×

জাতীয়

কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫৮ পিএম

কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান
কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ফাইল ছবি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র করতে দেয়া হবে না। সরকার ভোটের অধিকার রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অপরদিকে ঢাকার বিদেশি মিশনগুলোতে দায়িত্বরত দূতদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন না করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

রবিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট : মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনার থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দুজনেই কূটনীতিকদের ওপর চড়াও হন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি ফোকাস করছে সরকার। এ লক্ষ্যে অনেক উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। আমরা মানবাধিকার রক্ষা ও কল্যাণে সচেষ্ট। মানবাধিকারকে মূল্য দেই বলেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার রক্ষায় মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, মত প্রকাশ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী। আমরা ভোটের অধিকার রক্ষায়ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও সমালোচনা করেন। ড. মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো কোনো এনজিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। তাদের অনেক তথ্য সঠিক নয়।

এরআগে সেমিনারে মূল প্রবন্ধে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবেই মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দারিদ্র্য হ্রাস, শিশুশ্রম নির্মূল, সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার সচেষ্ট।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৭৬টি গুম নিয়ে অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। আর একটি অভিযোগ ২৮ বছরের পুরানো, যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল না।

মানবাধিকার দিবস নিয়ে বিদেশি ১৫ মিশনের দেয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, সম্প্রতি ঢাকার ১৫টি কূটনৈতিক মিশনের যৌথ বিবৃতি আমাদের নজরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই। আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও নীতির মূলে রয়েছে গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংগ্রাম করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক পথ থেকে জাতিকে লাইনচ্যুত না হতে হয় সেজন্য বাইরের কোনো চাপের কাছে মাথানত করবে না। আমি আজ পরিষ্কার করে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা এ মাটিতে গণতন্ত্র ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে কখনো হাল ছাড়বে না।

তিনি বলেন, আমি ঢাকার বিদেশি মিশনগুলোকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাব। আমি বলতে চাই, কারও দিকে আঙ্গুল তোলার আগে নিজেদের আয়নায় দেখে নিন। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে আন্তরিক।

বাংলাদেশ বাইরের কোনো চাপের কাছে মাথানত করবে না বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতার উৎস এ দেশের জনগণ। জনগণই নির্ধারণ করবে কে এ জাতিকে শাসন করবে। কোনো বাহ্যিক শক্তি বা কোনো অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র এটি নির্ধারণ করতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশে অবস্থানরত ১৫টি পশ্চিমা দেশের দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এ দেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী এবং মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি।

প্রতিমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৭৬টি গুম নিয়ে অভিযোগ করেছে। তার মধ্য থেকে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি অভিযোগ ২৮ বছরের পুরোনো, যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল না। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, বিলিয়ার পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, রাষ্ট্রদূত আব্দুল হান্নান, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App