগিরই। আমাদের পরবর্তী কাজ হবে দেশ পুনর্গঠন করা। দৈনিক অমৃতবাজার ও সানডে টেলিগ্রাফে (১২ ডিসেম্বর ’৭১) প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, জনসভা শেষে এদিন কলকাতায় ফিরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য শিগগিরই সংবিধান রচিত হবে। ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে। ওইদিন মুজিবনগর সরকার থেকে প্রকাশিত জনগণের উদ্দেশে এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ওই খুনিগুলোকে (ধরা পড়া বা সারেন্ডার করা পাকিস্তানি সৈন্য) তোমরা মেরে ফেল না, মুক্তিবাহিনীর হাতে ওদের হস্তান্তর কর। হয়তো ওদের বিনিময়ে আমরা জাতির পিতাকে উদ্ধার করতে পারব।’ মুজিবনগর সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তাঞ্চলের জনগণের কাছে ধরা পড়া হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যদের মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে জনগণ ‘জয়বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে হস্তাস্তর করে। এ দিন ঢাকার উপকণ্ঠে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনার অবতরণ এবং বিভিন্ন এলাকায় ছত্রীসেনাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। হানাদার পাকিস্তানিদের ফ্ল্যাগ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাও ফরমান আলীর উদ্দেশে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেক’শ অস্ত্র সম্বরণ ও আত্মসমর্পণ করার শেষ সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। বুদ্ধিজীবী নিধন : ১১ ডিসেম্বর ভোর ৪টার দিকে আল বদরের অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও চিফ এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খানের নির্দেশে পিপিআইর প্রধান প্রতিবেদক ও কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সার্ভিসের প্রতিবেদক সৈয়দ নাজমুল হককে পুরানা পল্টনের বাসা থেকে এবং দৈনিক পূর্বদেশের প্রধান প্রতিবেদক এএনএম গোলাম মুস্তাফাকে গোপীবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা। দুপুর ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। তেজগাঁও বিমানবন্দরে জাতিসংঘের অনুরোধে বিমান হামলা বন্ধ রাখে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ৫ শর্তে আত্মসমর্পণের কথা ডা. মালিকের, ইয়াহিয়ার নাকচ : ১১ ডিসেম্বর প্রভাবশালী সংবাদপত্র সানডে টেলিগ্রাফে গভর্নর মালিকের আত্মসমর্পণের একটি প্রস্তাব প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. মালিক একটি প্রস্তাব ঢাকায় নিয়োজিত জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে পেশ করেছেন। রাও ফরমান আলী গভর্নরের পক্ষে ৫টি শর্তে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছেন। শর্তগুলো হলো- পাকিস্তানি বাহিনী কেবল ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে, মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি থাকবে না, যুদ্ধবন্দি ও ১ লাখ পাকিস্তানি নাগরিককে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে, সব পাকিস্তানি সেনা যেন পাকিস্তানে ফিরে যেতে পারে এই নিরাপত্তা দিতে হবে এবং ৭০ এর নির্বাচনে যে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তবে ইয়াহিয়া খান জানামাত্র এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দেয়ার অনুরোধ জানান। মুক্তাঞ্চল : এদিন টাঙ্গাইল হানাদারমুক্ত হয়। জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে পালিয়ে আসা হানাদার সেনারা সম্মিলিতভাবে টাঙ্গাইলে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। আগের দিন রাতে টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী মিত্রবাহিনীর সহায়তায় আক্রমণ চালালে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসে কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র ষষ্ঠ, একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, জামালপুর, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, ফুলছড়িহাট ও বাহাদুরবাদ ঘাটসহ মুক্ত হয় অবরুদ্ধ বাংলাদেশের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App